বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০১৬ সালে প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিনটকে পরাজিত করে তিনি ক্ষমতায় বসেন। সাধারণ জনগণের দেওয়া ৩০ লাখের বেশি ভোট পেলেও ইলেকটোরাল ভোটে হেরে যান হিলারি। ট্রাম্প ক্ষমতায় বসার পরপরই বিশ্বজুড়ে আলোচিত ও সমালোচিত হয়েছেন। বরাবরই আগ্রাসী পররাষ্ট্রনীতির কারণে তিনি শিরোনাম হয়ে ওঠেন। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে বিখ্যাত। ধনকুবের শিল্পপতি ট্রাম্পের ক্যারিয়ার বর্ণাঢ্য। তার রয়েছে বিশাল ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য। রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় তিনি একচ্ছত্র আধিপত্য ধরে রাখেন। নিউইয়র্কে বিত্তশালী রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী ফ্রেড ট্রাম্পের পাঁচ সন্তানের মধ্যে চতুর্থ ডোনাল্ড ট্রাম্প। মাত্র ১৩ বছর বয়সে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় সামরিক একাডেমিতে। এরপর পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি নিয়ে লেখাপড়া করেছেন তিনি। তার ব্যবসায়িক ক্যারিয়ার শুরু হয় বাবার থেকে ঋণ নিয়ে। দশ লাখ ডলার ঋণ নিয়ে তিনি রিয়েল এস্টেট ব্যবসা শুরু করেছিলেন।
১৯৯৯ সালে তার বাবা মৃত্যুবরণ করেন। পুরো ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ আসে তার হাতে। নিউইয়র্কের কেন্দ্রে ম্যানহাটনের মতো ধনী এলাকায় রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা সম্প্রসারণের বড় উদ্যোগ নেন তিনি। একের পর এক গ্র্যান্ড হোটেল নির্মাণ করেন। ফিফথ এভিনিউতে নির্মাণ করেন ৬৮ তলার টাওয়ার। তার কোম্পানির নির্মিত অন্যান্য সুপরিচিত ভবনের মধ্যে রয়েছে ট্রাম্প প্যালেস, ট্রাম্প ওয়ার্ল্ড টাওয়ার, ট্রাম্প ইন্টারন্যাশনাল হোটেলসহ আরও কিছু ভবন। মুম্বাই, ইস্তাম্বুল ও ফিলিপাইনেও আছে ট্রাম্প টাওয়ার।
ডোনাল্ড ট্রাম্প বেশ কিছু হোটেল, ক্যাসিনো তৈরি করেছেন। বিনোদন জগতের ব্যবসাতেও তিনি এক সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত মিস ইউনিভার্স, মিস ইউ এস এ এবং মিস টিন ইউ এস এ সুন্দরী প্রতিযোগিতা আয়োজনকারী প্রতিষ্ঠানের মালিক ছিলেন তিনি। টিভিতে রিয়েলিটি শো করে দর্শকদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন। শোবিজেও সফল হয়েছেন তিনি। রেসলিং ম্যাচও উপস্থাপনা করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ডোনাল্ড ট্রাম্প তিনবার বিয়ে করেছেন। ট্রাম্পের কোনো রাজনৈতিক পরিচিতি ছিল না। তিনি আলোচনায় আসেন ২০০৮ সালে। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার জন্ম যুক্তরাষ্ট্রে কিনা, তার এই প্রশ্ন বিশ্বব্যাপী আলোচিত হয়। ২০১৫ সালে এসে ডোনাল্ড ট্রাম্প আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন যে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে চান। সবাইকে অভিনব প্রচারণা চালিয়ে শেষ পর্যন্ত টেড ক্রুজ ও মারকো রুবিওকে পেছনে ফেলে ইন্ডিয়ানা প্রাইমারির পর ট্রাম্প রিপাবলিকান দলের প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হন। তাকে ঘিরে স্ক্যান্ডাল, বিতর্ক থাকার পরও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি জিতে যান। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে তিনিই প্রথম প্রেসিডেন্ট রাজনীতিতে যার কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না।
ট্রাম্পের ব্যর্থতা সামলে আমেরিকানদের ভাগ্য গড়তে চান বাইডেন
মার্কিন রাজনীতিতে পুরনো খেলোয়াড় জো বাইডেন। ৫০ বছরের দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রেসিডেন্ট হওয়ার স্বপ্ন পূরণের পথে হাঁটছেন ৭৭ বছর বয়সী বাইডেন।
বিভিন্ন পর্যায়ের প্রাইমারিতে প্রার্থী বাছাইয়ের প্রতিদ্বন্দ্বিতাতেও তাকে রীতিমতো বেগ পেতে হয়েছে। ভোটারদের সমর্থন আদায়ে প্রচারণায় বারবার তার মানবিক চ্যালেঞ্জের কথাগুলোই বলেছেন তিনি। দীর্ঘ রাজনৈতিক প্রতিকূলতায় তার ভূমিকা তুলে ধরেছেন তিনি। বাইডেন অনেক প্রতিকূলতা কাটিয়ে টিকে থাকা একজন ব্যক্তি- তার ব্যক্তিত্বের এই বিষয়টি ভোটারদের আগ্রহী করে তুলেছে। তার ব্যক্তি জীবন নিয়ে মার্কিনিদের সহানুভূতি রয়েছে। ১৯৭২ সালের ১৮ ডিসেম্বর ডেলাওয়ারে মর্মান্তিক এক গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান তার স্ত্রী। জো বাইডেনের বাবা ছিলেন ব্যবসায়ী। জো বাইডেনের কৈশোর কেটেছে পারিবারিক অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে। পেনসিলভেনিয়ায় খুবই সাদামাটা এক বাসায় যৌথ পরিবারে বড় হয়েছেন তিনি। তার পরিবার ছিল খুব ধার্মিক। তোতলামি করতেন বলে সহপাঠী, শিক্ষকরাও তাকে নিয়ে ঠাট্টা মশকরা করতেন। হাইস্কুল শেষ করে তিনি পড়তে যান ডেলাওয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে, সেখান থেকে সিরাকিউজ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনে। উইলমিংটনে শুরু হয় তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার। নগর পরিষদের একটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জেতার মধ্য দিয়ে শুরু হয় রাজনীতিতে তার পথচলা। সিনেটে তার বিজয় ১৯৭২ সালে। মাত্র ৩০ বছর বয়সে দুই মেয়াদে সিনেটর থাকা রিপাবলিকান প্রার্থীকে হারিয়ে তিনি সিনেটে আসন জয় করেন। রাজনীতির অঙ্গনে তিনি হয়ে ওঠেন ডেমোক্র্যাটিক দলের সম্ভাবনাময় তরুণ। ১৯৮৭ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নেমেও পরে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন। প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হতে বিশ বছর পর আবার নতুন করে লড়াইয়ে নামেন বাইডেন। সেবার বারাক ওবামা ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মনোনয়ন পেয়ে চমকে দেন সবাইকে। বারাক ওবামা তার ভাইস প্রেসিডেন্ট রানিং মেট হিসেবে বেছে নেন জো বাইডেনকে। ওবামার জয়ের পর ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পান তিনি।
ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনী জোরদার করার এবং ওসামা বিন লাদেনের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর বিপক্ষে পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি। বাইডেন পররাষ্ট্র সম্পর্ক বিষয়ক আমেরিকান সিনেট কমিটিতে কাজ করেছেন দীর্ঘ দিন। সিনেটের এই কমিটির সভাপতি হিসেবে ২০১২ সালের অক্টোবরে আমেরিকার রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টের ইরাক যুদ্ধে যাওয়ার বিষয়টিকে অনুমোদন দেওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল তার ওপর। এর ১১ বছর আগে উপসাগরীয় যুদ্ধের প্রাক্কালে প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশকে সাদ্দাম হোসেনের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অনুমোদনের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিলেন তিনি। প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ইরাকের কাছে ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্র আছে এই অভিযোগে যখন ইরাকে নতুন করে যুদ্ধ শুরুর প্রস্তাব করেন, তখন বাইডেন তাতে সমর্থন দিয়েছিলেন।
Leave a Reply