1. admin@banglahdtv.com : Bangla HD TV :
মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০১:০৭ অপরাহ্ন

ভারত ‘কমলা’ আর পাকিস্তান কেন ‘লাল?’

বিশেষ প্রতিনিধি
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১
  • ২৩৮ Time View

ব্রিটেন তাদের ‘রেড লিস্ট‘ অর্থাৎ কোভিড নিয়ে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর তালিকা থেকে সম্প্রতি ভারতকে সরিয়ে নিলেও পাকিস্তানকে রেখে দেয়ায় পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপিদের পর এখন ইসলামাবাদ পক্ষ থেকেও ক্ষোভ প্রকাশ শুরু হয়েছে।

পাকিস্তানের প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় মানবাধিকারবিষয়ক মন্ত্রী শিরিন মাজারি সোমবার– তার ভাষায়- ‘ভারত-পন্থী প্রভাবিত’ ব্রিটিশ সরকারকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছেন।

ব্রিটেনে ভ্রমণের লাল তালিকা থেকে গত সপ্তাহে ভারতকে সরিয়ে নিলেও পাকিস্তানকে রেখে দেয়ার পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপিরা বৈষম্যমূলক আচরণের অভিযোগ তুলে সরকারের ওপর চড়াও হয়।

চাপে পড়ে ব্রিটেনের সরকারের পক্ষ থেকে যুক্তি দেয়া হচ্ছে যে পাকিস্তানের কাছ থেকে টিকা এবং সংক্রমণের সর্বশেষ তথ্য তাদের দেয়া হয়নি।

কিন্তু পাকিস্তানের মন্ত্রী শিরিন মাজারি সোমবার বলেন, ব্রিটিশ সরকার ‘খোঁড়া যুক্তি’ দেখিয়ে পাকিস্তানকে রেড-লিস্টে রেখে দিয়েছে।

তিনি বলেন, ব্রিটিশ সরকার পাকিস্তানের কাছ থেকে টিকা বা সংক্রমণ পরিস্থিতি সম্পর্কিত কোনো তথ্য কখনই চায়নি।

টুইটারে তার প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানি মন্ত্রী বলেন, ‘সারা বিশ্ব জানে কোভিড প্যানডেমিক মোকাবেলায় ভারতের ভূমিকা কতটা সর্বনাশা ছিল। অথচ ভারত-পন্থী প্রভাবিত ব্রিটিশ সরকার ভারতকে অ্যাম্বার লিস্টে ঢোকালো কিন্তু পাকিস্তানকে লাল তালিকায় রেখে দিলো। এখন বিরোধী এমপিদের চাপে সরকার বলছে, পাকিস্তানে তাদেরকে তথ্য দেয়নি।’

মন্ত্রী শিরিন মাজারি বলেন, কোভিড বিষয়ে পাকিস্তানের সমস্ত তথ্য অনলাইনে রয়েছে এবং যে কেউ তা যখন কখন দেখতে পারে। (পাকিস্তানের) ন্যাশনাল কম্যান্ড অ্যান্ড অপারেশন সেন্টারের সমস্ত তথ্য তাদের ডেটাবেজে রয়েছে এবং প্রতিদিন তা আপডেট করা হয়।

এর আগে ব্রিটিশ সরকার আরেকটি যুক্তি হাজির করেছিল যে ভারত থেকে আসা যাত্রীদের চেয়ে পাকিস্তান থেকে আসা যাত্রীদের ওপর কোভিড পরীক্ষায় উঁচু হারে পজিটিভ রোগী শনাক্ত হচ্ছে! গোলপোস্ট বদলানো হচ্ছে! স্পষ্টতই ক্ষোভের পাশাপাশি এভাবে শ্লেষ প্রকাশ করতেও ছাড়েননি পাকিস্তানি মন্ত্রী।

ব্রিটেনের কোয়ানেন্টিন ‘ট্রাফিক লাইট‘

দেশের বাইরে থেকে কোভিড সংক্রমণ ঠেকাতে ব্রিটিশ সরকার বিদেশ ভ্রমণ-সম্পর্কিত একটি ট্রাফিক লাইট পদ্ধতি অনুসরণে করছে – যেখানে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে লাল তালিকায় রাখা হয়েছে।

এসব দেশ থেকে কেউ ব্রিটেনে এলে তাদের নিজ খরচে ১০ দিন হোটেলে কোয়ারেন্টিনে থাকতে হয়, এবং এই ১০ দিনের মধ্যে কমপক্ষে দুবার নিজের খরচে কোভিড পরীক্ষা করাতে হয়।

অপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে অ্যাম্বার তালিকা অর্থাৎ কমলা তালিকায় রাখা হয়েছে। এসব দেশে থেকে আসা যাত্রীদের বাড়িতে পাঁচ দিন কোয়ারেন্টিন করলেই চলে।

গ্রিন লিস্ট বা সবুজ তালিকাভুক্ত দেশগুলো থেকে কেউ এলে তাদের কোয়ারেন্টিন করা লাগে না যদি তাদের টিকা দেয়া থাকে।

এপ্রিলে ব্রিটিশ সরকার উপমহাদেশের তিনটি দেশকেই অর্থাৎ ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশকে লাল তালিকায় ঢোকায়।

কিন্তু রোববার থেকে বাহরাইন, কাতার ও ইউএই‘র সাথে ভারতকে লাল তালিকা থেকে সরিয়ে কমলা তালিকায় নেয়া হলেও পাকিস্তান ও বাংলাদেশকে লাল তালিকায় রেখে দেয়া হয়।

ক্ষিপ্ত পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত এমপিরা

গত সপ্তাহে ব্রিটিশ সরকারের কোয়ারেন্টিন-সম্পর্কিত এই সিদ্ধান্তের পরপরই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ বেশ কজন এমপি।

তাদের সবারই বক্তব্য- ভারতের কোভিড পরিস্থিতি পাকিস্তানের চেয়ে এখনও অনেক খারাপ হওয়া সত্ত্বেও শুধু রাজনৈতিক বিবেচনায় ভারতকে সুবিধা দেয়া হয়েছে।

উত্তর ইংল্যান্ডের ব্রাডফোর্ড শহরের পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত এমপি নাজ শাহ সরকারের সিদ্ধান্তে বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, কোয়ারেন্টিনের জন্য ট্রাফিক লাইট পদ্ধতির ব্যবস্থাপনায় ব্রিটেন আবারো আহাম্মকি আচরণ করল।

বিরোধী লেবার পার্টির এই এমপি এক বিবৃতিতে বলেন, এর আগও বার এই সরকার বিজ্ঞানকে কলা দেখিয়ে রাজনৈতিক বিবেচনার পথ নিয়ে কোভিড ব্যবস্থাপনাকে বিপদগ্রস্ত করেছে। তারা অনেকদিন পর্যন্ত ভারতকে রেড-লিস্টে ঢোকায়নি। যার ফলে, তিনি বলেন, ব্রিটেনে কোভিডের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়েছে।

বোল্টন শহর থেকে নির্বাচিত আরেক পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত এমপি ইয়াসমিন কোরেশি বলেন, পাকিস্তানে বিপজ্জনক কোনো ভ্যারিয়েন্ট না থাকা স্বত্বেও দেশটিকে লাল তালিকায় রেখে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক স্বার্থের বিবেচনায় ব্রিটিশ সরকার পাকিস্তানের প্রতি অন্যায় আচরণ করছে…এটা পাকিস্তানের প্রতি নগ্ন বৈষম্য।

পাকিস্তানি অধ্যুষিত লুটন নর্থ আসনের চীনা বংশোদ্ভূত এমপি সারা ওয়েন বলেন- সরকারের সর্বশেষ এই সিদ্ধান্তের যুক্তি তিনি কোনোভাবেই বুঝতে পারছেন না।

তিনি বলেন, আপনি যদি তথ্য পরিসংখ্যানের দিকে তাকান তাহলে ব্রিটিশ মন্ত্রীদের ব্যাখ্যা দিতে হবে কেন ভারত অ্যাম্বার তালিকায় এবং পাকিস্তান ও অন্য আরো কিছু দেশ লাল তালিকায়।

পাকিস্তানের দৈনিক ডনের এক রিপোর্ট বলছে, পাকিস্তান বংশোদ্ভূত বেশ কয়েকজন ব্রিটিশ এমপি শুক্রবার পাকিস্তানের পরিকল্পনা এবং উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রী আসাদ উমর এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষ সহকারি ড. ফয়সল সুলতানের সাথে শুক্রবার এক বৈঠক করেন।

বৈঠকে পাকিস্তানের কর্মকর্তারা ব্রিটিশ ওই এমপিদের জানান, সমস্ত সর্বশেষ তথ্য সরকারের সংশ্লিষ্ট সাইট ছাড়াও টুইটার ইউটিউবেও রয়েছে যা ব্রিটিশ সরকার চাইলে সহজেই দেখতে পারে।বৈঠকের পর পাকিস্তানের পরিকল্পনামন্ত্রী এক টুইট করে বলেন, কোভিড বিষয়ক সব তথ্য ব্রিটিশ এমপিদের দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা ব্রিটিশ সরকারকেও তা দেব এবং বোঝানোর চেষ্টা করবো যে লাল তালিকার সিদ্ধান্ত যেন রাজনৈতিক বিবেচনায় না হয়ে বিজ্ঞানের বিবেচনায় নেয়া হয়।

বাংলাদেশকে ব্রিটেনের লাল তালিকা থেকে প্রত্যাহারের জন্য ঢাকার পক্ষ থেকে বা বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপিদের পক্ষ থেকে ব্রিটিশ সরকারের সাথে দেন-দরবারের কোনো তৎপরতা এখনো চোখে পড়েনি।
সূত্র : বিবিসি

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2020 banglahdtv
Design & Develop BY Coder Boss