বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে আজ বৃহস্পতিবার গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে দুটি কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেছেন। নারায়ণগঞ্জের আদমজী ইপিজেড এলাকায় শ্রমিকেরা বেলা ১১টা থেকে সোয়া ২টা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করেন। আর গাজীপুর নগরের সাইনবোর্ড এলাকায় বেলা আড়াইটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত মহাসড়ক অবরোধ করা হয়।
অবরোধের কারণে নারায়ণগঞ্জ-আদমজী-ডেমরা সড়কে প্রায় তিন ঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। আর গাজীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক প্রায় আড়াই ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকে। এতে এসব পথে যানজট তৈরি হয়। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে শ্রমিকেরা অবরোধ তুলে নিলে আস্তে আস্তে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
নারায়ণগঞ্জে বকেয়া ভাতা ও বন্ধ কারখানা চালুর দাবিতে আদমজী ইপিজেডের কুনতং অ্যাপারেলস লিমিটেড (ফ্যাশন সিটি) পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেন। এ সময় শ্রমিকদের সঙ্গে আনসার ও ইপিজেডের নিরাপত্তাকর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। এতে ১০ শ্রমিক আহত হন।
পুলিশ ও কারখানাটির শ্রমিকেরা জানান, দুই মাস আগে কারখানাটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা (লে-অফ) করে কর্তৃপক্ষ। এ সময় শ্রমিকদের ভাতা দেওয়া হচ্ছিল। এর ধারাবাহিকতায় আজ ভাতা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শ্রমিকেরা কারখানায় গিয়ে জানতে পারেন, আজ ভাতা দেওয়া হচ্ছে না। এতে শ্রমিকেরা খেপে যান। সকাল আটটার দিকে প্রায় এক হাজার শ্রমিক ইপিজেডের প্রধান কার্যালয়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। তাঁদের সরিয়ে দিতে আনসার ও নিরাপত্তাকর্মীরা চড়াও হন।
বাধ্য হয়ে শ্রমিকেরা বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নারায়ণগঞ্জ-আদমজী-ডেমরা সড়কের প্রধান ফটকে অবস্থান নেন। তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে দ্বিতীয় দফায় চড়াও হন আনসার ও নিরাপত্তাকর্মীরা। পরে শ্রমিকেরা ইপিজেডের রেমি গার্মেন্টসের সামনে অবস্থান নেন। খবর পেয়ে শিল্পাঞ্চল পুলিশ ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পুলিশ গিয়ে মালিকপক্ষের সঙ্গ আলোচনা করে। ১২ জানুয়ারি ভাতা পরিশোধের আশ্বাস দেওয়া হলে শ্রমিকেরা বেলা সোয়া দুইটার দিকে সড়ক ছেড়ে চলে যান।
শিল্প পুলিশ-৪-এর পুলিশ সুপার মো. সাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, কারখানা কর্তৃপক্ষ প্রতি মাসের ৬–৭ তারিখে ভাতা দেয়। কিন্তু এবার কর্তৃপক্ষ ১২ জানুয়ারি পরিশোধের সিদ্ধান্ত নেয়। অনেক শ্রমিক এ তথ্য পাননি। এ কারণে তাঁরা বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেন। পরে ১২ জানুয়ারি ভাতা পরিশোধের আশ্বাস দিলে শ্রমিকেরা চলে যান।
পুলিশ ও কারখানাটির শ্রমিকেরা জানান, কারখানাটিতে প্রায় সাড়ে তিন হাজার শ্রমিক রয়েছেন। গত নভেম্বরে তাঁদের অর্ধেক ও ডিসেম্বরের পুরো বেতন বাকি রয়েছে। আজ তাঁদের বেতন দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সকাল থেকে বেতন না দেওয়ায় দুপুরে শ্রমিকেরা বিক্ষোভ শুরু করেন। বেলা ১১টার দিকে তাঁরা কারখানার পাশে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন। পরে কারখানার মালিকপক্ষের সঙ্গে শ্রমিকদের প্রতিনিধি ও পুলিশের কথা হয়।
মালিকপক্ষ আগামী সোমবার নভেম্বরের এবং ২০ জানুয়ারি ডিসেম্বরের বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ করার আশ্বাস দেয়। আরও কিছু দাবি না মানায় শ্রমিকেরা অবরোধ অব্যাহত রাখেন। শ্রমিকদের আরও কিছু দাবি মালিকপক্ষ মেনে নেয়। পরে বিকেল পাঁচটার দিকে তাঁরা সড়ক থেকে সরে যান।
কারখানার কয়েকজন শ্রমিক জানান, তাঁদের গত ঈদের উৎসব ভাতারও অর্ধেক টাকা বকেয়া রয়েছে। করোনার ৫ শতাংশ প্রণোদনার টাকাও তাঁদের দেওয়া হয়নি। বকেয়া বেতন-ভাতা চাইলেই কর্তৃপক্ষ শ্রমিক ছাঁটাই করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে আসছে।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (গণমাধ্যম) জাকির হাসান বলেন, যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ময়মনসিংহগামী গাড়িগুলোকে টঙ্গীর স্টেশন সড়ক দিয়ে পূর্ব দিকে মীরেরবাজার হয়ে ভোগড়া বাইপাস ধরে চলাচল করতে বলা হয়। ঢাকাগামী যানবাহনগুলোকে ভোগড়া বাইপাস দিয়ে কোনাবাড়ি-চন্দ্রা হয়ে চলতে বলা হয়। এতে এসব পথেও চাপ বেড়ে যানবাহনের দীর্ঘ সারি তৈরি হয়।
Leave a Reply