আরাফাত রহমান কোকো ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি বীরউত্তম জিয়াউর রহমান এবং বাংলাদেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠ পুত্র। রাজনৈতিক বন্ধুর পথে তার বেড়ে ওঠা অন্য অনেকের মতো সাধারণ না হলেও আরাফাত রহমান কোকো ছিলেন অতিসাধারণ। রাষ্ট্রপতি পিতা ও প্রধানমন্ত্রী মায়ের সন্তান হিসেবে গর্বিত হলেও ন্যূনতম অহংবোধ স্পর্শ করেনি তার জীবদ্দশায়। শৈশবে পিতার আদর ও শাসন থেকে বঞ্চিত হলেও মাতৃস্নেহ এবং সহোদরের বন্ধুত্বের বাহুডোরে থেকে পরিবারের প্রতি প্রেরণা, মনোবল ও অকুণ্ঠ সমর্থন জুগিয়ে গিয়েছেন। ২০০১ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে মা বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশের দায়িত্বভার গ্রহণ করলে সাবেক ক্রিকেটার ও ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে দেশের ক্রিকেটের উন্নয়নে নিজের অভিজ্ঞতা ও পরিকল্পনা দেশের ক্রিকেটের উন্নয়নে ভূমিকা রাখার তাগিদে তিনি ২০০২-২০০৫ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও বিসিবির গেমস ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। বাংলাদেশের ক্রিকেটকে বিশ্বমানের ক্রিকেটে উন্নয়নের তার নিরলস প্রচেষ্টা ক্রিকেটের মজবুত ভৌত কাঠামো তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিল।
এ ছাড়াও তিনি ক্রিকেট সংগঠক হিসেবে ক্রীড়া সংঘ ওল্ড ডিওএইচের চেয়ারম্যান ছিলেন সেই সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সিটি ক্লাবের সঙ্গেও। বিসিবির গেমস ডেভেলপমেন্ট চেয়ারম্যান হিসেবে তার পরামর্শে সারা দেশ থেকে প্রতিভাবান পেশাদার ক্রিকেটারদের খুঁজে বের করে অনুশীলন ক্যাম্পের মাধ্যমে সময়োপযোগী ও বিশ্বমানের পেশাদার খেলোয়াড় হিসেবে গড়ে তুলতে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন।
১৯৯৬ সালের শ্রীলঙ্কাকে বিশ্বকাপ জেতানো কোচ বাংলাদেশের আধুনিক ক্রিকেট উন্নয়নে সর্বজনস্বীকৃত ডেভ হোয়াটমোরকে তিনি বাংলাদেশের কোচ হিসেবে নিয়োগ প্রদানে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন। পরে হোয়াটমোরের হাত ধরেই বাংলাদেশের ক্রিকেট অনন্য মর্যাদা লাভ করতে সক্ষম হয়েছিল। ভঙ্গুর বাংলাদেশ ক্রিকেটকে শক্তিশালী হিসেবে গড়ে তোলেন হোয়াটমোর।
২০০৫ সালে হোয়াটমোরের হাত ধরেই বাংলাদেশ তাদের নিজেদের ইতিহাসের প্রথম টেস্ট জয়ের স্বাদ গ্রহণ করে। ওই বছরই অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অস্ট্রেলিয়াকে ৫ উইকেটে হারিয়ে পুরো বিশ্বকে চমক দেখায় বাংলাদেশ। কেননা সেই সময়ের অস্ট্রেলিয়া দল ছিল ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা দলগুলোর মধ্যে একটি। আরাফাত রহমানের পরিচর্যার ফল স্বরূপ ২০০৭ বিশ্বকাপে আবারও নিজেদের প্রমাণ করে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের মতন আসরে বাংলাদেশ শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারতকে হারিয়ে প্রথমবারের মতন বিশ্বকাপের আসরে সুপার ৮-এ জায়গা করে নেয়।
আরফাত রহমান তার সময়কালে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ‘পারফর্ম করুন এবং আরও উপার্জন করুন’ স্লোগানসহ একটি নতুন যোগ্যতাভিত্তিক বেতন কাঠামো ঘোষণা করেন এবং জাতীয় ক্রিকেটারদের জন্য প্রতিটি গ্রেডে মূল বেতন ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি করেন। বিভিন্ন বিভাগে ১৮ জন ক্রিকেটারকে এই যোগ্যতাভিত্তিক নতুন বেতন কাঠামোর আওতায় আনেন। বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের উন্নত জীবনযাপন পেশাদার ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন প্রান্তিক প্রতিভাবান কিশোরদের অনেক বেশি পরিশ্রমী ও মনোযোগী করে তুলেছিল।
উৎসাহিত করার জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে চুক্তিবদ্ধ করা হয় ও মানসম্মত ম্যাচ ফি প্রদান করা হয়। ২০০৫ সালে প্রতি টেস্টে মাথাপিছু $১,০০০ মার্কিন ডলার ও একদিনের আন্তর্জাতিক খেলায় অংশগ্রহণের জন্য $৫০০ মার্কিন ডলার প্রদান চালু করেন। খেলোয়াড়দের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে যা বিশেষ ভূমিকা রাখে।
শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়াম মিরপুর ও বগুড়া শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামের রূপকার তিনি। মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়াম আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজনে বিশ্বের ষষ্ঠ স্থান দখল করে আছে। এখন পর্যন্ত ২০০ আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজনের মাইলফলক অতিক্রম করেছে ভেন্যুটি। তা ছাড়াও হোম অফ ক্রিকেটের বিভিন্ন লীগ ও জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের অনুশীলনে মাঠটি সহায়ক ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। সারা দেশজুড়ে ক্রিকেট উন্মাদনা ছড়িয়ে দিতে তিনি খুলনা, চট্টগ্রাম, বগুড়া, নারায়ণগঞ্জ ক্রিকেট স্টেডিয়ামগুলোকে আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজনের জন্য উপযোগী করে গড়ে তুলেছিলেন।
সর্বোপরি আরাফাত রহমান কোকোর গৃহীত পদক্ষেপগুলো ক্রিকেট বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে প্রস্তুত করে তুলতে সচেষ্ট ভূমিকা রেখেছে এবং পেশাদার ভবিষ্যৎ ক্রিকেটার হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে উৎসাহিত করছে। ক্ষনজন্মা মহান এই ক্রীড়া সংগঠক ১৯৬৯ এই দিন ১২ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেছিলেন। শুভ জন্মদিন ক্ষণজন্মা।
এস এম গালিব ইমতেয়াজ নাহিদ: যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় সংসদ।
Leave a Reply