বাসটার্মিনাল দখল নিয়ে বরিশাল নগরীর রুপাতলীতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত দুই গ্রুপ শ্রমিকের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিবাদমান দু’টি গ্রুপের এই সংঘর্ষে কমপক্ষে ১০ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে ঘটনার পরপরই দক্ষিণাঞ্চলের ১৭ রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয় মালিক ও শ্রমিকরা। প্রশাসনের আশ্বাসে প্রায় চার ঘণ্টা পর বাস চলাচল শুরু হয়।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টার দিকে রুপাতলী কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে এই ঘটনা ঘটে।
বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরুল ইসলাম জানান, এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। টার্মিনালে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে দীর্ঘ ২১ দিন পর কঠোর লকডাউন প্রত্যাহারের প্রথম দিনে সংঘর্ষ ও বাস চলাচল বন্ধ থাকায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা যাত্রীদের সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি বরিশাল জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের দু’টি কমিটি নতুনভাবে গঠন করা হয়। যার একটির সভাপতি বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর সুলতান মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম টিটু।
অপর কমিটির সভাপতি বরিশাল মহানগর শ্রমিক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক পরিমল চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক আহম্মদ শাহারিয়ার বাবু।
সাধারণ শ্রমিকরা জানিয়েছেন, কমিটি দু’টি গঠনের পর থেকেই শ্রমিক নেতাদের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে ছোটখাটো মারামারি ও উত্তেজনা চলে আসছে। এর ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার সকালে টার্মিনাল ভবনের নিচতলায় কাউন্টারের সামনে দু’গ্রুপের শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এরপর গোটা বাস টার্মিনাল এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পরে। এতে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
বরিশাল জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার বাবু জানান, দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে রুপাতলী বাস টার্মিনালে চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্ব করে আসছেন সুলতান মাহামুদ। এর অবসান ঘটাতে ও শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে দিতে বরিশাল সিটি মেয়র নতুন একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। সেই কমিটি উৎখাত করতে বৃহস্পতিবার সকালে বাসস্ট্যান্ডে এসে আমাদের লোকজনের ওপর অতর্কিতভাবে হামলা চালানো হয়।
শ্রমিকদের ওপর হামলার ঘটনায় মামলার পাশাপাশি হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়েছে। পুলিশ হামলাকারীদের গ্রেফতারের আশ্বাস দিয়েছে বলেও জানান বাবু।
বরিশাল জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের পুরাতন কমিটির সভাপতি সুলতান মাহমুদ বলেন, আমি বাসায় থাকা অবস্থায় জানতে পারি আমার কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বাস চালাতে গেলে তাকে বাধা দেয়া হয়েছে। এর কারণ জানার জন্য টার্মিনালে গেলে আমার সাথে তর্ক বেঁধে যায়। একপর্যায়ে হাতাহাতি হয়।
তিনি বলেন, মূলত তারা একটি অবৈধ কমিটির মাধ্যমে টার্মিনাল দখল নিতে চায়। তারা যে কমিটি করেছে তার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তারা কেউ শ্রমিক নন। গঠনতন্ত্র অনুসারে শ্রমিক ছাড়া শ্রমিক ইউনয়নের কমিটি গঠন অবৈধ।
জেলা মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি কাওসার হোসেন শিপন জানান, বিবাদমান দুই শ্রমিক সংগঠন বাস টার্মিনাল দখলে নিতে মরিয়া। তাদের মুখোমুখি অবস্থানের কারণে বাস মালিকরা আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন পর বাস চলাচল শুরু হওয়ার পর সংঘর্ষের কারণে ১৭টি রুটে ৪ ঘণ্টা পরিবহন চলাচল বন্ধ ছিল। পরে প্রশাসনের আশ্বাসে বেলা ৩টার দিকে বাস চলাচল শুরু হয়।
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম জানিয়েছেন, বাস টার্মিনালে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হবে। আসামিদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করা হবে।
Leave a Reply