হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির শায়খুল হাদিস আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী বলেছেন, যারা ধর্ম ও মানবতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে না, তারা জনগণের কাছে সবসময় ঘৃণিত ও প্রত্যাখ্যাত। তিনি বলেন, এ দেশ মুসলিমপ্রধান দেশ। এ দেশের পুলিশ গুলি করে নিরীহ মুসলমান হত্যা করবে, এটি বরদাশত করা যায় না। হত্যাকারীদের ব্যাপারে সুষ্ঠু তদন্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ঘোষিত দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশের অংশ হিসেবে শুক্রবার হাটহাজারী ডাকবাংলো চত্বরে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম, হাটহাজারী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও যাত্রাবাড়ীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মোদিবিরোধী আন্দোলনে পুলিশি হামলার প্রতিবাদ, নিহত ও আহতদের ক্ষতিপূরণ এবং হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
আল্লামা বাবুনগরী বলেন, ওলামা, মাদরাসার ছাত্র ও তৌহিদী জনতার ওপর পুলিশ গুলি চালিয়ে চরম ব্যর্থতা ও বর্বরতার পরিচয় দিয়েছে। তিনি বলেন, শহীদদের রক্ত কখনো বৃথা যেতে পারে না। খুনি মোদিকে খুশি করার জন্য যারা দেশের নিরপরাধ প্রতিবাদী নাগরিকদের হত্যা করতে দ্বিধা করে না, তারা জালিম ও অত্যাচারী। শহীদের রক্তের বিনিময়ে এ দেশে একদিন ইসলামের বিজয়-পতাকা উড়বেই, ইনশাআল্লাহ।
১১ জন বিশিষ্ট নাগরিকের বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে হেফাজত আমির বলেন, দেশপ্রেমিক ও ধর্মপ্রাণ প্রতিবাদী জনতার আন্দোলনের বিরুদ্ধে একদল গণবিচ্ছিন্ন তথাকথিত বিশিষ্ট নাগরিকের বিবৃতিকে আমরা অমানবিক, উস্কানিমূলক ও গণবিরোধী বলে সাব্যস্ত করছি। ওই বিবৃতি স্বৈরতান্ত্রিক ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদের নির্লজ্জ দালালির প্রমাণ বহন করে।
বাবুনগরী আরো বলেন, হেফাজতে ইসলামের আহ্বানে দেশব্যাপী পালিত শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ ও হরতালের কর্মসূচি চলাকালীন প্রতিবাদকারী আলেম সমাজ, মাদরাসার ছাত্র ও ধর্মপ্রাণ মানুষদের ওপর বিনা উস্কানিতে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালানোর পরিপ্রেক্ষিতে তীব্র গণপ্রতিরোধ গড়ে ওঠে। পুলিশের গুলিতে হত্যার নিন্দা না জানিয়ে একতরফাভাবে প্রতিবাদী জনতার গণপ্রতিরোধকে আপনারা তথাকথিত ‘তাণ্ডব’ আখ্যা দিয়ে গণবিরোধী অবস্থান নিয়েছেন।
বিক্ষোভ সমাবেশে হেফাজতের আমির বলেন, ইসলামবিদ্বেষ ও সেকুলার মতাদর্শে আপনারা এতই অন্ধ যে, আপনাদের বিবৃতিতে পুলিশের গুলিতে শহীদ হওয়া ২০ জন নাগরিকের প্রতি কোনো ধরনের মানবিক সমবেদনা প্রকাশ পায়নি। এজন্য ভবিষ্যতে আপনাদেরকে অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে, ইনশাআল্লাহ।
হেফাজতে ইসলাম হাটহাজারী উপজেলা শাখা সহ-প্রচার সম্পাদক মাওলানা ইন’আমুল হাসান ফারুকীর পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে হেফাজতের আন্দোলন দেশবিরোধী নয় বলেও উল্লেখ করা হয়। এ প্রসঙ্গে হেফাজত আমির দাবি করেন, আমরা দেশকে ভালোবাসি। দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আমরা কুনূতে নাজিলা ও জুমার খুৎবায় দেশের জন্য দোয়া করি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য ভারত সহযোগিতা করেছিল মন্তব্য করে আল্লামা বাবুনগরী বলেন, ভারত মূলত তার ভূরাজনৈতিক স্বার্থেই একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে আমাদের সহায়তা করেছিল। তাই বলে কি গোলামি ও তাঁবেদারি করে ভারতের ঋণ শোধ করতে হবে আমাদের? আমাদের জাতীয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা দিল্লির গোলামি করার জন্য এ দেশ স্বাধীন করেননি। আমাদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার, সার্বভৌমত্ব ও ইনসাফ কায়েম করার জন্যই তারা রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এ দেশ স্বাধীন করেছিলেন। বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্ক হতে হবে সম-মর্যাদার ভিত্তিতে। গোলামি ও তাঁবেদারি করলে আমাদের জাতিগত আত্মমর্যাদা ভূলুণ্ঠিত হয়। এই অবিসংবাদিত সত্য কথাটি আপনারা উপলব্ধি করার চেষ্ট করুন। এ দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দলমত নির্বিশেষে লড়াই করতে আপামর জনগণ সর্বদা প্রস্তুত আছে। কোনো অপশক্তির হুমকি-ধমকিকে নায়েবে রাসূল ওলামায়ে কেরাম ও তৌহিদী জনতা পরোয়া করে না।
নিহতদের ক্ষতিপূরণ দাবি করে আল্লামা বাবুনগরী বলেন, পুলিশের হামলায় যারা শহীদ হয়েছেন তাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। আহতদের সু-চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। যে ৩৬ জনের নামে মামলা হয়েছে তা-সহ হয়রানিমূলক মিথ্যা সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
হেফাজতে ইসলাম হাটহাজারী শাখার সভাপতি ও হাটহাজারী মাদরাসার সহকারী শিক্ষা সচিব মাওলানা শোয়াইব জমিরীর সভাপতিত্বে ও উপজেলা সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মাহমুদুল হোসাইন, যুগ্ম সম্পাদক মাওলানা এমরান সিকদার ও সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা কামরুল ইসলামের যৌথ সঞ্চালনায় এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হেফাজতের ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক মুফতী মুহাম্মদ আলী কাসেমী, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা নাছির উদ্দিন মুনির, কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মীর ইদ্রিস, কেন্দ্রীয় সহ-অর্থ সম্পাদক আহসান উল্লাহ, কেন্দ্রীয় সহ-ত্রাণ ও পূনর্বাসন সম্পাদক মাওলানা জুনাইদ বিন ইয়াহইয়া প্রমুখ।
এতে আরো বক্তব্য রাখেন হেফাজতে ইসলাম হাটহাজারী পৌরসভা শাখার সভাপতি মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম মেহেদী, সহ-সভাপতি মাওলানা হাফেজ আলী আকবর, হাটহাজারী উপজেলা সহ-সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আব্দুল্লাহ, পৌর সাধারণ সম্পাদক নূর মোহাম্মদ, মাওলানা সোহাইল চৌধুরী, মাওলানা হাফেজ আব্দুল মাবুদ, মাওলানা নজরুল ইসলাম, মাওলানা হাবিব উল্লাহ হাবিব প্রমুখ।
Leave a Reply