কুষ্টিয়ার চিনিকলের গোডাউন থেকে প্রায় ৫৩ টন চিনির হিসেব পাওয়া যাচ্ছে না। যার বাজার মূল্য অন্তত ৩২ লাখ টাকা। এই ঘটনায় মিলের ভারপ্রাপ্ত গোডাউন কিপার ফরিদুল হককে সাময়িক বরখাস্ত করেছে মিল কর্তপক্ষ। বৃহস্পতিবার মিলের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাকিবুর রহমান খান এ আদেশে স্বাক্ষর করেন।
শনিবার ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাকিবুল জানিয়েছেন, এ ঘটনায় গোডাউন কিপারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একইসাথে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির তদন্তের প্রতিবেদনের পর পরবর্তি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি সাংবাদিকদের জানান।
মিলের বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়া চিনিকল সর্বশেষ আখ মাড়াই ও চিনি উৎপাদন করে ২০১৯-২০২০ মৌসুমে। ২০২০-২১ মাড়াই মৌসুম বন্ধ থাকায় চিনি উৎপাদন হয়নি। ফলে মিলের বিশালাকার গোডাউনে রাখা অবিক্রিত চিনি চলতি বছরের বিভিন্ন সময়ে বিক্রি হয়ে গোডাউন অনেকটা ফাঁকা হয়ে পড়েছে। গত বুধবার গোডাউন কিপার সংশ্লিষ্টদের নিয়ে গোডাউনের চিনির বস্তা গুনে দেখতে পান মিলের স্টকে যে পরিমাণ চিনি থাকার কথা এর থেকে ১০৫৪বস্তা চিনি কম। এই চিনির পরিমাণ ৫২.৭০ টন, যার বাজার মূল্য ৩২ লাখ টাকা। বিষয়টি মিল কর্তৃপক্ষকে জানালে গোডাউনের চিনি ফের হিসাব করে একই পরিমাণ কম পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত গোডাউন কিপারকে সাময়িক বরখাস্ত করার পাশাপাশি মিলের জেনারেল ম্যানেজার (কারখানা), জেনারেল ম্যানেজার (প্রশাসন) ও জেনারেল ম্যনেজারকে (হিসাব) সদস্য করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, মিলের শুরু থেকেই চিনির গোডাউনের চিনি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব থাকে স্টোরের গোডাউন কিপার। গোডাউন কিপার পরিবর্তনের সময় শুধু মাত্র খাতা কলমের হিসাবের ওপর নির্ভর করে দায়িত্বভার গ্রহণ করা হয়। প্রতি মৌসুমে মিলের চিনি উৎপাদন হওয়ায় অনুমান ভিত্তিতে এই গোণার কাজটি করা হয়ে আসছে। তাতে খাতা কলমে যাই থাক না কেন প্রকৃতপক্ষে কত বস্তা চিনি মজুদ আছে তা ধরা কঠিন হয়ে পড়ে। চলতি মৌসুমে চিনি উৎপাদন না হওয়ায় আর গোডাউনের চিনি বিক্রি হওয়ার কারণে গোডাউন একেবারেই ফাঁকা হওয়ার অবস্থায় এসে এখন চিনির কোনো হিসাব পাওয়া যাচ্ছে না। বর্তমান পরিস্থিতিতে এর দায়ভার পড়েছে গোডাউন কিপারের ওপর।
জানা যায়, ভারপ্রাপ্ত গোডাউন কিপার ফরিদুল হক স্টোর কিপার হিসেবে দায়িত্বভার পালন করছেন। তাকে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে গত বছর নভেম্বর মাসে গোডাউনের ভারপ্রাপ্ত কিপার হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়। ধারণা করা হচ্ছে, দীর্ঘ দিনে বাস্তবে হিসাব না মেলানোয় বিপুল পরিমাণ চিনি মিল থেকে চুরি হয়, যা মিলের খাতা কলমের হিসাবের বাইরে ছিল। বর্তমানে এসে এর দায়ভার গোডাউন কিপারের ওপর পড়ছে। তবে সঠিক তদন্তে প্রকৃত বিষয়টি উঠে আসতে পারে।
এ দিকে কুষ্টিয়ার সরকারি চিনিকলটি এক বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। মিলের শ্রমিক ও কর্মচারীদের দীর্ঘ দিন বেতন ভাতা বন্ধ। এমতবস্থায় মিলের গোডাউন থেকে ১০৪৫ বস্তা চিনি উধাওয়ের ঘটনাটি নতুন জটিলতা সৃষ্টি করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
Leave a Reply