ভারতের ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতি সমগ্র বিশ্বকে স্তম্ভিত করে দিয়েছে। ভারত এখন তীব্র করোনা সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করছে।
কিন্তু ভারতে এ মরণব্যাধির বিস্তার শুধু এ দেশটি জন্য নয় সমগ্র বিশ্বের সকল মানুষের জন্যই এক মহাসঙ্কট। ভারতের এ করোনা পরিস্থিতি সমগ্র বিশ্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। কারণ এ ভাইরাস কাউকে সংক্রমিত করার ক্ষেত্রে কোনো কিছুর তোয়াক্কা করে না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বিজ্ঞানী ডা: সৌম্য স্বামীনাথন বলেন, ‘ভাইরাস কাউকে সংক্রমিত করার ক্ষেত্রে সীমান্ত, জাতীয়তা, বয়স, লিঙ্গ বা ধর্মকে তোয়াক্কা করে না। ভারতে এখন যা ঘটছে, দুর্ভাগ্যবশত অন্য দেশগুলোতেও তা ঘটতে পারে।’
এ মহামারীর আবির্ভাব আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে কিভাবে সমগ্র বিশ্ব একে অপরের সাথে সংযুক্ত। যদি কোনো দেশে করোনার তীব্র সংক্রমণ দেখা যায়, তাহলে অন্যান্য দেশেও করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে।
ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা, বিভিন্ন টেস্ট আর কোয়রেন্টাইনও আরোপ করা হলেও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে। যদি কোনো ভ্রমণকারী এমন দেশ থেকে আসেন যেখানে করোনার সংক্রমণ খুব তীব্র, তাও অন্য দেশের মানুষকে সংক্রমিত করতে যথেষ্ট। ওই ব্যক্তির মাধ্যমেই সমগ্র দেশে করোনা সংক্রমিত হতে পারে।
সম্প্রতি ভারতের নয়াদিল্লি থেকে চীনের হংকংয়ে যাওয়া বিমানের ৫০ জন যাত্রী করোনা পরীক্ষায় পজিটিভ বলে শনাক্ত হয়েছে।
ভারতের এ তীব্র সংক্রমণ হারের সাথে আরো একটি উদ্বেগজনক বিষয় জড়িত, তা হলো করোনার নতুন প্রজাতি।
ভারতে করোনার একটি নতুন প্রজাতির আবির্ভাব হয়েছে, এর নাম বি.১.৬১৭। কেউ কেউ ধারণা করছেন করোনার এ নতুন প্রজাতিটি দু’বার রূপান্তরিত হয়ে ভয়াবহ সংক্রামক ভাইরাসে পরিণত হয়েছে। এ ভাইরাসের তীক্ষ্ণ অগ্রভাগগুলোতে (স্পাইক) দু’ধরনের বিবর্তন হয়েছে। কয়েকটি ল্যাব টেস্টে দেখা গেছে, নতুন এ করোনার প্রজাতিটি আগের করোনাভাইরাস থেকে বেশি সংক্রামক। আর এ ভাইরাসের মধ্যে এমন অ্যান্টিবডি আছে যার কারণে এ ভাইরাসকে প্রতিরোধ করাও কঠিন। এখন বিজ্ঞানীরা দেখছেন, এ ভাইরাসের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কতটা কমে।
করোনার জিনোম সিকুয়েন্স বের করার উদ্যোগ নেয়া ওয়েলকাম স্যানগার ইন্সটিটিউটের পরিচালক ডা: জেফ ব্যারেট বিবিসিকে বলেন, ‘আমি মনে করি না এমন কোনো প্রমাণ আছে যার মাধ্যমে এটা বলা যায় যে এ ভাইরাসের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন মৌলিক কাজ করবে না। আমি মনে করি, আমাদেরকে এ পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। এখানে আতঙ্কের কোনো কারণ নেই।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লকডাউন, সামাজিক দূরত্বের মতো পদক্ষেপ নেয়ার মাধ্যমে এবং ভ্যাকসিন প্রয়োগের মাধ্যমে এ করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। যদিও ভারতের মাত্র দু’শতাংশ লোক সম্পূর্ণ ভ্যাকসিন নিয়েছেন। আর ১০ শতাংশ লোককে দেয়া হয়েছে মাত্র এক ডোজ করে টিকা। তাদের আরো এক ডোজ টিকা বাকি আছে।
ভারতের পরিস্থিতি আমাদের এটাই বলে দিচ্ছে যে, আমাদের কেউই নিরাপদ হব না, যতক্ষণ না সবাই নিরাপদ হব।
সূত্র : বিবিসি
Leave a Reply