1. admin@banglahdtv.com : Bangla HD TV :
সোমবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:১৬ অপরাহ্ন

কী কারণে মিয়ানমারে অভ্যুত্থান, এরপরে কী ঘটবে

Coder Boss
  • Update Time : সোমবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০২১
  • ৩৬২ Time View

মিয়ানমারে ঠিক এ সময়টাতেই দেশটির সামরিক বাহিনীর অভ্যুত্থান ও ক্ষমতা দখলের ঘটনা ঘটলো? এর পরই বা কী ঘটবে? বিশ্লেষকরা এসব প্রশ্নেরই জবাব খুঁজেছেন এখন। সোমবারই অং সান সুচির রাজনৈতিক দল এনএলডির নির্বাচনী বিজয়ের পর ক্ষমতায় তাদের দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু করার কথা ছিল। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী যদিও গেল ১০ বছর ধরেই বেসামরিক সরকারের হাতে ক্রমে ক্রমে ক্ষমতা ছেড়ে দিচ্ছিল – কিন্তু পর্দার আড়ালে তারা দেশটির ওপর কড়া নিয়ন্ত্রণ ঠিকই বজায় রেখেছিল। দেশটির সংবিধানেও এর নিশ্চয়তা বিধান করা হয়েছে। পার্লামেন্টের এক-চতুর্থাংশ আসন এবং সবচেয়ে ক্ষমতাধর মন্ত্রণালয়গুলো এখনো সামরিক বাহিনীর হাতে। ঠিক এখনই অভ্যুত্থান হলো কেন? বিবিসির দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সংবাদদাতা জোনাথন হেড বলছেন, সোমবারই নির্বাচনের পর পার্লামেন্টের প্রথম অধিবেশন বসার কথা ছিল এবং তাতে নির্বাচনের ফল পূর্ণতা পেতো – যা এখন আর হবে না। নভেম্বরের ওই নির্বাচনে এনএলডি ৮০ শতাংশেরও বেশি ভোট পায়। রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর গণহত্যার অভিযোগের পরেও এ দলটি এখনও মিয়ানমারে জনপ্রিয়। ভোটের পর পরই জালিয়াতির অভিযোগ তোলে সামরিক বাহিনী। এক বছরের জরুরি অবস্থা জারিকে যৌক্তিকতা দেবার জন্য নতুন ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের স্বাক্ষরিত বিবৃতিতেও এ অভিযোগটি ফের বলা হয়েছে।  বিবৃতিতে বলা হয়, ৮ নভেম্বরের নির্বাচনে ভোটার তালিকায় যে গুরুতর অনিয়ম ছিল – তার সমাধান করতে নির্বাচন কমিশন ব্যর্থ হয়েছে। যদিও এ অভিযোগের পক্ষে প্রমাণ দেয়া হয়েছে অল্পই। মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের উপপরিচালক ফিল রবার্টসন বলেন, অং সান সুচি স্পষ্টতই নির্বাচনে বিপুল বিজয় পেয়েছেন। নির্বাচনী জালিয়াতির অভিযোগগুলো অনেকটা ট্রাম্পসুলভ – এসব অভিযোগের সপক্ষে কোনও প্রমাণ ছিল না। তিনি বলেন, এই ক্ষমতা দখলের ব্যাখ্যা দেয়া কঠিন। নভেম্বরের নির্বাচনে সামরিক বাহিনী-সমর্থিত ইউনিয়ন সলিডারিটি এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (ইউএসডিপি) ভোটের খুব সামান্য অংশই পেয়েছে। কিন্তু তার পরও সামরিক বাহিনী এখনো মিয়ানমারে সরকারের ওপর ব্যাপক প্রভাব রাখতে সক্ষম। কারণ, ২০০৮ সালে সামরিক শাসনের সময় যে বিতর্কিত সংবিধানটি তৈরি হয়েছিল – তাতে সামরিক বাহিনীকে পার্লামেন্টের এক-চতুর্থাংশ আসন দেয়া হয়।

অন্যদিকে প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্র এবং সীমান্ত বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণও তুলে দেয়া হয় সামরিক বাহিনীর হাতে। সেই সংবিধান যতদিন বহাল আছে, ততদিন সামরিক বাহিনীর হাতেও নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা থেকে যাচ্ছে।এখন প্রশ্ন হলো, নভেম্বরের নির্বাচনে বিপুল বিজয়ের ফলে এনএলডি কি সেই সংবিধান পরিবর্তনের ক্ষমতা পেয়ে যেতো? জোনাখন হেড বলছেন, তেমন সম্ভাবনা ছিল খুবই কম। কারণ সংবিধান বদলাতে হলে পার্লামেন্টের ৭৫ শতাংশ সমর্থন দরকার। আর, সামরিক বাহিনীর হাতে যদি ২৫ শতাংশ আসন থাকে – তাহলে তা প্রায় অসম্ভব।

সাবেক সাংবাদিক এবং প্রযুক্তিবিদ আয়ে মিন থান্ট আভাস দিচ্ছেন, এর পেছনে হয়তো আরেকটা কারণ থাকতে পারে। সেটি হলো: নির্বাচনের এই ফলাফল সেনাবাহিনীকে লজ্জায় ফেলে দিয়েছে। তারা আশা করেনি যে তারা এভাবে হারবে। তিনি বলেন, যেসব লোকের পরিবারের সদস্যরা সামরিক বাহিনীতে আছে – এমনকি তারাও তাদের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। তবে এটা বলতেই হবে যে এর চেয়ে অনেক বড় কিছু কারণও আছে। আয়ে মিন থান্ট বললেন, আপনাকে বুঝতে হবে সামরিক বাহিনী মিয়ানমারে তাদের অবস্থানকে কীভাবে দেখে। আন্তর্জাতিক মিডিয়া অং সান সুচিকে দেশের ‘মা’ হিসেবে দেখতে অভ্যস্ত। তবে সামরিক বাহিনী নিজেদের মনে করে তারাই এ দেশের পিতা।

অনেকেই বুঝতে পারছেন না বাস্তবিক, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ঠিক কেন এ ঘটনা ঘটালো – তা বিশেষজ্ঞরাও নিশ্চিতভাবে বলতে পারছেন না। কারণ, এতে তাদের যে বিশেষ কোনও লাভ হবে – তা মনে হচ্ছে না।

সিঙ্গাপুরের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এশিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ফেলো জেরার্ড ম্যাককার্থি বলেন, এটা মনে রাখতে হবে যে মিয়ানমারের বর্তমান পদ্ধতি সেনাবাহিনীর জন্য খুবই সুবিধাজনক। তাদের কমান্ড কাঠামোর সম্পূর্ণ স্বায়ত্বশাসন আছে, তাদের বাণিজ্যিক স্বার্থসমূহে বেশ বড় পরিমাণ আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ আছে, যুদ্ধাপরাধের বিচারের হাত থেকে রাজনৈতিক সুরক্ষাও আছে।

তার মতে, তাদের কথা মতো এক বছরের জন্য ক্ষমতা দখল করায় তারা চীনা-নয় এমন আন্তর্জাতিক অংশীদারদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে, সামরিক বাহিনীর বাণিজ্যিক স্বার্থও এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, এবং যারা সুচি ও এনএলডিকে আরেক মেয়াদের জন্য ভোট দিয়েছে সেই লক্ষ লক্ষ লোকের দিক থেকে প্রতিরোধের সম্ভাবনা উস্কে দেবে। তিনি বলেন, সামরিক বাহিনী হয়তো ভবিষ্যৎ নির্বাচনে ইউএসডিপির অবস্থা ভালো হবে এমন আশা করছে, তবে এমন পদক্ষেপের ঝুঁকিও কম নয়।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ফিল রবার্টসন বলছেন, সামরিক বাহিনীর এ পদক্ষেপ মিয়ানমারকে আবার একঘরে রাষ্ট্রে পরিণত করা এবং জনগণকে ক্রুদ্ধ করে তোলার ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে। আমার মনে হয় না মিয়ানমারের জনগণ এটা বিনা প্রশ্নে মেনে নেবে। তারা সামরিক শাসনে ফিরে যেতে চায় না। বরং তারা অং সান সুচিকে তা প্রতিরোধের এক হাতিয়ার বলে মনে করে। সূত্র: বিবিসি বাংলা।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2020 banglahdtv
Design & Develop BY Coder Boss