আলোচিত ‘শিশুবক্তা’ রফিকুল ইসলামের নামে গাজীপুরে রোববার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আরো একটি মামলা হয়েছে। গাজীপুরের বাসন থানা এলাকার মোস্তাফিজুর রহমান নামের এক ব্যক্তি মামলাটি দায়ের করেন। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপির) বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ফারুক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কিছু বিপদগামী ধর্মীয় লেবাসধারী লোক দেশের শান্তি ও সমৃদ্ধি বিনষ্ট করার লক্ষ্যে বদ্ধপরিকর। ‘শিশুবক্তা’ রফিকুল ইসলাম গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের নলজানি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে ‘মারকাজুল নূর আল ইসলামিয়া মাদরাসায়’ বসে দেশাদ্রোহী ও নাশকতার কার্যকলাপ চালায়। একই সাথে নাশকতা কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা করে। কিছু বক্তা ওয়াজ মাহফিলের নামে ধর্মীয় বক্তব্যের আড়ালে রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য দিয়ে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে আসছে। তাদের মধ্যে অন্যতম রফিকুল ইসলাম। তিনি গত ২৫ জানুয়ারি থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় তার বক্তব্যের মাধ্যমে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে অপমান, হেয় প্রতিপন্ন ও মানহানীকর বক্তব্য দেন।
এজাহারে আরো উল্লেখ করা হয়, দেশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে অপমানজনক বক্তব্য দিয়ে ফেসবুক, ইন্টারনেট ও ইউটিউবে আপলোড করার পরিপ্রেক্ষিতে দেশে বিরাজমান সহিংসতা ও অস্থিরতার মূল কারণ হিসেবে কাজ করেছে। তার এসব বক্তব্যের ভিডিও ইউটিউবে ‘ইসলামিক জীবন’ নামের ফেসবুক পেজ থেকে আপলোড করা হয়।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি’র) বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ফারুক জানান, রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে বাসন থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলাটি দায়ের করেন মোস্তাফিজুর রহমান।
উল্লেখ্য, গত বুধবার ভোররাতে আলোচিত ‘শিশুবক্তা’ রফিকুল ইসলাম মাদানীকে (২৬) নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা থানার লেটিরকান্দা এলাকার বাড়ি থেকে আটক করে র্যাব-১-এর সদস্যরা। ওই দিন রাতেই গাজীপুর মহানগরীর গাছা থানায় তাকে হস্তান্তর করা হয়। তার বিরুদ্ধে ওই থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বৃহস্পতিবার একটি মামলা দায়ের করা হয়।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, রাষ্ট্র তথা সরকারবিরোধী ও আইন-শৃঙ্খলা পরিপন্থী উস্কানি ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ডিজিটাল মাধ্যমে প্রদান করেন রফিকুল ইসলাম মাদানী। যা তার নির্দেশে ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ পায়। এসব উস্কানিমূলক বক্তব্যের কারণে তার অনুসারীরা গত ২৬ মার্চ ঢাকা বায়তুল মোকাররম মসজিদ, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও নাশকতা করে। এতে হতাহতের ঘটনাও ঘটে। গাজীপুর ছাড়াও তার বিরুদ্ধে ঢাকায় অপর একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ ইলতুৎমিশ জানান, বৃহস্পতিবার সকালে র্যাব-১-এর ডিএডি মো: আব্দুল খালেক গাছা থানায় বিতর্কিত বক্তা রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেন। তাকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
গ্রেফতারকৃত রফিকুল ইসলামকে বৃহস্পতিবার গাজীপুরে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো: শরিফুল ইসলামের আদালতে হাজির করা হলে আদালত শুনানি শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। জেলা কারাগারে দুই দিন থাকার পর শনিবার তাকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ স্থানান্তর করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে রফিকুল ইসলামের রিমান্ড চাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
Leave a Reply