ভারতের মহারাষ্ট্রের কোভিড পরিস্থিতির ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। দৈনিক গড়ে প্রায় দুই হাজার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে করোনাভাইরাসে। সরকারি পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে উঠে আসছে, ভারতে মোট আক্রান্তের ৬০ শতাংশই এই রাজ্যের। মহারাষ্ট্র প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাজ্যের প্রতিটি জেলাকে বলা হয়েছে, করোনা ঠেকাতে আংশিক লকডাউন বা রাতের কারফিউ জারি করা যেতে পারে। এমন নির্দেশনার পর নাগপুরে লকডাউন জারি করা হয়েছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এ খবর জানিয়েছে।
মহারাষ্ট্র রাজ্য সরকারের তরফে ঘোষণা করা হয়েছে, আগামী ১৫ মার্চ থেকে ২১ মার্চ পর্যন্ত লকডাউন থাকবে নাগপুরে। মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে ইঙ্গিত দিয়েছেন, আগামী দিনে রাজ্যের আরো কয়েকটি অংশে লকডাউন জারি হতে পারে। তবে লকডাউনের মধ্যে খোলা থাকবে ফলের দোকান, দুধের বুথ। অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবাও চালু থাকবে। বৃহস্পতিবার উদ্ধব ঠাকরে কোভিডের ভ্যাকসিন নেন। তার পরে বলেন, মনে হচ্ছে, আগামী দিনে আরো কয়েক জায়গায় লকডাউন করতে হবে।
করোনা অ্যাকটিভ রোগীর সংখ্যাও হঠাৎ করে বেড়েছে। প্রায় পাঁচ হাজার করে ভাইরাস সক্রিয় রোগী ধরা পড়ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ভারতে এখন ভাইরাস সক্রিয় রোগীর সংখ্যা প্রায় দুই লাখ। কনট্যাক্ট ট্রেসিং বাড়লে আরো বেশি সংখ্যক কোভিড অ্যাকটিভ রোগীকে চিহ্নিত করা যাবে। অ্যাকটিভ কেসের হার নিয়ন্ত্রণে আনা গেলে সংক্রমণের হারও কমে যাবে।
মহারাষ্ট্রে করোনা সংক্রমণ যে হারে বাড়ছে তাতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারও ‘অত্যন্ত উদ্বিগ্ন’। বৃহস্পতিবার নীতি আয়োগের সদস্য ভিকে পল একথা জানান। তিনি বলেন, দেশকে যদি কোভিড মুক্ত করতে হয়, তাহলে মহারাষ্ট্রের সংক্রমণকে হালকাভাবে নিলে চলবে না। ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, মহারাষ্ট্রের ১০টি গুরুত্বপূর্ণ শহরের মধ্যে আটটিতেই বহু সংখ্যক মানুষ কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন। শহরগুলো হলো পুনে, নাগপুর, থানে, মুম্বাই, অমরাবতী, জলগাঁও, নাসিক এবং আরোঙ্গবাদ।
অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনেই আস্থা রাখছে ইউরোপ : ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের ওষুধ নিয়ন্ত্রক বলছে অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনার টিকায় ঝুঁকির চেয়ে সুবিধা বেশি। ফলে টিকাটি গ্রহণের পর রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনার তদন্ত চললেও টিকাটি প্রয়োগ অব্যাহত রাখা হবে। ইউরোপীয়ান মেডিসিন এজেন্সি (ইএমএ) বলছে, অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার কারণেই এই সমস্যা হয়েছে এমন কোনো ইঙ্গিত এখনো নেই। তারপরও এই উদ্বেগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ডেনমার্ক ও নরওয়ে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে সাময়িক সময়ের জন্য অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রয়োগ স্থগিত করেছে। ডেনমার্কে কয়েকজন ভ্যাকসিন গ্রহীতার রক্তে জমাট বাঁধা ও একজনের মৃত্যুর পর এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। আরো বেশ কয়েকটি দেশ একই পদক্ষেপ নিয়েছে। এরপরই ইএমএর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রক্ত জমাট বাঁধার খবর মিললেও এখন পর্যন্ত এর সাথে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার কোনো সম্পর্ক পাওয়া যায়নি। সে কারণে টিকাটির সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার তালিকায় রক্ত জমাট বাঁধার কথা উল্লেখ করা হয়নি। তবে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়ে নেতিবাচক এই খবরের কারণে ইউরোপে টিকাটি গ্রহণে মানুষের আগ্রহের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। আর তা হলে ইউরোপে টিকাদান কর্মসূচি নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।
থাইল্যান্ডে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাদান স্থগিত : এ দিকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন দিয়ে টিকা দান শুরুর পরিকল্পনা স্থগিত করেছে থাইল্যান্ড। ভ্যাকসিনটি প্রয়োগের পর রক্ত জমাট বাঁধার খবর সামনে আসায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। শুক্রবার টিকা দান শুরুর কথা থাকলেও দেশটির প্রধানমন্ত্রী এই কর্মসূচি বাতিল করেছেন।
৪ জুলাইয়ের আগে আমেরিকাকে করোনামুক্ত করতে চান বাইডেন : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, করোনাভাইরাসের টিকা দেয়া হলে আগামী ৪ জুলাই আমেরিকার মানুষ ছোট আকারে মিলিত হওয়ার সুযোগ তৈরি হওয়ার একটি ‘ভালো সম্ভাবনা’ আছে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের প্রথম প্রাইমটাইম ভাষণে তিনি এমন মন্তব্য করেন। তবে তিনি এমন দিনে ভাষণ দিলেন এক বছর আগে এই দিনেই কোভিড-১৯-কে মহামারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। বাইডেন সব রাজ্যকেই আগামী ১ মের মধ্যে তাদের প্রাপ্তবয়স্ক সক্ষম সব নাগরিককে টিকা দেয়ার ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমরা যদি ৪ জুলাইয়ের মধ্যে এটা একসাথে করতে পারি, তাহলে আপনার নিজের, পরিবারের ও বন্ধুদের স্বাধীনতা দিবস উদযাপনে মিলিত হওয়ার ভালো সুযোগ আছে।’ তিনি বলেন, তার দেশ শুধু স্বাধীনতা দিবস উদযাপনেই নয় বরং করোনাভাইরাস থেকেই স্বাধীনতা অর্জনের জন্য সক্ষম হবে।
করোনাকালে স্কুল বেশি বন্ধ রেখেছে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো : পানামার আট বছরের শিশু ব্রিথানির এক বছর ধরে পড়াশোনা প্রায় বন্ধ। এই এক বছর স্কুল বন্ধ থাকায় ক্লাস হয়নি। অনলাইন ক্লাসও সহজে করা যায়নি। ব্রিথানির মতো পানামার ৮ লাখ ৯০ হাজার শিশুর শিক্ষাজীবন করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জাতিসঙ্ঘের শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) বলছে, ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে এ বছরের মার্চ পর্যন্ত গত এক বছরে ১৪টি দেশে স্কুল বন্ধ রয়েছে। এসব দেশের দুই-তৃতীয়াংশই লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় দেশ।
ইউনিসেফের হিসাবে, করোনা মহামারীতে বিশ্বে ১৬ কোটি ৮০ লাখ শিশু ক্ষতির শিকার। এর মধ্যে লাতিন আমেরিকার শিশু ৯ কোটি ৮০ লাখ। সেখানে বছরে গড়ে ১৯০ দিনের মধ্যে শিশুরা ১৫৮ দিনই স্কুলে ক্লাস করতে পারেনি। ইউনিসেফ জানিয়েছে, ১৪ দেশের মধ্যে পানামা বেশির ভাগ সময় স্কুল বন্ধ রেখেছে। এরপর বেশি সময় ধরে স্কুল বন্ধ রয়েছে এল সালভাদর, বাংলাদেশ ও বলিভিয়াতে। এ বছর ইকুয়েডর ও পেরুতে স্কুলে ক্লাস শুরু হতে যাচ্ছে। ইউনিসেফ বলছে, বিশ্বে ২১ কোটি ৪০ লাখ শিশু অথবা প্রতি সাতজনে একজন তিন-চতুর্থাংশের বেশি ক্লাস করতে পারেনি। বিশ্বে ৩০ লাখ শিশু স্কুল থেকে ঝরে পড়তে পারে।
Leave a Reply