আফগানিস্তানে তালেবান পুনরায় ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণে আসার পর কাবুল বিমানবন্দর দিয়ে হুলস্থুল করে পালাতে যাওয়া দুই ব্যক্তিকে বিমান থেকে খসে পড়তে দেখা গিয়েছিল। তারা কোথায় গিয়ে পড়েছিলেন, তার উত্তর বৃহস্পতিবার পাওয়া গেল।
কাবুল বিমানবন্দর থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে একটি বাড়ির ছাদে আছড়ে পড়ে ওই দুই ব্যক্তির নিথর দেহ। এতে এতটাই শব্দ হয়েছিল যে প্রতিবেশীরা ভেবেছিলেন বিস্ফোরণ হয়েছে হয়তো। ‘ভুল’ ভাঙে বাড়ির মালিক ছাদে যাওয়ার পর। দেখা যায় ছাদে পড়ে রয়েছে রক্তাক্ত দু’টি লাশ। দু’জনেরই বয়স কম। তবে তাদের মাথার খুলি ফেটে গিয়েছিল। পেট ফেটে বেড়িয়ে এসেছিল নাড়িভুঁড়ি।
বিমানবন্দরের কাছেই ওই জয়গাটির নাম খায়ের খানা। সেখানেই দোতলা বাড়ি বেসরকারি সংস্থার নিরাপত্তাকর্মী ওয়ালি সালেকের। সোমবার দুপুরে যখন ঘটনাটি ঘটে তখন সালেক বাড়িতে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। তার দুই মেয়ে ছিলেন রান্নাঘরে। ঘুমোচ্ছিলেন দুই ছেলে। প্রবল শব্দে চমকে ওঠেন প্রত্যেকে।
সালেক জানিয়েছেন, ‘বাড়ির দেয়াল থেকে পলেস্তারা খসে পড়ছিল। আওয়াজ শুনে দৌড়ে ছাদে যাই। সেখানেই দেখি ওই দৃশ্য।’
সালেকের স্ত্রী জাকিয়া সালেকও এসেছিলেন স্বামীর পিছনে। প্রায় বিকৃত হয়ে যাওয়া দেহ দু’টি দেখে অসুস্থ হয়ে পড়েন জাকিয়া। জ্ঞানও হারান তিনি।
সালেক বলেছেন, ‘গোটা ছাদে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিল রক্ত আর শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ। ওই দৃশ্য দেখা যাচ্ছিল না।’
ভারতের বেসরকারি এক সংবাদসংস্থাকে ভিডিও কলে বাড়ির ছবি দেখিয়েছেন সালেক। পাঠিয়েছেন লাশ দু’টির ছবিও।
তবে অন্য একটি সংবাদ সংস্থার পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, মৃত দুই আফগান আসলে দুই সহোদর। তাদের নাম কবীর এবং রেজা। তাদের পরিবার রেজার লাশ খুঁজে পেলেও কবীরের লাশ পায়নি। যদিও ভারতীয় সংবাদসংস্থাকে দেয়া সালেকের সাক্ষাৎকার অনুযায়ী দু’জনেরই দেহ নিয়ে গিয়েছে তাদের পরিবার।
সালেক জানিয়েছেন, মৃত দুই যুবকের একজনের বয়স ২৫। নাম শাফিউল্লা হোতাক। অন্যজন ২০ বছরের। নাম ফিদা মুহাম্মদ। বাড়ি কাবুলের কাছে পাঘমানে। তাদের পোশাক পরীক্ষা করে পরিচয়পত্র পেয়েছিলেন সালেক। তাতে লেখা ছিল ঠিকানাও। তা দেখেই দু’জনের বাড়িতে খবর দেন সালেক। চাদরে লাশ মুড়ে বাড়ি থেকে ৩০০ মিটার দূরে একটি মসজিদে রেখে এসেছিলেন সালেক। সাথে ছিলেন ১০-১২ জন প্রতিবেশীও। সেখান থেকেই তাদের লাশ নিয়ে যায় দুই যুবকের পরিবার।
সালেক অবশ্য প্রথমে ভেবেছিলেন ওই দুই যুবক তালেবান। প্লেন থেকে মেরে হয়তো ফেলে দেয়া হয়েছে তাদের। পরে জন্মের সনদপত্র দেখে ভুল ভাঙে তার।
বাড়ি থেকে ৯ কিলোমিটার দূরে কাবুলে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি করেন সালেক। সোমবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শিফট ছিল তার। রাতে বাড়ি ফিরে জানতে পারেন মসজিদ থেকেই দুই আফগান ভাইয়ের লাশ নিয়ে গিয়েছে তাদের পরিবার।
তবে সোমবারের ঘটনা যে কোনো দিন ভুলতে পারবেন না তা সাক্ষাৎকারে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন সালেক। বলেছেন, ‘বিমানবন্দরের কাছে বাড়ি। মাঝেমধ্যেই অদ্ভুত শব্দ শুনতে পাই। অনেকবার ভেবেছি প্লেন থেকে যদি কেউ ডলার ভর্তি ব্যাগ ফেলে দেয়, কী ভালো হয়। কিন্তু তার বদলে এসে পড়ল লাশ।’
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
Leave a Reply