আদালতে জামিন পাওয়া মানুষের অধিকার বলে অভিমত দিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা। শনিবার দুপুরে ‘প্রধান বিচারপতির কাছে চিঠি ও গ্রেফতার হওয়া ছাত্রদের ঈদের আগেই জামিনে মুক্তির দাবিতে নাগরিক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এ মন্তব্য করেন।
গত কয়েক মাসে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ বিভিন্ন মামলায় দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৫৯ জন ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের ঈদের আগে মুক্তি দিতে প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দিয়েছে নাগরিক সমাজ।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, সরকার আজ সব কিছুর মতো বিচারক ও আদালতও নিয়ন্ত্রণ করছে। পাকিস্তান আমলেও এ পরিস্থিতি ছিল না। তখন কাউকে গ্রেফতার করা হলে নিম্ন আদালতেই জামিন দিয়ে দেয়া হতো। হাইকোর্টে যাওয়া লাগেনি। অথচ আজ আমাদের ৫৯ জন ছাত্র জামিন পাচ্ছেন না। আমাদের মনে রাখতে হবে জামিন কোনো দয়া-মায়ার বিষয় নয়। আদালতে জামিন পাওয়া মানুষের অধিকার।
সংবাদ সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, ছাত্রদের জামিন দেয়া উচিত। জামিন অধিকারের বিষয়। কোনো দয়া-মায়ার বিষয় নয়। ছাত্র সমাজ সময় উপযোগী বিষয়গুলো নিয়ে জনমত গঠন করে, আন্দোলন করে। এগুলোকে আমরা সব সময় উৎসাহিত করেছি। তাদের অবশ্যই জামিন দেয়া উচিত।
জামিন নিয়ে আমাদের ঐতিহ্য আছে উল্লেখ করে ড. কামাল হোসেন বলেন, নিম্ন আদালতগুলো এখানে একটি সাহসী ভূমিকা রেখেছে। অনেক সময় তারা জামিন দিয়ে দেন। আমাদের মনে আছে, অতীতে ব্যাপক আন্দোলনের সময় নেতাদের বক্তব্যের কারণে জেলে নেয়া হতো। তখন আবেদন করলে সাথে সাথে জামিন দেয়া হতো। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা করা হলো, মানুষজনকে কারারুদ্ধ করে রাখা হলো। তখন জামিনের যে একটি শক্তি ছিল, তখন তা আমরা দেখিয়েছিলাম। যাকেই ধরা হোক, সাথে সাথে নিম্ন আদালত জামিন দিয়ে দিত। হাইকোর্টে আসা লাগেনি।
সংবাদ সম্মেলনে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, জামিন আমাদের মানবিক ও আইনগত অধিকার। আজ আমাদের মূল সমস্যা হলো- বিচারকরা অত্যাধিকভাবে সরকার ও পুলিশ নিয়ন্ত্রিত। কোর্টে গেলে বলে, সরকার না বললে তো হবে না। আজ এক মাস হয়ে গেছে। এখনো মামলা উঠেনি। তারপর একই ধরনের মামলা পাঁচটা দেয়া আছে। তখন পাঁচটার জন্যই জামিন নিতে হয়। এক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতির সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা প্রয়োজন।
তিনি আরো বলেন, কয়েক দিন পরই ঈদ। আমরা সরকারের কাছে আবেদন করেছি। একইসাথে প্রধান বিচারপতিকেও বলেছি। সাংবিধানিক অধিকার ও ক্ষমতা প্রয়োগ করে এই ছাত্রদের ঈদের আগেই জামিনের ব্যবস্থা করুন। মনে রাখতে হবে, এই ছাত্ররাই আজকের বাংলাদেশের সৃষ্টি করেছে। তারা বাংলা ভাষার আন্দোলন করেছিল বলেই বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়াদ সাকি প্রমুখ।
Leave a Reply