পুলিশের কাছে ধরিয়ে না দিয়ে ছেড়ে দিতে রহিম উদ্দিন ও তার সঙ্গী পাঁচ যুবককে ২০ লাখ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন রায়হান হত্যা মামলার প্রধান অভিযুক্ত বরখাস্ত এসআই আকবর হোসেন ভূইয়া। কিন্তু সেই প্রস্তাবে রাজি হননি রহিম উদ্দিন। শেষ পর্যন্ত খাসিয়াদের কাছ থেকে ধরে এনে তাকে সোপর্দ করা হয় পুলিশের কাছে। এদিকে এসআই আকবরের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। গতকাল সিলেট মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক আবুল কাশেম এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বেলা ১টা ২০ মিনিটের দিকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে এসআই আকবরকে আদালতে হাজির করে মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পরে তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইর পরিদর্শক আওলাদ হোসেন আদালতে আকবরকে সাত দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানান। শুনানি শেষে বিচারক সাত দিনেরই রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তদন্ত কর্মকর্তা আওলাদ হোসেন জানান, রায়হান হত্যা মামলার প্রধান অভিযুক্ত এসআই আকবরকে রিমান্ডে নিয়ে হত্যাকান্ড সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এ ঘটনার সঙ্গে তার সহযোগী কারা ছিলেন এ সম্পর্কেও পিবিআই তথ্য উদ্্ঘাটনের চেষ্টা করবে। এদিকে সোমবার কানাইঘাট ডোনা সীমান্তে খাসিয়ারা আটক করে এসআই আকবরকে। তারা বেঁধে রেখে খবর দেয় ডোনা এলাকার রহিম উদ্দিনকে। খবর পেয়ে রহিম উদ্দিনের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের স্থানীয় একটি যুবক দল ডোনাবস্তি এলাকায় যায়। সেখান থেকে আকবরকে নিয়ে আসেন তারা। রহিম উদ্দিন জানান, খাসিয়াদের কাছ থেকে আনার সময় আকবর ২০ লাখ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেন। পুলিশের হাতে তুলে না দেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি। কিন্তু আকবরের ওই প্রস্তাব গ্রহণ করেননি রহিম উদ্দিন ও সঙ্গী যুবকরা। রায়হান হত্যা ঘটনার প্রধান আসামিকে ধরে এনে তারা পুলিশে সোপর্দ করেন।
অন্যদিকে এসআই আকবরকে আটকের পর খাসিয়া যুবকদের জিজ্ঞাসাবাদে তাকে বলতে শোনা গেছে, রায়হান হত্যার পর তাকে পালানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। দুই মাস সময় পার হলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে বলে তাকে আশ্বস্ত করা হয়। আকবর আটকের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার এমন বক্তব্যের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এরপর থেকে প্রশ্ন উঠেছে, আকবরকে পালিয়ে যাওয়ার পরামর্শদাতা কে? কোনো পুলিশ কর্মকর্তা, না অন্য কেউ? তবে সোমবার আকবরকে গ্রেফতারের পর আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মো. ফরিদ উদ্দিন এ ব্যাপারে বলেন, ‘রায়হান হত্যা মামলার তদন্ত পিবিআই করছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। আকবরকে পালাতে কোনো পুলিশ কর্মকর্তা সহযোগিতা করে থাকলে তাকেও আইনের আওতায় আসতে হবে।’ প্রসঙ্গত, ১০ অক্টোবর রাতে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে ধরে নেওয়া হয় নগরীর নেহারীপাড়ার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে রায়হান আহমদকে। পরদিন ভোর ৬টা ৪০ মিনিটে গুরুতর আহতাবস্থায় তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন ফাঁড়ির এএসআই আশেক এলাহী। প্রথমে ছিনতাইকালে গণপিটুনিতে রায়হান মারা গেছেন বলে দাবি করে পুলিশ। পরে তার পরিবারের পক্ষ থেকে ফাঁড়িতে নির্যাতনে মৃত্যুর অভিযোগ তোলা হলে তদন্ত কমিটি গঠন করে মহানগর পুলিশ। কমিটি দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পেয়ে ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূইয়াসহ চার পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত ও তিন সদস্যকে প্রত্যাহার করে। রায়হানের স্ত্রীও হত্যা এবং হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইনে থানায় মামলা দায়ের করেন। হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে এসআই আকবরসহ বন্দরবাজার ফাঁড়ির চার পুলিশ সদস্যকে। রিমান্ড শেষে তাদের জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
Leave a Reply