1. admin@banglahdtv.com : Bangla HD TV :
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৪১ অপরাহ্ন

বাঁশখালীতে বিদ্যুৎকেন্দ্রে পুলিশ-শ্রমিক সংঘর্ষে নিহত ৫

রিপোটার ডাক্তার মোঃ মনির হোসেন যুগ্ম বার্তা সম্পাদক
  • Update Time : শনিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২১
  • ৩৬৮ Time View
বাঁশখালীতে বিদ্যুৎকেন্দ্রে পুলিশ-শ্রমিক সংঘর্ষে নিহত ৫

চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে ১২ শ’ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে শ্রমিকদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষে পাঁচজন নিহত হয়েছে। শনিবার বেলা ১২টার দিকে গন্ডামারা ইউনিয়নের পশ্চিম বড়ঘোনার ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বেশ কয়েকটি দাবি আদায়ের বিক্ষোভ থেকে এ সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো প্রায় ৩০ জন।

এদের মধ্যে ঘটনাস্থলেই নিহত হন আহমদ রেজা (১৮), রনি হোসেন (২২), শুভ (২৪) ও মো. রাহাত (২৪)। এছাড়া চমেক মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে আনার পর আরো একজনের মৃত্যু হয়। নিহতদের মধ্যে আহমদ রেজা বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাশের পূর্ব বড়ঘোনা এলাকার মো: আবু ছিদ্দিকের ছেলে বলে জানা গেছে।

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই শীলব্রত বড়ুয়া নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, বাঁশখালীর বিদ্যুৎকেন্দ্রে পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ ১৫ জনকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। তাদের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আরো মারা যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, রমজানে কর্মঘণ্টা কমানোসহ বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে শ্রমিকদের সাথে মালিক পক্ষের বিরোধ দেখা দিলে এ নিয়ে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করতে থাকে। পরিস্থিতি অবনতিশীল হয়ে উঠলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করে। কিন্তু তাতেও শ্রমিকদের নিবৃত্ত করা না গেলে একপর্যায়ে পুলিশ গুলি ছোড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই চারজন নিহত হয়। নিহত চারজনের লাশ বাঁশখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রাখা হয়েছে বলে জানান উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. শফিউর রহমান মজুমদার। এছাড়া অন্তত ১৫ জন গুলিবিদ্ধসহ ৩০ জনের মতো আহত হয়। আহতদের মধ্যে ১৫ জনকে গুরুতর অবস্থায় চমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে ঘটনার আকস্মিকতায় বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকরা বিদ্যুৎকেন্দ্রেসহ সেখানকার বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন ধরিয়ে দেয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। এ ঘটনায় এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, হঠকারীমূলক ভাবে শ্রমিক বিক্ষোভ দমন করতে গিয়ে শ্রমিকদের বুকে গুলি চালিয়ে পাঁচটি প্রাণ ঝরিয়েছে পুলিশ। এর দায়-দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে।

বাঁশখালীতে বিদ্যুৎকেন্দ্রে পুলিশের গুলিতে পাঁচজন নিহত হওয়ার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে শনিবার বিকেলে সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।

বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল বলেন, যেকোনো ইস্যুতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে অপব্যবহারের ফলে বারবার এধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির উদ্ভব হচ্ছে। গুলি চালিয়ে মানুষ হত্যা করা যেন বর্তমান ভোটারবিহীন সরকারের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। সরকারের এহেন কর্মকাণ্ড ফ্যাসিবাদী চরিত্রেরই বহিঃপ্রকাশ।

তিনি বলেন, দেশে এখন এমন এক কর্তৃত্ববাদী শাসন চলছে যেখানে মানুষের কোনো অধিকার নেই, যেখানে দাবি আদায়ের জন্য কোনো আন্দোলন করা যাবে না কিংবা প্রতিবাদ করা যাবে না। এই সরকারের কাছে মানুষের জানমালের কোনো নিরাপত্তা নেই, বরং বিপন্ন হয়েছে।

জনগণের প্রতি গণবিচ্ছিন্ন সরকারের কোনো দায়-দায়িত্ব নাই মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, সরকারের সকল আচরণই নিষ্ঠুর, অমানবিক ও গণবিরোধী। সরকারের ব্যর্থতা ও ভুল নীতির কারণেই সমাজে চরম নৈরাজ্য, অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। ভোটারবিহীন সরকারের জবাবদিহিতা থাকে না বলেই গোটা সরকারই আজ বেপরোয়া রূপ ধারণ করেছে। তাই যে শ্রমিকরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দেশের উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে সেই শ্রমিকদের বুকে গুলি চালানো কেবলমাত্র আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসকদের পক্ষেই সম্ভব। যার বিকৃত প্রতিক্রিয়া সারাদেশে ফুটে উঠতে শুরু করেছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, আজ বাঁশখালীতে বিক্ষোভরত শ্রমিকদের ওপর গুলিবর্ষণ করে পাঁচজন শ্রমিককে হত্যা ও কমপক্ষে ৩০ জনকে গুরুতর আহত করার ঘটনা নিঃসন্দেহে দেশে বিরাজমান দুঃশাসনেরই বহিঃপ্রকাশ। দেশে এখন সভ্যতাবিধ্বংসী অমানবিক শক্তির উত্থান ঘটেছে।

তিনি বলেন, দাবি-দাওয়া নিয়ে বিক্ষোভরত বাঁশখালী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের শ্রমিকদের ওপর নির্বিচারে পুলিশের গুলিবর্ষণ এবং শ্রমিকদের প্রাণ কেড়ে নেয়ার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাচ্ছি।

বাঁশখালীর ঘটনায় দোষীদের বিচার দাবি শ্রমিক দলের
চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে পুলিশের গুলিতে পাঁচজন শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনায় তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও দোষী ব্যক্তিদের বিচার দাবি করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল।

শনিবার জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইন ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম খান নাসিম বাশঁখালীর হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

বিবৃতিতে তারা বলেন, তিন বছর আগে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করার নামে স্থানীয় দরিদ্র কৃষকের ফসলি জমি, জনসাধারণের বসতঘর অধিগ্রহণের কথা বলে জোর করে দখল করার সময় এস আলম গ্রুপের ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদের হামলায় তখন বেশ ক’জন গ্রামবাসী হতাহত হয়েছিল।

সেই হত্যাকাণ্ডের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই নির্মানাধীন পরিবেশ ও প্রতিবেশ ধংসকারী কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পে কর্মরত শ্রমিকরা তাদের বকেয়া পাওনা চেয়ে আন্দোলন করার অপরাধে পুলিশ নির্বিচারে গুলি করে পাঁচজন শ্রমিককে হত্যা ও ২৫ জনের অধিককে আহত করার মতো জঘন্য অপরাধকে কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না।

শ্রমিক দল নেতৃবৃন্দ বলেন, করোনাকালীন সময়ে সরকার ও মালিক পক্ষ শ্রমিকদের ন্যূনতম সাহায্য সহযোগিতা না করে বকেয়া পাওনা চাওয়ায় সরকারি পুলিশ বাহিনী মালিকের পক্ষ নিয়ে নিরীহ শ্রমিকদের হত্যা করে শ্রমিক সমাজের বিরুদ্ধে নির্লজ্জ অবস্থান নিয়েছে।

শ্রমিক দল নেতৃবৃন্দ শ্রমিক হত্যার সুষ্ঠু নিরপেক্ষ তদন্ত ও দোষীদের শাস্তি দাবি করেন এবং নিহতদের পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণের দাবি করেন। সেই সাথে নিহত শ্রমিকদের রূহের মাগফেরাত কামনা করেন ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানিয়ে তাদের পাশে থাকবেন বলে জানিয়েছেন।

জামায়াতের নিন্দা

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় গুলি করে পাঁচজন শ্রমিককে হত্যার নিন্দা জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রোটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এক বিবৃতি দিয়েছেন। এতে তিনি বলেন, শনিবার সকাল ১০টার দিকে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্রে বেতন-ভাতার দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের বিক্ষোভে গুলি করে পাঁচজন শ্রমিককে হত্যা করা হয়েছে। আহত করা হয়েছে অনেককে। শ্রমিকরা প্রাপ্য কাজের মজুরি দাবি করবেন এটিই স্বাভাবিক। এ জন্য শ্রমিকদের পাখির মতো গুলি করে হত্যা করা সম্পূর্ণ অন্যায় ও অসাংবিধানিক। এটি সরকারের বাড়াবাড়ি ছাড়া আর কিছু নয়।

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আরো বলেন, গুলিতে নিহত শ্রমিকদের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করছি। আমরা নিহতদের পরিবার ও স্বজনের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।

শ্রমিকদের ন্যায্য বেতন-ভাতা পরিশোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও শ্রমিক হত্যার ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা ও নিহতদের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে সংশ্লিষ্ট মহলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের তীব্র নিন্দা

লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম) সংবাদাদাতা জানান, বাঁশখালীর গণ্ডামারা ইউনিয়নের পশ্চিম বড়ঘোনায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে পুলিশের গুলিতে পাঁচজন শ্রমিক নিহত ও বহু হতাহতের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন।

বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা শাখার সভাপতি মুহাম্মদ নুরুল হোসাইন, সেক্রেটারি আরিফুর রশিদ, ট্রেড ইউনিয়ন সম্পাদক শরফুল আমিন চৌধুরী ও বাঁশখালী লবণ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ফরিদ আহমদ এক যৌথ বিবৃতিতে এ নিন্দা জানান। তারা বলেন, সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে শ্রমিকদের ওপর গুলি করে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে। কোনো সভ্য দেশে এ ধরনের নির্মমতা কল্পনাও করা যায় না। এই ঘটনায় দোষীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে।

তারা আরো বলেন, অবিলম্বে এই হত্যার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক গুলি বর্ষণকারী পুলিশ সদস্যদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে ও আন্দোলনরত শ্রমিকদের দাবি দাওয়া মেনে নিতে হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2020 banglahdtv
Design & Develop BY Coder Boss