1. admin@banglahdtv.com : Bangla HD TV :
সোমবার, ২২ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৫৪ অপরাহ্ন

করোনা ভারতকে পরীক্ষা করছে

বিশেষ প্রতিনিধি
  • Update Time : রবিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২১
  • ৪১৮ Time View

ভারতে আজ রোববার নিয়ে টানা চার দিন ধরে দৈনিক কোভিড সংক্রমণের বিশ্বরেকর্ড ক্রমাগত ভেঙেই চলেছে। আজ সকালে ওই দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে গত চব্বিশ ঘন্টায় প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন।

এই একই সময়সীমার মধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন আরো ২৭৬৭ জন, সেটিও ভারতে নতুন রেকর্ড।

দেশের রাজধানী দিল্লি এই মুহূর্তে সবচেয়ে দুর্গত এলাকাগুলোর একটি, সেখানে বহু হাসপাতাল বেড নেই বলে রোগীদের ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে – এবং শহরে রোজ অজস্র রোগী শুধুমাত্র অক্সিজেনের অভাবে মারা যাচ্ছেন।

এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আজ দেশবাসীদের উদ্দেশে তার নিয়মিত রেডিও ভাষণে মন্তব্য করেছেন, ভারতীয়দের ‘দুঃখ সহ্য করার ক্ষমতা কতটা’ করোনা এখন তারই পরীক্ষা নিচ্ছে।

বস্তুত সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো মিলিয়ে রাজধানী দিল্লির স্বাস্থ্য অবকাঠামো যে অন্তত বাকি দেশের তুলনায় অনেকগুণ ভালো – তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

কিন্তু হাজারে হাজারে কোভিড রোগীর চাপ ও পর্যাপ্ত অক্সিজেনের অভাব মাত্র দিন সাতেকের মধ্যে সেই পরিষেবাকে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে।

শত শত রোগীর পরিজনরা একটা কোভিড বেডের জন্য উদভ্রান্ত হয়ে ছোটাছুটি করছেন, অথচ হাসপাতালগুলো নতুন রোগী নেয়া বন্ধ করে দিয়েছে।

রোববার সকালেই সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছে ফোর্টিস এসকর্টস হার্টস ইনস্টিটিউটের নাম, এই নামী বেসরকারি হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছেন আর একজন রোগী ভর্তি নেয়ার মতো অক্সিজেনও তাদের স্টকে নেই।

এর আগে গতকালই জয়পুর গোল্ডেন নামে দিল্লির আর একটি হাসপাতালে অন্তত ২০ জন কোভিড রোগী অক্সিজেনের অভাবে মারা গেছেন।

রাজধানীর যখন এই হাল- তখন বাকি দেশের অবস্থা খুব সহজেই অনুমেয়।

নাগপুরের বাসিন্দা মহম্মদ ইলিয়াস বলছিলেন, আমি নিজের জামাতাকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে গিয়ে শুনি ভেন্টিলেটর নেই, ভর্তি হবে না।

তখন পরিচিত একজন ফোন করে জানায়, দেড় শ’ কিলোমিটার দূরে অমরাবতীতে একটা অক্সিজেন-ওয়ালা বেড পাওয়া যাচ্ছে, তখন শ্বাসকষ্টে ভোগা মরণাপন্ন জামাতাকে অনেক কষ্ট করে অত দূরেই নিয়ে যাই।

ফ্রন্টলাইন স্বাস্থ্যকর্মীরাও এই পরিস্থিতির সঙ্গে লড়তে গিয়ে যথারীতি হাঁফিয়ে উঠছেন।

ক্রিটিকাল কেয়ার স্পেশালিস্ট ড: শাশ্বতী সিনহা যেমন বিবিসিকে বলছিলেন, ‘আমাদের সব হাসপাতালে একেবারে শোচনীয় অবস্থা … রোগীদের অকিসেজেন স্যাচুরেশন হু হু করে কমছে, তাদের ভেন্টিলেটরে দিতে হচ্ছে।

‘ভয়ার্ত জুনিয়র ডাক্তাররা আমাদের সারাক্ষণ আইসিইউ-তে ডাকাডাকি করছেন – কোভিড আইসিইউ-এর অবস্থা এক কথায় মর্মান্তিক।’

‘প্রতিদিন এত বিপুল সংখ্যায় রোগীকে ভর্তি করতে হচ্ছে, গত বছর কিন্তু এ জিনিস আমরা দেখিইনি।’

কিন্তু মাত্র দু-তিনসপ্তাহের মধ্যে মোটামুটি স্থিতিশীল থেকে ভারতের কোভিড পরিস্থিতি এরকম বিপজ্জনক হয়ে উঠল কীভাবে?

ভারতের নামী ভাইরোলজিস্ট শাহিদ জামিলের মতে, যেভাবে ভারতে কেসের সংখ্যা বেড়েছে- তা আসলেই চমকে দেওয়ার মতো।

বিবিসিকে তিনি বলছিলেন, এদেশে ১০ থেকে ১১ মিলিয়ন কেস হতে সময় নিয়েছিল ৬৬ দিন। অথচ ১১ থেকে ১২ মিলিয়ন হয়েছে ৩৪ দিনে, আর পরের এক মিলিয়ন বেড়েছে মাত্র ১৫ দিনের ভেতর।

অথচ গত ডিসেম্বর-জানুয়ারিতেই আমরা বলছিলাম যথেষ্ঠ সংখ্যক মানুষ সংক্রমিত হয়ে গেছেন এবং গ্রাফ এখন নিম্নমুখী হতে বাধ্য।

তাহলে হঠাৎ কী এমন হলো যে এত লোক আবার আক্রান্ত হচ্ছেন? এর একটাই সম্ভাব্য ব্যাখ্যা – ভাইরাসটা পরিবর্তিত হয়েছে, নিজেকে মিউটেট করেছে, বলছিলেন ড: জামিল।

এই পটভূমিতেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ তার ‘মন কি বাত’ শীর্ষক মাসিক বেতার ভাষণে কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন মহামারির প্রথম ধাক্কা সামলানোর পর দেশের যে মনোবল ছিল তা এখন ভেঙে পড়ার মুখে।

তিনি আজ দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, করোনা এখন সকলের ধৈর্যের পরীক্ষা নিচ্ছে, শোক-দুঃখ সইবার ক্ষমতা কতটা তার পরীক্ষা নিচ্ছে। বহু প্রিয়জন অসময়ে আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন।

করোনার ফার্স্ট ওয়েভ সাফল্যের সঙ্গে সামলানোর পর আমাদের মনোবল ও আত্মবিশ্বাস ছিল তুঙ্গে। কিন্তু এই ঝড় আমাদের দেশকে এখন কাঁপিয়ে দিচ্ছে।

রাজ্য সরকারগুলোকে সর্বাত্মক সমর্থন দিয়ে কেন্দ্র এই বিপর্যয় সামাল দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাবে বলেও মোদি আজ ঘোষণা করেছেন।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন দেশের জনসংখ্যার মোটামুটি চল্লিশ শতাংশকে টিকা দেয়া না-পর্যন্ত ভারতে মহামারির এই প্রকোপ স্তিমিত হওয়ার আশা দেখা যাচ্ছে না – কিন্তু সেই লক্ষ্যে পৌঁছতে ভারতের এখনো অনেক রাস্তা বাকি।

সূত্র : বিবিসি

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2020 banglahdtv
Design & Develop BY Coder Boss