মহামারী করোনার কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। একাধিক বার খোলার কথা বলা হলেও করোনাভাইরাস ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ায় তা এখনো সম্ভব হয়নি। শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করানো যাচ্ছে না। অনলাইনে পাঠদানের কথা বলা হলেও কার্যত তা ফলপ্রসূ হয়নি। উচ্চশিক্ষায় ভর্তিকার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। এমনকি গত বছরের পাবলিক পরীক্ষাগুলো নেয়া যায়নি। অটোপাসের মাধ্যমে পাবলিক পরীক্ষার জট সামাল দেয়া হয়েছে। দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকায় দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নানমুখী ক্ষতির মুখে। বলা অসঙ্গত নয় যে, আমাদের শিক্ষা খাত এখন একেবারে খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে। এতে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ক্ষতির পাশাপাশি ১৭ মাস ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনেক শিক্ষার্থী মনোজাগতিক অস্থিরতা এবং অবসাদে ভুগছে বলে একাধিক জরিপের ফল থেকে জানা যাচ্ছে। বাস্তবে লাখ লাখ শিক্ষার্থী ও অভিভাবক ভীষণ দুশ্চিন্তায় আছেন। সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উৎকণ্ঠায় সময় পার করছেন বাবা-মায়েরা।
যদিও করোনার বাড়বাড়ন্তের মধ্যেই গত ১১ আগস্ট থেকে সরকারি-বেসরকারি অফিসের পাশাপাশি গণপরিবহন ও মার্কেট খুলে দেয়া হয়েছে। এর অর্থ, করোনার সংক্রমণের হার যা-ই হোক, সরকার জনগণের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রাখতে আগ্রহী। কেননা লকডাউন, কঠোর কিংবা শিথিল বিধিনিষেধ, যে নামই দেয়া হোক না কেন, তা কার্যত কার্যকর করতে পারেনি সরকার। এমন প্রেক্ষাপটে আাগামী সেপ্টেম্বরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে সরকার চিন্তাভাবনা করছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি। তিনি বলেছেন, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করছে সরকার। সেপ্টেম্বরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার ব্যাপারে ইতোমধ্যে প্রস্তুতিও নেয়া শুরু হয়েছে।
শিক্ষাবিদরা মনে করেন, পর্যায়ক্রমে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া উচিত। তাদের মতে, প্রথমে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান মানে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করা যেতে পারে। এরপর উচ্চমাধ্যমিক ও মাধ্যমিক। সবশেষে প্রাথমিক। আগামী সেপ্টেম্বর মাস থেকে যদি সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার পরিকল্পনা করে থাকে, তা হলে এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রায় দেড় বছর সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সেগুলো খানিকটা পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে। এগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় সময় লাগবে। ছাদ, দেয়াল ও আসবাবপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকলে মেরামতও সময়সাপেক্ষ।
যতদূর জানা যায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পর্যায়ক্রমে খুলে দেয়া নিয়ে সরকারি মনোভাব হচ্ছেÑআগস্ট মাসে কতসংখ্যক শিক্ষার্থীকে টিকা দেয়া যাবে এবং করোনা সংক্রমণের হার কেমন থাকবে, তার ওপর নির্ভর করছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়টি। সঙ্গত কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলায় শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়ার ওপর জোর দিচ্ছে সরকার। এটি বোঝা যায়, সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিরোধী নয়। তবে সেটি প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষার্থীকে ভ্যাকসিনেশনের পর। সরকারি এমন মনোভাবের সাথে সহমত পোষণ করেও প্রশ্ন হলো, শ্রেণিকক্ষ বা পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়ার আগে শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়া নিশ্চিত করা অতীব জরুরি বটে; কিন্তু মানুষের স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে আনতে করোনা সংক্রমণের হার না কমার পরও সরকার যখন সবকিছু খুলে দিয়েছে, তখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে না দেয়ার পেছনে কী কারণ থাকতে পারে? সরকার যদি বিশেষ ব্যবস্থায় রফতানিমুখী কারখানার শ্রমিকদের টিকা দিতে পারে, শিক্ষার্থীদের কেন নয়? টিকা দেয়ার পর সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে চাইলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে টিকা সংগ্রহ করে শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তা দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। যেসব শিক্ষার্থী ইতোমধ্যে টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন, তাদের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে। বাকিদেরও দ্রুত ভ্যাকসিনেশনে আনতে হবে। মোট কথা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে যে যে পদক্ষেপ নেয়া জরুরি বলে মনে করা হচ্ছে; তা নিতে হবে। অনির্দিষ্টকাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা কোনো সমাধান হতে পারে না।
Leave a Reply