জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত নায়িকা তমা মির্জা ও তার স্বামী হিশাম চিশতীর মামলা এখন শোবিজের আলোচিত ঘটনা।
যৌতুক, নির্যাতন এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে গেলো ৫ ডিসেম্বর মামলা করেছেন তমা। অন্যদিকে মারধর ও হত্যা চেষ্টার অভিযোগ এনে পরদিন অর্থাৎ ৬ ডিসেম্বর মামলা করেন এই অভিনেত্রীর স্বামী হিশাম চিশতী। মামলা করে কানাডা চলে গেছেন হিশাম।
আর সেখান থেকেই তমা মির্জার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন। এতোদিন সব চুপ থাকলেও এবার মুখ খুললেন তমা। শনিবার (২৬ ডিসেম্বর) রাত ১০টার দিকে নিজের ফেসবুক আইডি থেকে লাইভে আসেন তিনি। এ সময় স্বামী হিশাম চিশতীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে ধরেন তমা মির্জা।
তমা জানান, এক বন্ধুর মাধ্যমে হিশামের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। হিশামের ছোট ছোট অনেক বিষয় তমার মন গলায়। খুব অল্প সময়ের পরিচয়ে তমার মনে জায়গা করে নেন হিশাম। স্বল্পদিনের পরিচয়েই বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন তারা। তমা মির্জার স্বামী হিশাম চিশতী কানাডার টরন্টোতে থাকেন। সেখানে তিনি আবাসন ব্যবসা ও রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আছেন। তিনি কানাডায় নির্বাচন করেছিলেন। সেটা চাইলে যে কেউ করতে পারে। বাংলাদেশে মতো কঠিন নয় যোগ করে বলেন তমা।
তিনি বলেন, স্ত্রীর প্রতি প্রতিটি স্বামীর দায়িত্ব রয়েছে। স্ত্রীর খরচ তো স্বামীই বহন করবে সেটি নিয়ে ফেসবুকে কথা বলা কতটুকু যুক্তি সঙ্গত? হিশাম বিভিন্ন জায়গায় বলেছেন সে নাকি আমাকে ২০ লাখ টাকা ধার দিয়েছেন তার প্রমাণ কোথায়? কেউতো এতোগুলো টাকা হাতে দেয় না। কিছু না কিছু প্রমাণ অবশ্যই আছে সেই প্রমাণ প্রকাশ্যে আসুক।
তমা বলেন, এরপর যদি হিশাম আমার আর কোনো ব্যক্তিগত ছবি বা বিষয় নিয়ে বাড়াবাড়ি করে বা প্রকাশ করে তাহলে আমি যদি আত্মহত্যা করি তার জন্য হিশাম দায়ী থাকবে। হিশাম ফেসবুকে আমাকে নিয়ে নোংরা পোস্ট দিতো। সে আমার কাছে এসবের জন্য মাফও চেয়েছে। বলেছে, আর কখনও আমাকে নিয়ে বাজে পোস্ট করবে না।
ডিভোর্স নিয়ে নায়িকা বলেন, ব্যক্তিগত বিষয়টি ব্যক্তিগত রাখতে চেয়েছিলাম। প্রকাশ্যে আসুক কখনোই চাইনি। এখন ব্যক্তিগত বিষয়ে কথা বলতে বাধ্য হচ্ছি। ২০১৯ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর প্রথমবার ডির্ভোস ফাইল করি। ফাইলে সব কারণ উল্লেখ আছে। আমার শ্বাশুড়ি কিছু দিন আগে মারা গেছেন। তিনি অনেক অসুস্থ ছিলেন হুইল চেয়ারে বসে চলাফেরা করতেন। সে অসুস্থ শরীর নিয়ে আমার বাবার বাসায় এসে আব্বু-আম্মুর কাছে অনুরোধ করেন যে, তিনি বেঁচে থাকতে তমার ডিভোর্স দেখতে পারবেন না, মেনে নিতে পারবেন না। আমি মৃত্যুপথযাত্রী অনুরোধ করছি আমার মুখের তাকিয়ে হলেও ডিভোর্স দিও না তমা। তখন মা আমাকে অনেক বুঝিয়ে শ্বশুরবাড়ি পাঠান। ফের সংসার শুরু করি। হিশামকে আরেকটা সুযোগ দেই। এরপরও পরিবর্তন না পেয়ে দুইবার ডিভোর্স নিতে গিয়েছি। শেষবার হিশাম তার পছন্দের আইনজীবীর কাছে নিয়ে যান ডিভোর্সের জন্য। সেখানে গিয়ে হিশাম তার আইনজীবীকে মারধর করেন।
হিশাম তাকে নিয়মিত মারধর করতো দাবি করে তমা বলেন, অমানবিক নির্যাতনের কারণে বেশ কিছু দিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। হাসপাতাল থেকে বাসায় এনে আমাকে আটকিয়ে রাখেন। সেখান থেকে অনেক কষ্ট করে পালিয়ে চলে আসি। পুরো শরীর জুড়ে নির্যাতনের চিহৃ যা পুলিশ দেখেছেন। পুলিশ আমাকে মামলা করতে বলেছিল। আমি তা করিনি। তার ভালোর জন্যই আমি মামলা করিনি। করলে হয়তো আজ আমাকে এতো কষ্ট পেতে হতো না।
বিদেশে নিয়ে তার পেছনে স্বামীর টাকা খরচের বিষয়ে এই নায়িকা বলেন, সে আমাকে বিদেশ নিয়ে যায়নি। আমি একটি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে গিয়েছিলাম। স্বামী হিসেবে সে আমার সঙ্গে গিয়েছিল। তাকে নাগরিকত্বের জন্যেও বিয়ে করিনি। যদি তাই করতাম তাহলে গত দুই বছরেও কেন আমি নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করলাম না? এখনও দেশে কেন? সে সরকারের ৪৫ হাজার ডলার ট্যাক্স ফাঁকি দিয়েছে। গাড়ি বিক্রি করে আমাকে সে টাকা পরিশোধ করতে বলতো। আমি রাজি না হওয়ায় সে আমাকে মারধর করেছে। স্ত্রী হিসেবে আমি রাজি হতাম স্বামীর বিপথে পাশে থাকা আমার দায়িত্ব। যে মানুষটি আমার পরিবার নিয়ে নোংরা নোংরা কথা বলে আমাকে নিয়মিত নির্যাতন করে সেই মানুষটিকে কিভাবে হেল্প করবো আপনারই বলেন?
লাইভে তমা বলেন, মামলায় সে বলেছে আমি তাকে হত্যা করতে চেয়েছি। তার পরিবার ও বন্ধুরা আমাকে বলেছে সে মাত্র ৫ মিনিটের জন্য আমার সঙ্গে কথা বলতে চায়। পরের দিন দুই পরিবার নিয়ে বসে ডিভোর্স হওয়ার কথা ছিল। তখন প্রায় রাত ৩টা, সে আমার বাসায় আসে। এসেই সে আমার ফোন নিয়ে নেয়। পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করে দেয়। সে নিজেই আমার ফেসবুক আইডি থেকে আজেবাজে পোস্ট দেওয়া শুরু করে। তখন তার পকেটে ৪০টির মতো ঘুমের ওষুধ ছিল। মাতাল অবস্থায় ছিল। ওর ফ্যামিলিকে ফোন করে এসব জানালে তখন তারা বলে, আমরা ওকে আটকাতে পারি নাই। সে যা মন চায় করুক। আমরা কিছু জানি না। তখন আমি ৯৯৯ এ ফোন করে পুলিশের সাহায্য চাই। অথচ সে বলেছে আমরা নাকি মেরে তার হাত পা ভেঙে দিয়েছি। হিশাম সিএনজি করে দারোয়ান নিয়ে এসেছেন অথচ বলছেন ড্রাইভার নিয়ে এসেছেন। পুলিশ এসে সব কিছু নিয়ন্ত্রণে আনেন। তাকে মারতে চাইলে ৯৯৯ এ কেন কল দেবো? তখন তিনি পুলিশের সঙ্গে গেলেন না কেন? বিষয়টি পুলিশকে অবগত করলেন না কেন? পুলিশ চলে যাবার পর ফের বাবা মায়ের সামনে মারধর করলেন কেন পুলিশ এনেছি। যখন আমাকে রক্ষা করতে আব্বু-আম্মু আসলেন তখন তাদের গায়েও হাত তুলেন। আম্মুর পিট জুড়ে আঘাতের চিহৃ। তিনি বলেছেন তাকে নাকি মধ্যযুগীয় কায়দায় মেরেছি। যদি মেরে থাকি তাহলে সে চিকিৎসা না নিয়ে কিভাবে দেশ ত্যাগ করেন? হিশাম বিচ্ছেদ চাইলে ঘটনা এতো দূর আসে না। যে অপরাধী তার শাস্তি হওয়া উচিত। অনেক প্রমাণ আছে। মামলা ওঠে নেওয়ার জন্য অনেকভাবে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। নানা কারণে অত্যাচারের শিকার হয়ে মামলা করতে বাধ্য হই।
২০১৯ সালের ৭ মে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক হিশাম চিশতীকে বিয়ে করেন তমা মির্জা।
Leave a Reply