নিখোঁজের ১৮ ঘণ্টার মাথায় ২০ বছরের মামাতো ভাইয়ের ঘরের মেঝের গর্ত খুঁড়ে মিলল ১০ বছরের ফুফাতো বোনের লাশ। পুলিশের তিনটি তদন্ত সংস্থা লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠিয়েছে ময়নাতদন্তের জন্য। এ ঘটনায় নানী হালিমা খাতুনকে আটক করেছে পুলিশ।
পরিবার ও এলাকাবাসীর দাবি এবং পুলিশের ধারণা, ধর্ষণের পর লাশ গুম করতেই মাটির নিচে পুঁতে রেখে সেখানে বস্তাসহ রান্নাবান্নার সামগ্রী রাখা হয়েছিল।
দুপুরে রহিমা মায়ের কাছ থেকে ১০ টাকা নিয়ে পাশের দোকানে কিছু খাবার আনার জন্য যায়। এসময় দোকানে থাকা রাজা মিয়া (২০) রহিমাকে ৫০ টাকা দিয়ে সিগারেট আনার কথা বলে বাড়িতে ডাকে। রাজা মিয়াকে সিগারেট দিতে গিয়ে সেখানে ধর্ষণ কিংবা ধর্ষণচেষ্টার শিকার হয় রহিমা। এক পর্যায়ে সে চিৎকার করে ঘটনা বাড়ির লোকজনকে বলে দেয়ার কথা বললে রাজা মিয়া তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরো জানান, নানী হালিমা খাতুনের সহযোগিতায় নানীর ঘরের মেঝে খুঁড়ে সেখানে পুঁতে রাখে। পরে গর্তের ওপর ধানের বস্তা, বাক্স এবং রান্নাবান্নার সামগ্রী রাখে। এরই মধ্যে বুধবার রাতেই ৫ হাজার টাকা মূল্যের সাইকেল মাত্র ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি করে গা-ঢাকা দেয়।
এরই মধ্যে মাইকিংসহ ফেসবুকে প্রচারণা চালালেও রহিমার কোনো খোঁজ না মেলায় বৃহস্পতিবার সকালে রাজা মিয়ার থাকার ঘরে তল্লাশী চালায় এলাকাবাসী। এক পর্যায়ে তার নানীর ঘরে তল্লাশির সময় এলাকাবাসী দেখতে পায় নতুন মাটি খোঁড়া এবং তা ভরাট করে রাখা হয়েছে। পরে সেখানে বাক্স, ধানের বস্তাসহ অন্যান্য সামগ্রী সরিয়ে দেখতে পায় মাটি খুঁড়ে রাখা হয়েছে লাশ। পরে স্বজন ও এলাকাবাসী নিশ্চিত হয় লাশটি রহিমার।
পুলিশকে খবর দেয়া হলে মিঠাপুকুর থানা পুলিশ ছাড়াও সিআইডি ও পিবিআই যৌথভাবে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরীর পর ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে।
পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, এ ঘটনায় রাজা মিয়ার নানী হালিমা খাতুনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার কাছ থেকে এই হত্যাকাণ্ডের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, সুরতহাল রিপোর্টের সময় শিশু রহিমার গলায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। সে থেকে আমরা ধারণা করছি, শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যা করা হয়েছে।
তবে সুরতহাল রিপোর্টেও বিষয়ে আর কিছু বলতে রাজি হননি তিনি। তবে তিনি জানিয়েছেন, ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে কিনা সেটি আমরা নিশ্চিত বলতে পারবো ময়নাতদন্তের রিপোর্টের পর।
এ ঘটনায় মিঠাপকুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন শিশুটির বাবা রবিউল ইসলাম।
বালুয়ামাসিমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মইনুল হক জানান, ঘটনাটি মর্মান্তিক। আমরা অবিলম্বে রাজা মিয়াকে গ্রেফতার এবং জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।
রহিমার মা জোহরা বেগম জানান, আমার কাছ থেকে মেয়ে আমার টাকা নিয়ে গেলো। আর লাশ পাওয়া গেলো গর্তে। আমি রাজা মিয়া ও তার নানীর ফাঁসি চাই।
রহিমার দাদা আব্দুল কাদের জানান, বুজর্গ সন্তোষপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী ছিল রহিমা। বৃহস্পতিবার তার অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেয়ার কথা ছিল। তার নাতিকে হত্যাকারী রাজা মিয়া ও লাশ গুম চেষ্টায় জড়িত দাদি হালিমা বেগমের ফাঁসির দাবি করেন তিনি।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালেল ১৪ জুন রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার মিঠিপুর ইউনিয়নের রামনাথপুর উত্তরপাড়া গ্রামে আম খাওয়ার ছলে ডেকে নিয়ে আট বছরের শিশু তানজিলা ইয়াসমিন চুমকিকে (৮) ধর্ষনের পর হত্যা করে খাটের নিচে পুঁতে রাখা হয়েছিল। তিন দিন পর তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় গত বছর দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে অভিযুক্ত রিয়াদ প্রধানের ফাঁসি হয়।
আবারো একই ধরনের ঘটনা ঘটায় অভিভাবকমহলে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে।
Leave a Reply