1. admin@banglahdtv.com : Bangla HD TV :
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০:১৯ অপরাহ্ন

পরী বনাম রাষ্ট্রযন্ত্র, নাকি রাষ্ট্রযন্ত্রের পরী?

নিয়াজ মোর্শেদ
  • Update Time : সোমবার, ৯ আগস্ট, ২০২১
  • ৩৫৭ Time View

কিছু ইস্যু থাকে বেশ পাওয়ারফুল। ক্রাইম বা পলিটিক্যাল ফ্যাক্ট হিসেবে ভ্যালু থাকুক বা না থাকুক, সেন্টিমেন্টাল ভ্যালু ইনফিনিটি। এসব ইস্যু একবার মাঠে তুলে দিলে পাবলিক রিএকশনটা ফিউশান বিক্রিয়ার মতো খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। সুনামির মতো হাইপের তোড়ে মার্কেটে বিদ্যমান যাবতীয় ইস্যু ধুয়ে মুছে একেবারে সাফ হয়ে যায়। পরিমনি হচ্ছে এরকম একটা এটমিক ইস্যু।

বাংলাদেশে যেকোনো ইস্যু হাইপ তুললে প্রথমে যে জিনিসটা দেখতে হবে তা হচ্ছে, কারা সেটা প্যাট্রোনাইজ করছে। তারপর দেখতে হবে ঠিক কোন দিকটা হাইলাইট করা হচ্ছে, ইস্যুর আড়ালের আন্ডারলাইং মেসেজ বা ফায়দাটা কি, ঘটনাপ্রবাহ কোন দিকে পরিচালিত করা হচ্ছে এবং সর্বোপরি এ থেকে কিভা‌বে ও কারা লাভবান হচ্ছে। পরিমনি ইস্যু নিয়ে আমার কোনো স্পেসিফিক মন্তব্য নেই, তবে এর এটমিক হাইপের নিচে চাপা পড়ে যাওয়া কিছু পর্যবেক্ষণ আছেঃ

১. আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় সবকিছু বোট ক্লাবের ঘটনার সাইড এফেক্ট। আসলে কি তাই? বোট ক্লাবের ঘটনা কি শুধুই পরিমনির ঔদ্ধত্য আর কোইনসিডেন্স মাত্র, নাকি পেছন থেকে কলকাঠি নাড়া হয়েছে? সেই সময়টাতে আন্তঃবাহিনী দ্বন্দ ও প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের একটা গুঞ্জন কিন্ত বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছিলো। বিশেষ করে সংবাদ সম্মেলনে অঞ্জন সাহেবের স্ত্রী চয়নিকা ম্যাডামের উপস্থিতি অনেকের কাছেই খটকা লেগেছে! তাছাড়া বোট ক্লাব ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত নাসির সাহেবের যতটা না ক্ষতি হয়েছে, তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে খোদ ক্লাব এবং তার কিছু স্পেশাল মেম্বারের। পরিমনির রূপ আর নাসির সাহেবের গ্রেপ্তারের আড়ালে ব্যাপারটা চাপা পড়েছে বটে, কিন্তু ক্লাবের যা ক্ষতি হওয়ার তা হয়ে গেছে। পরিমনির ভাগ্যও আল্টিমেটলি সেদিনই নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিলো!

২. পিয়াসার গ্রেপ্তারের সাথে বোটক্লাব ইস্যুর আদৌ কোনো সম্পর্ক আছে, নাকি মুনিয়া কাহিনীর সাইডএফেক্ট সেটাও বেশ রহস্যময়। মুনিয়া ইস্যুটাকে ঠিকভাবে বুঝতে গেলে আবার বসুন্ধরা ও ট্রান্সকম গ্রুপের লিজেন্ডারি দ্বৈরথ, তৎসংশ্লিষ্ট মিডিয়া ওয়ার, পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের নানামাত্রিক স্বার্থ এবং এক্সট্রা ডাইমেনশন হিসেবে আনভির সাহেবের সাথে চট্টগ্রামের আলোচিত হুইপ পুত্রের ব্যক্তিগত দ্বন্দের আলোকে চিন্তা করতে হবে। সেক্ষেত্রে মুনিয়া কি আসলেই আত্মহত্যা করেছে, নাকি তাকে হত্যা করা হয়েছে সেটাও ধোঁয়াশা। হত্যা করা হলে সেটা কি আনভির সাহেব অনাকাঙ্ক্ষিত প্রেগন্যান্সি বা ব্ল্যাকমেইলে অতিষ্ঠ হয়ে করিয়েছেন, নাকি তার পরিবার করিয়েছে, নাকি আনভির সাহেবকে ফাঁসানোর জন্য অন্য কোনো পক্ষ করিয়েছে সেটাও বেশ রহস্যজনক!

৩. আপাত দৃষ্টিতে পরিমনিকে ধরা হয়েছে বিতর্কিত মডেল ও মাদক সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অভিযানের অংশ হিসেবে। এখানে মনে রাখতে হবে, পিয়াসা-মৌ গং গ্রেপ্তারের পর গরুর পেটে ইয়াবা আমদানি, ইনডোর ড্রাগ পার্টি, এসকর্ট সার্ভিসের আড়ালে ব্ল্যাকমেইলিং আর অস্ত্র ব্যবসার ইস্যুটা নিয়ে আলাপ চলছিলো। তবে সবচেয়ে স্পর্শকাতর বিষয় ছিলো সোনায় মোড়ানো উজি। ইসরাইলের তৈরী এই ভয়ঙ্কর অস্ত্রতো খোদ সেনাবাহিনীর কাছেই নাই। সেক্ষেত্রে কারা, কিভাবে এই জিনিস এনেছে এবং অতি উচ্চ মূল্যে কারা সেগুলো কিনছে, এই আলোচনাটা ন্যাশনাল সিকিউরিটির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। আপাতত পরিমনির রূপের জোয়ারে ন্যাশনাল সিকিউরিটি ভেসে গেছে!

৪. পরিমনি গ্রেপ্তারের পর যাবতীয় আলোচনা চাপা পড়েছে পরিমনি জেলে কি দিয়ে নাস্তা করছে, তার গাড়ির দাম কতো, সে কার সাথে দুবাই গেছে, তার চরিত্র কতো নষ্ট ইত্যাদি বিষয়ের আড়ালে। অথচ আলাপটা হওয়া দরকার ছিলো কারা তাকে এত টাকার গাড়ি দিয়েছে, ওই টাকা তারা কিভাবে উপার্জন করছে, কাদের জোড়ে সে অভিজাত ক্লাবগুলোতে গিয়ে উচ্ছৃঙ্খলতা করতো সেসব। আমার ধারণা দু-চারজন ইউজড অথবা বাতিলের খাতায় নাম উঠানো ব্যবসায়ী আর একজন ব্যাংক কর্মকর্তা ছাড়া তেমন কেউ ফাঁসবে না। তবে কোনো আমলা বা রাজনীতিবিদের নাম আসবে না। যারা ফাঁসবে তারাও কিছুদিন পর বের হয়ে আসবে, কারণ পতিতাগমন তেমন বড় কোনো ক্রাইম না। আপাতত পরমনির রূপের তোড়ে তার ক্লায়েন্ট আর ক্রিয়েটররা ভেসে গেছে। এক পরি গেছে তো কি হইছে, এই শহরে ওদের জন্য শত শত পরি ক্রিয়েট করা আছে এবং তাদের পরিবাজিও চলতেই থাকবে।

৫.পরিমনি গ্রেপ্তার হওয়ায় বাকি সব বাদ দিয়ে শুধু মদ আর পরিমনির নষ্টামির ব্যাপারটা সামনে আসে। অথচ মদ এদেশে সবাই খায়, মিডিয়া পার্সন আর বিজনেস ম্যানদের বাসায় মদের কালেকশন থাকাটা বেশ স্বাভাবিক ব্যাপার। ওদিকে পিয়াসাদের বিজনেস ক্লায়েন্ট আর পরিমনির পার্সোনাল ক্লায়েন্টদের মধ্যে স্ট্র্যাটেজিগত এবং ক্ষেত্রবিশেষে স্ট্যাটাসগত পার্থক্য আছে। পরিমনি আর পিয়াসার বিজনেস মডেলেও পার্থক্য আছে, ওদের গডফাদাররাও সম্ভবত ভিন্ন। ধারণা করা হয় যেসব ধনীর দুলালরা পিয়াসার কাছে যেতো, ওদের বাপ লেভেলের লোকেরা পরির কাছে যেতো। ওদিকে পরীমনির ক্লায়েন্টদের ব্যাপারে যখন কথা উঠলো, ঠিক তখনই কেনো পুলিশ সদস্যের ব্যাপারটা সামনে আসলো? তবে কি আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা জাস্ট অন্য কারো ঢাল হিসেবে ইউজড হয়ে গেলেন? যে দেশে পুলিশের ইশারায় বাঘে-সিংহে একঘাটে পানি খায়, খুন-ধর্ষণ-চাঁদাবাজি সহ কোনো অপরাধে কোনো পুলিশ সদস্যের বিচার হওয়ার কোনো নজির নেই, সে দেশে একজন পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তাকে ফাঁসানো কিন্তু চাট্টিখানি কথা না!

৬. পুলিশ কর্মকর্তা ফেঁসে যাওয়ায় আরেকটা ব্যপার সামনে এসেছে। সেটা হচ্ছে “নাথিং গোজ আনসিন।”। কে কি করে না করে, সেটা কেউ না কেউ মনিটরিং করছে। প্রয়োজনের সময় সেটা যে তার বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হবে না, তার কোনো গ্যারান্টি নাই। একই অবস্থা দেখা গিয়েছিলো প্রথম আলোর রোজিনা বনাম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ইস্যুতে। সে সময় পাল্টাপাল্টি আক্রমণের অংশ হিসেবে উপসচিব জেবুন্নেসা আর রোজিনার উভয়ের সম্পদের বিবরণ রাতারাতি ফাঁস হয়ে গিয়েছিলো। মনে হয়েছে লিস্ট রেডি ছিলো, দরকার হওয়ামাত্রই পাবলিকলি ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তবে আলোচিত পুলিশ সদস্যকে ফাঁসানোর জন্য রাজারবাগ পুলিশ লাইনে অবস্থিত অফিসার্স কোয়ার্টারের সিসিটিভি ফুটেজ একাত্তর টিভিতে প্রকাশ হওয়ার আন্ডারলাইং মেসেজটা গুরুত্বপূর্ণ। এই একাত্তর টিভি হচ্ছে সেই চ্যানেল, যারা আলোচিত বেশ কয়েকটি ফোনালাপ ফাঁস করেছিলো। তবে ফোনালাপের চেয়েও রাজারবাগের ভিডিও ফুটেজ লিক হওয়া অনেক বেশি স্পর্শকাতর। কারণ রাজারবাগ ডিএমপির মুল ব্যারাক, এটির নিরাপত্তা কম্প্রোমাইজড হওয়ার কথা ছিলো না।

৭. ব্ল্যাকমেইলিং বিজনেসটা মূলত পিয়াসা-মৌ চক্রের। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে পরিমনির রূপের তোড়ে এমনিতেই বহু রথী-মহারথী ভেসে গেছে, আলাদা করে ব্ল্যাকমেইলিং দরকার পড়ে নাই। পর্নোগ্রাফী বলতে কি ব্ল্যাকমেইলের উদ্দেশ্যে ভিডিও ধারণকে বুঝিয়েছে, নাকি ব্যাবসায়িক পর্ণ সেটা নিয়েও প্রশ্ন আছে। আবার এই ব্ল্যাকমেইলিং কান্ডের শিকার হওয়া ব্যক্তিরাও সমাজের বিত্তবান এবং প্রভাবশালী অংশের প্রতিনিধিত্ব করে। তাই এই লেভেলের ব্যক্তিদের ব্ল্যাকমেইল করার জন্য পরি-পিয়াসাদেরও নিশ্চয়ই অতি উচ্চ মাপের ব্যাকআপ চ্যানেল মেইনটেন করতে হয়। সেই ব্যাকআপ চ্যানেল কারা? মদ-ইয়াবার আলাপের চাইতে চাইতে এই ভয়ানক প্রতারক চক্রকে দমন করাটা মূল কনসার্ন হওয়া উচিৎ ছিলো। শাহেদ, পাপিয়া, জি কে শামিম সবাই সামহাউ এই ব্ল্যাকমেইল-প্রতারক গ্রুপের মেম্বার। মাঝেমধ্যে কিছু এজেন্টরা ধরা পড়ে বটে, কিন্তু ওদের গডফাদার কারা? এই ব্যাপারটা যতদিন না ক্লিয়ার হবে, ততদিন পর্যন্ত এসব অভিযান রোগ-এজেন্ট সাইজ করার হাতিয়ার বলেই গণ্য হবে।

৮. সিস্টার হেলেনা জাহাঙ্গীর গ্রেপ্তার হওয়ার পর নিখিল বাংলা ভুঁইফোড় লীগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার রব উঠেছিলো। বিশেষ করে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করা গর্বিত আওয়ামীলীগার এবং “বাংলাদেশ জননেত্রী শেখ হাসিনা লীগ” এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মনির খানের গ্রেপ্তারের পর ব্যাপারটা বেশ জোরেশোরে আলোচনায় আসে। আপাতত পরিমনির রূপের জোয়ারে ভুইফোড় লীগ ভেসে গেছে। তাই ভুইফোড় লীগের ভুংভাং নেতা এবং তাদের ব্যাকআপ যোগানো মূলদলের প্রভাবশালী টুংটাং নেতাগণের পক্ষ থেকে পরিমনির একটা ধন্যবাদ প্রাপ্য।

৯. অনেকে পরিমনির সাথে ‘র’ কানেকশন খুঁজে পেয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে পরিমনি হয়তো হানি ট্র্যাপের টোপ হিসেবে ব্যবহার হয়েছে, কিন্তু সে নিজে স্পাই এই তথ্য আমি বিশ্বাস করি না। স্পাই হইতে হইলে যেই মাত্রার বুদ্ধিমত্তা দরকার সেটা পরিমনির নাই। থাকলে সে বোট ক্লাব কান্ড ঘটাইতে যাইতো না। পরিমনি যদি ‘র’ দ্বারা ইউজড হয়ে থাকে (যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে), সে নিজেও সম্ভবত বোঝে নাই যে সে ‘র’ এর স্বার্থে কাজ করছে। সত্যিকারে যারা ‘র’ এর সাথে কাজ করে তারা নিজে মুভ করে কম, অন্য কাউকে দিয়ে করিয়ে নেয়। এসব ক্ষেত্রে মূল এজেন্ট বা পরিকল্পনাকারী সাধারণত দুই তিন স্টেপ পেছনে থেকে ভায়া হয়ে কাজটা করিয়ে নেয়। যে কাজ করে এবং যার সাথে করা হয়, কেউই বুঝে না যে আল্টিমেটলি কার পারপাস সার্ভ হইলো। তাই যাকে তাকে ‘র’ এজেন্ট/স্পাই বললে ‘র’ সংক্রান্ত মূল আলাপটাই খেলো হয়ে যায়! কোনো সিক্রেট সার্ভিসই এতো খুল্লাম খুল্লা অপারেট করে না। ব্যাকগ্রাউন্ডে ‘র’ এর স্বার্থ জড়িত থাকতেই পারে, কিন্ত সেটা পরিমনি না। সে ইস্যু সামনে আসেওনি, আসবেও না।

১০. অনেকের ধারণা পরিমনি নির্বোধ টাইপ সুন্দরী। এই আলাপটাও খেলো। পরিমনি বোল্ড এবং বিউটি উইথ ব্রেন। সাহস এবং বুদ্ধি না থাকলে সে শামসুন্নাহার স্মৃতি থেকে পরিমনি হইতে পারতো না। এই ঢাকা শহরে বহুত সুন্দরী পাপিয়া-পিয়াসা টাইপ গ্যাং আর মিডিয়া পাড়ায় লুটোপুটি খায়। ওদের কেউ পরিমনি হয়ে উঠতে পারে নি, পারবেও না। পরিমনিকে বুঝতে হলে তার রাতারাতি উত্থানের রহস্যটা বুঝতে হবে। এক দিনে ত্রিশটা ছবিতে সাইন করা, ব্যাপক মিডিয়া কাভারেজ, সেকালের নির্মলেন্দু গুন থেকে একালের আখতারুজ্জামান আজাদের স্তুতিবাক্য, অভিজাত পার্টিতে গেস্ট হওয়া, ঘটা করে কোরবানী আর ফাইভস্টার হোটেলে জন্মদিন পালন করা ইত্যাদি বিষয়গুলো কি শুধুই পরির রূপের কারণে সম্ভব হয়েছে? নাকি সবকিছুর পেছনে অদৃশ্য কোনো ব্যাক্তি বা গোষ্ঠীর প্যাট্রোনাইজ আছে?? মিডিয়া পাড়ায় বহুত পরিমনি ফ্যানের পাখা গুইণা যৌবন কাটাইয়া দেয়, গাড়ি কিনতে পারে কয়জন?

১১. সবকিছু ছাপিয়ে যেটা চোখে পড়ে সেটা হচ্ছে, প্রগতিশীল ও নারীবাদী গোষ্ঠীর চুপ করে যাওয়া বা পরিমনি বিরোধী মন্তব্যে। এদেশের নারীবাদীরা এমনিতেও ঘরে কাজের মেয়েকে নির্যাতন করে বাইরে এসে নারীবাদ চর্চা করে। প্রগতিশীলরা খুল্লাম-খুল্লা নারীবাজি করে নারীকে সম্মান করে। এখানে মাসুদা ভাট্টির জন্য ৬৪ জেলায় মামলা হয়, অথচ পরিমনির মতো আইকনিক নারীর জন্য সবাই চুপ! এই চুপ থাকাটা অবশ্য একটা মেসেজ দেয়, পরিমনি ভারতপন্থী প্রগতিশীল ও সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর কেউ না। ওদের প্রয়োজনে ব্যাবহৃত হয়েছে হয়তো, কিন্তু ওদের একজন না।

১২. এই মুহূর্তে দেশের মূল আলোচনা হওয়া উচিৎ ছিলো করোনা ইস্যু। চিকিৎসা ব্যবস্থার চরম দুর্নীতি ও অনিয়ম, টিকা নিয়ে চাপাবাজি, হঠকারিতামূলক হুদাই লকডাউন, আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয়হীনতার দরুন ঘন্টায় ঘটায় সিদ্ধান্ত পরিবর্তন, দেড় বছরের অধিক সময় ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ইত্যাদি বিষয়গুলো বেশ সমালোচনা ও বিদ্রুপের জন্ম দিচ্ছিলো। বিশেষ করে কোরবানির পর হুট করে গার্মেন্টস খোলার সিদ্ধান্ত নেয়া এবং একদিনের নোটিশে শ্রমিকদের পায়ে হেঁটে ঢাকায় আসতে বাধ্য করাটা বেশ সমালোচনার জন্ম দেয়। পাশাপাশি টিকা নিয়ে কোনো সমন্বয় ছাড়াই যেমন খুশি তেমন বক্তব্য আর হঠকারিতাও বেশ ঠাট্টার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। ইতিমধ্যে অর্ধ-ভায়াল টিকা দেয়ার খবর আসছে, বাতাস পুশের খবর আসছে, টিকা চুরি করে বিক্রির খবর আসছে। সবচেয়ে বড় কথা কি পরিমাণ টিকা আসছে আর কি পরিমাণ দেয়া হইছে সেই তথ্য নিয়াও ব্যাপক ধোঁয়াশা আছে। আপাতত পরিমনির রূপের জাদুতে করোনাই ভ্যানিশ হয়ে গেছে, টিকাতো কোন ছাড়!

উপসংহারঃ পরিমনি হচ্ছে তথাকথিত রাতের রানী, চিপ উম্যান, মাদকাসক্ত, উদ্ধত, উচ্ছৃঙ্খল ইত্যাদি নানা নেগেটিভিটিতে ভরপুর একজন নষ্টা নারী। অথচ এই সস্তা মানের নষ্টা নারীকে গ্রেপ্তার করতে স্পেশাল ব্যাটেলিয়ন দিয়ে বাসা ঘেরাও করতে হয়। এই পরিমনির জন্য লকডাউন আর বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের খেলা ফেলে বনানীর মতো পশ এলাকায় হাজারো মানুষের ভীড় জমে যায়। দলকানা গাফফার সাহেব পরিমনির নিরাপত্তা নিয়ে খবরের কাগজে কলাম লিখে। গ্রেপ্তার সংক্রান্ত পরিমনির লাইভের ভিউ হয় সাড়ে তিন কোটি বার, যেখানে লাস্ট নির্বাচনে সাড়ে তিন কোটি লোক ভোট দিতে গেছিলো কিনা সন্দেহ আছে। অপরদিকে পরমনির কাছে গিয়ে ডিটেকটিভ কর্মকর্তা ডিক-টেকটিভ হয়ে যায়। পরিমনির গ্রেপ্তারে সাংবা-ডিকরা হর্নি হয়ে নিউজের উপর নিউজ করে ছ্যাড়াবেড়া করে ফেলে, এডভো-ডিকরা পরিমনির মামলা লড়ার জন্য আদালতের মতো জায়গায় হুড়োহুড়ি-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। পরিমনির গ্রেপ্তারে উল্লসিত হয়ে আম পাবলিক পর্যন্ত ডিক-বিডিক হারিয়ে হারিয়ে ফেসবুক হ্যাং বানিয়ে গেলে। পরিমনির পক্ষে বিপক্ষে ডিক-নির্দেশনামূলক কলাম আর আর্টিকেলের বন্যায় ভেসে যায় সোশ্যাল ও নিউজ মিডিয়া! সবই ঠিক আছে, শুধু পরিমনির বিশাল ফ্যান-ফলোয়ার আর ক্ল্যায়েন্ট-শুভাকাঙ্ক্ষীরা তার বিপদের মুহূর্তে ডিক-বাজী খেয়ে পালিয়ে গেছে! তবুও, এমন পারোমাণো-ডিক ইস্যু কে দেখেছে কবে?!

মন্তব্যঃ উপরের পয়েন্টগুলো বিবেচনা করলে দেখা যায়, পরিমনির রূপ বনাম নারীবাদ এবং মদের বোতলের পক্ষ-বিপক্ষ নিয়ে আলোচনা করাটাই সবচেয়ে সহজ। একদিকে যেমন আলোচকের জন্য ঝুঁকিমুক্ত, তেমনি পর্দার আড়ালে থাকা ব্যাক্তিদের জন্যও স্বস্তিদায়ক। পাশাপাশি আম পাবলিকের জন্য সুন্দরী নারিকে বাটে পাইয়া গালি দিয়ে মনে ঝাল মেটানোর অপূর্ব সুযোগতো রয়েছেই। তবে পরিমনি সম্পর্কে একটা ফিউচার প্রেডিকশন দেইঃ একদিন এই পরিমনিকেই বাংলার মেরিলিন মনরো বলে গুনগান গাওয়া হবে। ভারতের সিল্কের মতো পরিমনিকে নিয়েও বায়োপিক হবে।

(সংগৃহীত)

Please Share This Post in Your Social Media

One response to “পরী বনাম রাষ্ট্রযন্ত্র, নাকি রাষ্ট্রযন্ত্রের পরী?”

  1. ডি জেড এম হাসান বিন শফিক says:

    যথাযথ ও গুরুত্বপূর্ণ এবং ইঙ্গিতপূর্ণ বিশ্লেষণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2020 banglahdtv
Design & Develop BY Coder Boss