1. admin@banglahdtv.com : Bangla HD TV :
রবিবার, ১৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:২৫ অপরাহ্ন

আলজাজিরার প্রতিবেদন সরিয়ে নিতে কি গুগল ও ফেসবুক বাধ্য?

Coder Boss
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২১
  • ৩৯৯ Time View

কাতারভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আলজাজিরার তৈরি ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ নামে একটি তথ্যচিত্র সরিয়ে ফেলতে গুগল ও ফেসবুককে বিটিআরসি যে আবেদন জানিয়েছে তা মানতে প্রতিষ্ঠান দুটি আইনগত ভাবে বাধ্য নয়। একথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিটিআরসি। সংস্থাটি বলছে, আইনগত বাধ্যবাধকতা না থাকলেও একটা নৈতিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

সংস্থাটির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র বলেন, ‘ওইভাবে বাধ্যবাধকতা নেই। তবে তাদের একটা কোড অব কন্ডাক্ট আছে। কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড আছে।’ তিনি বলেন, যেকোনো দেশের বিচারালয়ের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন- তাদের কন্ডাক্টের আওতায় আছে। ‘সেই অর্থে একটা নৈতিক বাধ্যবাধকতা তো থাকেই,’ বলেন তিনি।

এর আগে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান এবং তার ভাইদের কর্মকাণ্ড নিয়ে আলজাজিরা টেলিভিশন যে প্রতিবেদন প্রচার করেছে, বুধবার বিকেলে হাইকোর্ট সেই প্রতিবেদন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ও সব ধরনের সামাজিক মাধ্যম থেকে অবিলম্বে সরাতে বিটিআরসিকে নির্দেশ দেয়। যার জের ধরেই ইন্টারনেট থেকে আলজাজিরার তথ্যচিত্রের ভিডিওটি সরিয়ে ফেলার জন্য গুগল এবং ফেসবুকের সাথে যোগাযোগ করে অনুরোধ জানায় বিটিআরসি।

কাতারভিত্তিক টেলিভিশনটির এই প্রতিবেদন নিয়ে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশে। ইস্যুটি দেশের আদালত পর্যন্ত গড়ায়। সুব্রত রায় মৈত্র বলেন, যেহেতু তাদের সাথে বাংলাদেশের কোনো আইনি চুক্তি বা বাধ্যবাধকতা নেই, এজন্য তাদের অনুরোধ করা হবে তারা যাতে আদালতের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে।

তবে বিটিআরসির অনুরোধে যদি এই দুটি সংস্থা কোনো সাড়া না দেয় সেক্ষেত্রে কী করা হতে পারে প্রশ্ন করা হলে সুব্রত রায় মৈত্র বলেন, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের সরকার এবং আদালতের সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয় রয়েছে। তিনি বলেন, যদি তারা সরিয়ে ফেলতে রাজি না হয় তাহলে সে সিদ্ধান্তটি সরকার এবং আদালতকে জানিয়ে দেয়া হবে। তাদের কাছ থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে সেটিই বাস্তবায়ন করা হবে।

সুব্রত রায় মৈত্র বলেন, ‘যেহেতু আমাদের সেই কারিগরি সক্ষমতা নেই এগুলো বন্ধ করার, সেহেতু বাধ্য হয়ে আমরা তাদের অনুরোধ জানাবো।’ এ বিষয়ে বিটিআরসির পক্ষ থেকে আইনি বিষয়গুলোর দায়িত্বে থাকা আইনজীবী খন্দকার রেজা-ই-রাকিব বলেন, আদালত তার নির্দেশনায় বিটিআরসিকে বলেছে, তার আইনি ক্ষমতা ব্যবহার করে এবং প্রয়োজনে প্ল্যাটফর্মগুলোর সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে কেন্দ্রীয়ভাবে প্রতিবেদনটি নামিয়ে নিতে হবে।

তিনি বলেন, এক্ষেত্রে এই দুটি সংস্থার এথিক্যাল কমিটি দেখবে, এই প্রতিবেদনটি কোন দৃষ্টিকোণ থেকে করা হয়েছে, বাংলাদেশের আইনের কতটুকু লংঘন হয়েছে, এর বিশ্বাসযোগ্যতা কতটুকু এবং আলজাজিরার অতীত ইতিহাসের বিষয়গুলো বিবেচনা করে নামিয়ে নেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।

খন্দকার রেজা-ই-রাকিব বলেন, এর আগের অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, এ পর্যন্ত টুইটার, ইউটিউব বা ফেসবুক যখন কোনো বিষয় সম্পর্কে আদালতের কোনো নির্দেশনার কথা জেনেছে তখন সেটা আবেদনের প্রেক্ষিতে নামিয়ে নেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রেও সেটাই হবে বলে ধারণা করছেন তিনি।

আইনে কী আছে?
করপোরেট আইন বিশেষজ্ঞ ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইমতিয়াজ ফারুক বলেন, নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বিটিআরসিকে, কোনো প্রতিষ্ঠানকে নয়। তাই এটা মানা না মানার প্রশ্নটি আসে না। তবে আদালত তার নির্দেশনায় এরই মধ্যে বলেছে, এই কন্টেন্ট বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়াচ্ছে। আর বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো অপরাধ। তিনি বলেন, তবে কোনো প্লাটফর্ম যতক্ষণ পর্যন্ত এটা না জেনে ওই কন্টেন্ট প্রচার করবে ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের কোনো দায় থাকবে না।

বিটিআরসি টেক ডাউন রিকোয়েস্ট বা সরিয়ে নেয়ার আবেদনের মাধ্যমে আদালতের নির্দেশনা গুগল এবং ফেসবুককে জানানোর পরও যদি সেটি থাকে তাহলে সেটি বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় অপরাধ বলে গণ্য হবে বলে জানান তিনি।  ইমতিয়াজ ফারুক বলেন, বাংলাদেশে যদি ওই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অফিস থাকে তাহলে তাদেরকে এই অপরাধের আওতায় আনা যাবে। ‘যদিও সরাসরি কোনো বাধ্যবাধকতা নেই, তবে ইনডিরেক্ট একটা চাপ ওদের উপর আছে।’

তিনি বলেন, বাংলাদেশে সংগঠিত কোনো অপরাধ যদি বিদেশের কেউও করে থাকে তাহলেও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় অতিরাষ্ট্রিক প্রয়োগ দেয়া রয়েছে। অর্থাৎ অপরাধী দেশের সীমার বাইরে থাকলেও তাকে আইনের আওতায় আনা যাবে। সেক্ষেত্রে সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা হওয়ার পর এর সমন বাংলাদেশের দূতাবাসের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কাছে পৌঁছানো সম্ভব বলে জানান তিনি। আর সমন পৌঁছানোর পরই মামলার প্রক্রিয়া শুরু হয় বলে জানান এই আইনজীবী।

রিটে কি বলা হয়েছিল?
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান আজিজ আহমেদ ও তার ভাইদের কর্মকাণ্ড নিয়ে আলজাজিরা সম্প্রতি ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ নামে একটি তথ্যচিত্র প্রচার করে যাতে বেশ কিছু দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়েছে। এনিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি হলে বাংলাদেশে আলজাজিরার সম্প্রচার বন্ধের আদেশ চেয়ে ৮ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে দায়ের করা এক রিট আবেদনের প্রেক্ষাপটে আবেদনটি বিবেচনার যোগ্য কি-না তা নির্ধারণে, ছয়জন অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগের নির্দেশ দেয় ঢাকার একটি আদালত। বুধবার আদালত যে ছয়জন অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ করেছে, তারা হচ্ছেন এ জে মোহাম্মদ আলী, আব্দুল মতিন খসরু, শাহদীন মালিক, ফিদা এম কামাল, প্রবীর নিয়োগী এবং কামাল উল আলম। আদালতে ওই রিট দায়ের করেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী এনামুল কবির ইমন। রিটে বাংলাদেশে আলজাজিরার সম্প্রচার বন্ধের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

সেই সাথে ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ নামে সম্প্রচারিত প্রতিবেদনটি ইউটিউব, ফেসবুক ও টুইটার থেকে অপসারণের নির্দেশনাও চাওয়া হয়। তথ্যচিত্রটি যেহেতু ১০ দিন আগে প্রচারিত হয়েছে, তার ফলে এখন নতুন করে স্থগিতাদেশ দেবার আবেদন জনস্বার্থে গ্রহণযোগ্য কিনা, এবং বিদেশী প্রচারমাধ্যমের সম্প্রচার বন্ধের ক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশনা কার্যকর করা যাবে কি না এসব বিষয়ে আইনজীবীদের মতামত জানতে চেয়েছে আদালত।

পহেলা ফেব্রুয়ারি রাতে আলজাজিরা ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ শিরোনামে এই অনুসন্ধানী প্রতিবেদনটি প্রচার করে।

বাংলাদেশ সরকার ও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে প্রতিবেদনটি ‘উদ্দেশ্যমূলক’ এবং ‘ভিত্তিহীন’।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর আইএসপিআর এই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়ে নিন্দা জানিয়েছে।

প্রতিবেদনটি প্রচারিত হওয়ার পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন জানিয়েছিলেন, আলজাজিরার বিরুদ্ধে আইনগত কী ব্যবস্থা নেয়া যায়, সরকার তা খতিয়ে দেখছে।

সূত্র : বিবিসি

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2020 banglahdtv
Design & Develop BY Coder Boss