1. admin@banglahdtv.com : Bangla HD TV :
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৮:১১ অপরাহ্ন

রোজায় গরিবের লকডাউনের কষ্ট কমাতে পারে ধনীদের জাকাত

কামরুজ্জামান সিদ্দিকী, নির্বাহী সম্পাদক, বাংলা এইচডি টিভি
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২১
  • ৩৫৪ Time View
লকডাউন মানেই গরিবের দুর্দশা। পাঁচ লাখ কোটি টাকার বাজেটের কিয়দংশ কী এই দুর্দশা লাঘবে বরাদ্দ করা যায় না

গতকাল ছিল নববর্ষের ছুটি, দুটি খবরে চোখ আটকে গেল। প্রথমটি গতকালের, বলা হয়েছে, ‘লকডাউনের প্রথম দিনে কর্মস্থলে যাওয়া-আসার পথে ভোগান্তিতে পড়েছেন চিকিৎসকেরা। কাউকে কাউকে জরিমানা গুনতে হয়েছে। অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামিয়ে দেওয়া, কিংবা দুই ঘণ্টা পর্যন্ত পথে আটকে থাকার মতো ঘটনাও ঘটেছে। ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি রাইটস অ্যান্ড রেসপনসিবিলিটিজ (এফডিআরএস) এসব খবর দিয়েছে।’

এক সাংবাদিক এ বিষয়ে জানতে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার মুবিনুর রহমানের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘কিছু জায়গায় সমস্যা হয়েছে, আমাদের কানে পৌঁছানো মাত্রই সুরাহা করার চেষ্টা করছি।’ জরুরি সেবায় নিয়োজিত যাঁরা, তাঁদের চলাচল লকডাউনের আওতামুক্ত বলেও জানান তিনি। চিকিৎসকদের গাড়িচালকেরাও আওতামুক্ত কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গাড়িচালকদের মুভমেন্ট পাস নিতে হবে।’

রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালের চিকিৎসক নাজমুল ইসলামের জরিমানা হয়েছিল তিন হাজার টাকা। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তাঁর স্ত্রী ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন। আজকের রিপোর্টে বলা হয়েছে, তাঁর জরিমানা মওকুফ করা হয়েছে। নাজমুল ইসলাম বলেন, সন্ধ্যার আগে একজন পুলিশ কর্মকর্তা তাঁকে ফোন করেছিলেন। তিনিই জরিমানা হিসেবে আদায় করা টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার কথা জানান। বৃহস্পতিবার সকালে হাসপাতালের কাজ সেরে ফেরার পথে তিনি টাকা ফেরত নেবেন।

রিপোর্ট দুটিই চমকপ্রদ। একদিক দিয়ে দেখতে গেলে পুলিশের কোনো দোষ নেই। সরকার থেকে যে পরিপত্র জারি করা হয়েছিল, তাতে তো আলাদাভাবে বলা নেই যে স্বাস্থ্যকর্মীরা এবং তাঁদের বাহনচালকেরা আওতাবহির্ভূত। কিন্তু এই আইন যাঁরা প্রয়োগ করলেন, তাঁরা তো মানুষ, রোবট নন। তাঁদের তো কিছু বাস্তব বিচারবুদ্ধিও থাকার কথা। দেশে এবং পৃথিবীতে গত এক বছর যাবৎ কী চলছে, তা তো তাঁদের অজানা থাকার কথা নয়। সারা পৃথিবী এখন শতবর্ষের মাঝে সবচেয়ে কঠিন, সবচেয়ে ভয়ংকর স্বাস্থ্য সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আর এই সংকট থেকে উত্তরণে সম্মুখযোদ্ধা হচ্ছেন সব স্বাস্থ্যকর্মী। সারা পৃথিবী এই স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রয়োজনীয় রসদ জোগাচ্ছে, নতমস্তকে শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছে মানুষ, তাঁদের ব্যক্তিগত সুখ-সুবিধা দেখছে, উপহার পাঠাচ্ছে। সেসব না-হয় না-ই করলাম, কিন্তু এই যোদ্ধাদের অন্তত যুদ্ধক্ষেত্রে তো যেতে দিবো; ঢাল-তলোয়ার যেটুকুই আছে, সেটুকু দিয়েই যাতে তাঁরা আমাদের রক্ষা করার লড়াই চালিয়ে যেতে পারেন। সেখানে কর্মস্থলে যেতে রাস্তায় বের হওয়ার ‘অপরাধে’ তাঁদের জরিমানা করার কথা কী করে কারও মাথায় আসে, সে এক বিস্ময়।

কোভিড পরিস্থিতির অতিরিক্ত কাজের কারণে ডিএমপির কর্মকর্তারা যথেষ্ট চাপে আছেন—এটা অনুধাবন করা যায়। কোনো অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত প্রয়োগ করতে গেলে কাজ বাড়ে, চাপও বাড়ে। অতিরিক্ত কমিশনার বলেছেন, গাড়িচালকদের মুভমেন্ট পাস লাগবে। মুভমেন্ট পাসের মেয়াদ তিন ঘণ্টা। অর্থাৎ একজন ডাক্তারের গাড়িচালক তাঁকে কাজে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি এবং আট ঘণ্টা পর ফেরত নিয়ে আসার জন্য আরেকটি মুভমেন্ট পাস জোগাড় করবেন। ডিএমপি কি সত্যিই মনে করে যে তাদের ব্যবস্থাপনা এতটাই চৌকস, এতটাই কার্যকর যে সংশ্লিষ্ট গাড়িচালক সহজেই প্রতিদিন দুবার করে মুভমেন্ট পাস জোগাড় করে ফেলতে পারবেন?

দ্বিতীয় খবরটা আপাতদৃষ্টিতে ইতিবাচক মনে হতে পারে। ডাক্তার সাহেবকে জরিমানা করা অর্থ ফেরত দেওয়া হবে। তার মানে এই যে তাঁকে অন্যায়ভাবে বা ভুলে জরিমানা করা হয়েছিল। যদি তা-ই হবে, সেই ভুলের জন্য কেউ কি দুঃখ প্রকাশ করেছে? তাঁকে অন্যায়ভাবে হয়রানি করার জন্য কেউ ক্ষমা চেয়েছে? ভুল স্বীকারে বা ক্ষমা প্রার্থনায় কোনো গ্লানি নেই। ডিএমপির উচিত হবে তাদের কর্মীদের ভুলের জন্য দুঃখ প্রকাশ করা। আর যে স্বাস্থ্যকর্মীদের জরিমানা করা হয়েছে, জরিমানার অর্থ বিনয়ের সঙ্গে তাঁদের কাছে পৌঁছে দেওয়া, এসে নিয়ে যেতে বলা নয়।

আট দিনের কঠোর লকডাউন শুরু হয়েছে গতকাল। আগের ১০ দিনও বেশ কিছু বিধিনিষেধ ছিল, যাকে ঠিক লকডাউন বলা যাবে না। আয়-রোজগার নিয়ে প্রান্তিক মানুষের কষ্ট কিন্তু শুরু হয়েছে তখনই, কঠোর লকডাউনে সে কষ্ট আরও বাড়বে। আর আট দিনের লকডাউনে পরিস্থিতির উন্নতি হবে কি না, এ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে দ্বিমত আছে। মেয়াদ যদি বাড়ে, এ মানুষগুলো কিন্তু প্রকৃতই বিপদে পড়বেন। এ রকম নাগরিকদের সরাসরি বিপুল অঙ্কের অর্থ দিচ্ছে পশ্চিমা দেশগুলোর সরকার। তাদের মতো সামর্থ্য আমাদের না থাকতে পারে, কিন্তু পাঁচ লাখ কোটি টাকার বাজেটের কিয়দংশ বোধ হয় এই মানুষগুলোর দুর্দশা লাঘবে বরাদ্দ করা যায়। তবে প্রকৃত সুবিধাভোগীদের কাছে পৌঁছার আগে পথিমধ্যে এরূপ বরাদ্দ (যদি হয়) যেন গায়েব হয়ে না যায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। নেতা-মন্ত্রী এবং কিছু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার মুখে প্রায়ই ‘জিরো টলারেন্স’ শব্দ দুটি শোনা যায়। অন্তত এই একটি ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ, পরিস্থিতি বিবেচনায় খুবই লাগসই হতো।

ইসলাম ধর্মের যেসব স্তম্ভ আছে, তার মধ্যে অনিন্দ্য সুন্দর হচ্ছে জাকাত। বছর শেষে স্থাবর সম্পদ ছাড়া যা কিছু উদ্বৃত্ত, তার শতকরা আড়াই ভাগ দরিদ্রদের দান করে দিতে হবে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এ কাজ সাধারণত রমজান মাসে করেন। অনেকে অবশ্য নিজ নিজ মতে এর ব্যাখ্যা করে ফেলেন। আমার এক পরিচিত আছেন বিপুল সম্পদের মালিক। তিনি স্বর্ণ না কিনে হীরার অলংকার কেনেন। পবিত্র কোরআন হাদিসে বলা আছে, সোনা-রুপার মূল্যের ওপর জাকাত দিতে হবে, হীরার কথা বলা নেই! অন্তর্নিহিত অর্থে না গিয়ে তিনি শব্দের ওপর জোর দিয়েছেন। অনেকটা ডাক্তারদের জরিমানা করার মতো। আল্লাহকে ফাঁকি দেওয়ার কী সৃজনশীল প্রয়াস!

পক্ষান্তরে, আমার এক বন্ধুর মা জাকাত হিসাব করেন অন্যভাবে। মধ্যবিত্ত ভদ্রমহিলার স্বামী ডাক্তার ছিলেন। মারা যাওয়ার আগে ছোট্ট একটু জমির ওপর একটি বাড়ি করে দিয়ে গেছেন, আর দিয়ে গেছেন কিছু নগদ, কিছু সঞ্চয়পত্র এবং কিছু ওষুধ কোম্পানির শেয়ার, যার আয় থেকে তাঁর সংসার চলে। এই শেয়ারের বাজারমূল্য, বাসস্থান ছাড়া সব সম্পদের দাম হিসাব করে চুপচাপ জাকাত দেন তিনি প্রতিবছর।

বিশাল সম্পদের মালিক, এমন অনেকেই দৃশ্যমানভাবেই প্রচণ্ড ধার্মিক। তাঁরা নিশ্চয় জাকাত দেন। উদ্বৃত্ত সম্পদের হিসাবটা তাঁরা কোন পদ্ধতিতে করেন? তাঁদের একজনের মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর বাজারমূল্যে এক হাজার কোটি টাকার শেয়ার যদি থাকে, দ্বিতীয় পদ্ধতিতে তাঁর জাকাত কিন্তু দাঁড়াবে শুধু ওই সূত্রেই ২৫ কোটি টাকা! লকডাউনের এই রমজানে, প্রান্তিক মানুষের দুর্দশা লাঘবে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখতে পারে বিপুল বিত্তশালীদের সঠিক হিসাবের জাকাত।

মো: কামরুজ্জামান সিদ্দিক, নির্বাহী সম্পাদক, বাংলা এইচডিটিভি।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2020 banglahdtv
Design & Develop BY Coder Boss