কোভিডের দ্বিতীয় তরঙ্গ ক্রমেই বিশ্বব্যাপী তাণ্ডব চালাচ্ছে। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ও মৃত্যু হয়েছে বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্রে। আক্রান্তে দ্বিতীয় এবং মৃত্যুতে তৃতীয় অবস্থানে আছে ভারত।দেশটিতে হঠাৎ করে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। ভারতে যে হারে মৃত্যু বাড়ছে জুন নাগাদ প্রতিদিন তা ২ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ল্যানসেটের এক রিপোর্টের বরাত দিয়ে ভারতের গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, দেশে প্রতিদিনই বাড়ছে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুও। জুনের প্রথম সপ্তাহে দেশে দৈনিক মৃত্যু বেড়ে ২ হাজার ৩২০ পর্যন্ত হতে পারে। প্রথম পর্বে গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর দেশে একদিনে সর্বাধিক মৃত্যু হয়েছিল ১ হাজার ২৯০ জনের। এরপর ধীরে ধীরে মৃত্যু কমতে থাকে।
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ১৮৫ জনের। ল্যানসেটের রিপোর্ট বলছে, যেদিকে পরিস্থিতি যাচ্ছে তাতে মাস দেড়েকের মধ্যে দৈনিক মৃত্যু হাজারেরও বেশি বাড়বে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, কোভিডের প্রথম সংক্রমণের মতোই দ্বিতীয় তরঙ্গ থাবা বসাচ্ছে ভারতের বেশ কয়েকটি শহরে। ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে দৈনিক নতুন সংক্রমণ ১০ হাজার থেকে বেড়ে ৮০ হাজার হয়েছে মাত্র ৪০ দিনে। সেপ্টেম্বরে যা লেগেছিল ৮৩ দিন।
রিপোর্ট বলছে, দ্বিতীয় তরঙ্গ প্রথমটির থেকে দুটি ক্ষেত্রে ভিন্ন। প্রথমত, দ্বিতীয় তরঙ্গে নতুন সংক্রমণ প্রথমবারের চেয়ে দ্রুত হারে ছড়াচ্ছে। দ্বিতীয়ত, দ্বিতীয় তরঙ্গে উপসর্গহীন এবং মৃদু উপসর্গের রোগীর সংখ্যা বেশি। ফলে বর্তমান সময় পর্যন্ত আক্রান্তদের হাসপাতালে ভর্তি করার হার এবং মৃত্যু হার তুলনামূলক কম। কিন্তু যে হারে সংক্রমণ বাড়ছে, তা মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সরকারি নথি বলছে, দেশের দৈনিক সংক্রমণ বৃহস্পতিবার প্রথম ২ লাখের গণ্ডি পেরিয়েছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ১৭ হাজার ৩৫৩ জন। যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। দ্বিতীয় ঢেউয়ের জেরে দৈনিক মৃত্যু পর পর ৩ দিন হাজার ছাড়াল।
এ পরিস্থিতি থেকে কীভাবে বের হওয়া যায়, সে পথও বাতলে দেওয়া হয়েছে ল্যানসেটের ওই রিপোর্টে। যার প্রথমেই রয়েছে তরুণ প্রজন্মকেও টিকার আওতায় আনা। শুধু ৪৫ বছরের ঊর্ধ্বে নয়, তার থেকে কম বয়সীদেরও টিকার আওতায় নিয়ে আসার কথা বলা হয়েছে ল্যানসেটের রিপোর্টে। এর জন্য টিকা উৎপাদন বাড়ানো, মানুষকে আরও বেশি টিকা নিতে উদ্বুদ্ধ করার কথা বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে করোনাভাইরাসের বদলে যাওয়া চরিত্র বুঝতে জিনের গঠনতন্ত্র বোঝা বা ‘জিনম সিকুয়েন্সিং’-এর উপর জোর দিতে বলা হয়েছে।
এটাও উল্লেখ করা হয়েছে, পূর্ণ লকডাউন সমম্যার সমাধান করতে পারে না, বরং দেশের অর্থনীতির ওপর তার অভিঘাত মারাত্মক। ফলে স্থানীয় স্তরে লকডাউন, সামাজিক দূরত্ব বিধিসহ বাকি নিয়ম নিষ্ঠার সঙ্গে পালনের ওপর জোর দিতে বলা হয়েছে।
Leave a Reply