ঢাকার করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের সাধারণ করোনা শয্যাতে বাড়ছে রোগী। সমানতালে আইসিইউ শয্যাতে করোনার জটিল রোগীদের চাপ বাড়ছে। গত সপ্তাহে সাধারণ ও আইসিইউ শয্যাতে যে পরিমাণ রোগীর চাপ ছিল এ সপ্তাহে সেটি আরও কয়েকগুন বেড়ে গেছে। এতেকরে ধীরে ধীরে করোনা খালি শয্যার সংখ্যা কমে আসছে। গতকাল পর্যন্ত ঢাকার ৩ হাজার ৪০৪টি সাধারণ শয্যার মধ্যে ২ হাজার ২১৬টি শয্যায় রোগীর ভর্তি ছিল। আর আইসিইউ’র ২৯৭টি শয্যার ২১৭টিতেই রোগী ছিল। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেভাবে সংক্রমন বাড়ছে আর কিছুদিন পরে কোনো হাসপাতালেই করোনা রোগীদের জন্য শয্যা খালি থাকবে না। একইভাবে জটিল রোগীদের জন্য আইসিইউ সঙ্কট তৈরি হতে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২৬ নভেম্বর ঢাকার করেনা ডেডিকেটেড ১৯টি হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য সাধারণ শয্যা ছিল ৩ হাজার ৪৮৪টি। এসব শয্যায় রোগী ভর্তি ছিল ২ হাজার ১৪৯ জন। শয্যা খালি ছিল ১ হাজার ৩৩৫টি। ২৭ নভেম্বর সমান সংখ্যক শয্যায় ২৬ জন রোগী বেশি ভর্তি হয়। এতেকরে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ১৭৫জন। শয্যা খালি ছিল ১ হাজার ৩০৯টি। গতকাল ২৮ নভেম্বর দুপুর পর্যন্ত আরও ৪১ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। সব মিলিয়ে গতকাল পর্যন্ত ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ২ হাজার ২১৬ জন। শয্যার সংখ্যা আরও কমে দাঁড়ায় ১ হাজার ১৮৮টি। তিন দিনের ব্যবধানে হাসপাতালগুলোতে ৬৭জন রোগী ভর্তি বেশি ভর্তি হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা গেছে, ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের ২৭৫টি সাধারণ করোনা শয্যার সবকটিতেই রোগী ভর্তি। রোগীর অতিরিক্ত চাপে এক সপ্তাহ ধরে হাসপাতালটিতে বাড়তি সিটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। গতকাল দুুপুর পর্যন্ত হাসপাতালটিতে ৫৯ জন অতিরিক্ত রোগী ভর্তি ছিল। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৮৮৩টি করোনা শয্যায় গতকাল দুপুর পর্যন্ত রোগী ভর্তি ছিল ৬৮৫জন। শয্যা খালি ছিল ১৯৮টি। তার আগে ২৭ নভেম্বর সমান সংখ্যক শয্যায় ৬৬৬ জন রোগী ভর্তি ছিল। শয্যা খালি ছিল ২১৭টি। ২৬ নভেম্বর এসব শয্যায় রোগী ভর্তি ছিল ৬৫৪ জন। শয্যা খালি ছিল ২২৯টি। তিন দিনের ব্যবধানে হাসপাতালটিতে রোগী ভর্তি হয়েছে ৩৩জন। একইভাবে, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, কুয়েত মৈত্রি হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ সরকারের করোনা ডেডিকেেেটড সব হাসপাতালে প্রতিদিন রোগী বাড়ছে।
শুধু সাধারণ শয্যা নয় ঢাকার করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের আইসিইউ’তে জটিল করোনা রোগীদের চাপ বাড়ছে। ২৬ নভেম্বর ঢাকায় করোনা রোগীদের জন্য ৩০৫টি আইসিইউ বরাদ্দ ছিল। এসব শয্যায় রোগী ভর্তি ছিল ২০৮ জন। শয্যা খালি ছিল ৯৭টি। ২৭ নভেম্বর সমান সংখ্যক শয্যায় রোগী আরও সাতজন রোগী ভর্তি হয়। এতেকরে শয্যা কমে হয় ৯০টি। আর গতকাল দুপুর পর্যন্ত শয্যা কমে ২৯৭টি হলেও আরও ১০জন রোগী ভর্তি হয়। এতে করে তিন দিনের ব্যবধানে ১৭ জটিল রোগী আইসিইউ’তে বেশি ভর্তি হয়েছে। বর্তমানে আইসিইউ শয্যা খালি আছে মাত্র ৮০টি। এই ৮০টি শয্যার মধ্যে তেজগাঁওয়ের ইমপালস হাসপাতালের ৫৬টি শয্যার ৪২টি শয্যা খালি। শুধুমাত্র ১৪টি শয্যায় রোগী ভর্তি আছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের ১০টি আইসিইউ শয্যার সবকটিতে রোগী ভর্তি আছে। এই হাসপাতালে গতকাল পর্যন্ত কোনো আইসিইউ শয্যা খালি ছিল না। মুগদা জেনারেল হাসপাতালের ১০টি আইসিইউ শয্যার সবকটিতে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের ১৬টি আইসিইউ শয্যার ১৫টিতে, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালের ১৫টি আইসিইউ’র ১৩টিতে, বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের ১২টি আইসিইউ’র সবকটিতে, আনোয়ার খান মর্ডান হাপাতালের ১০টি শয্যার সবকটিতে, ইবনে সিনা হাসপাতালের ৬টি শয্যার সবকটিতে, এভারকেয়ার হাসপাতালের ২০টির সবকটিতে, এ এম জেড হাসপাতালের ১০টি নয়টিতে, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালের ৮টির ছয়টিতে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২৪টি শয্যার তেইশটিতে। এর বাইরে ঢাকার অন্যান্য হাসপাতালের চিত্র প্রায় একই।
Leave a Reply