গ্রামের মেয়ে হলে কি হবে। শুধুমাত্র মেধা ও শ্রমকে কাজে লাগিয়ে অনলাইন এবং অফলাইনে একজন সফল নারী উদ্যোগত্তা।
বলছি, ঝিনাইদহের প্রত্নতত্ত্ব গ্রাম থেকে শহরে আসা একজন নারী উদ্যোগতার গল্প। নাম তার, সাথী। “সাথী মিতুর হেঁসেল ঘর” নামে তারা ঝিনাইদহ শহরে অল্প সময়ের মধ্যে অনেক জনপ্রিয়তা লাভ করে। তাদের জনপ্রিয়তার প্রধান কারণ ছিল, তারা নিজেরাই আমাদের গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী খাবার গুলো তৈরী করে বিক্রয় করত এবং কারও পছন্দ মত গ্রাম্য খাবার অর্ডার করলে তৈরী করে দিতে পারত। এটা আমাদের শহরে বিরল ব্যাপার ছিল।
তাদের তৈরী খাবারের মধ্যে ছিল ছিকে রুটির সাথে হাঁস ও দেশি মুরগীর মাংস, চালের রুটির সাথে পুড়া মাংস ও ওজ ভাজি, বিভিন্ন প্রকার পিঠা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এর ফলে, বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ সহ, দেশি-বিদেশি অতিথিরাও আসা শুরু করে ছিল।ব্যাতিক্র খাবারের আশায়, আমি নিজেও অতিথি নিয়ে খেতে গেছি ওই খানে।
ঝিনাইদহের নারী উদ্যোগতার সফলতার গল্প লেখার জন্য -সাক্ষাৎকার নেবার জন্য, আজ গিছিলাম “সাথী মিতুর হেঁসেল ঘর” প্রতিষ্ঠানে। কিন্তু, গিয়ে দেখি অন্য একটা প্রতিষ্ঠান। অনেক খোজাখুজির পর উনাদের সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়।
সাক্ষাৎ কারে সাথী নামের মেয়েটি বলে, আমি ঝিনাইদহ মহেশপুরের হাটখালিশপুর গ্রামের মেয়ে। আমি কমার্সের স্টুডেন্ট ছিলাম এবং এখন যশোর এম.এম কলেজের এম.বি.এ ফাইনাল ইয়ারের ছাত্রী। মূলত আমি একজন কৃষক পরিবারের সন্তান। তাই, মধু ও ঘানে ভাঙানো খাঁটি সরীশার তৈলের সাথে আমরা ছোটবেলা থেকেই পরিচিত। এই কারণে পড়াশোনার পাশাপাশি গত দু’বছর যাবৎ আমাদের গ্রামের তৈরিকৃত মধু ও ঘানে ভাঙানো খাঁটি সরীশার তৈল অনলাইনের মাধ্যমে বিক্রি করে আসছি। এর ফলে আমার ও আমাদের গ্রামের কিছু খেটে খাওয়া মানুষের কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করতে পেরে ছিলাম।
এরপর আমাদের গ্রামের ঐতিহ্যবাহী খাবার গুলো কিভাবে মানুষের কাছে পৌছানো যায় ভাবতে শুরু করলান। মূলত আমার পন্যসামগ্রি গুলো ঝিনাইদহ শহরে এসে কুরিয়ারে মাধ্যমে ক্রেতার নিকট পাঠাতে হতো। অনলাইনে আমি যখব প্রথম অর্ডারটা পেয়ে ছিলাম, তখন আমি এই শহরটা খুব একটা চিন্তাম না। পরবর্তীতে, আমার এই শহরের বাসিন্দা মিতু আপুর সাথে পরিচয় হয়। উনাকে আমার গ্রামের ঐতিহ্যবাহী খাবারের আইডিয়াটা বলি এবং মিতু আপু উৎসাহী হলে আমরা দুজন ঝিনাইদহ শিল্পকলা একাডেমির পাশে একটা পরিত্যাক্ত পুরাতন ঘর নিয়ে “সাথী মিতুর হেঁসেল ঘর” নাম দিয়ে, স্বল্প পরিষরে শুরু করি এবং অল্প দিনেই অনেক পরিচিতি পেয়ে যায়। তখন আর্থিক ভাবে লাভবানও হতে থাকি। এর ফলে, আমাদের উদ্ভাবিত বিভিন্ন নতুন নতুন চিন্তা ধারার মধ্যে, আমাদের লাভ ছাড়া ৩০-৩৫ টাকার মধ্যে শহরের শ্রমিক শ্রেণির মানুষ গুলো কিভাবে খেতে পারে তার ব্যাবস্তা করি।
এত দিনে আমাদের সুনাম ও সফলতা দেখে পারিপার্শ্বিক প্রতিহিংসা শুরু হয়ে যায়। আমাদের কাজের মানুষ গুলো কে বেশি বেতন দিয়ে নিয়ে নেওয়া, বিভিন্ন কুট উক্তি, বাড়ি আলি কে বেশি ভাড়া দেওয়ার কথা বলা ইত্যাদি।
শেষ-মেশ, বাড়ি আলি অতিরিক্ত টাকার আশায় শহরের একজন শিক্ষিত প্রভাবশালী ব্যাক্তি দিয়ে কৌশলে আমাদের কে ঘর ছাড়া করে বেশি টাকায় অন্য কে ভাড়া দিয়ে দিয়েছে। আমাদের অপরাদ, আমার আব্বার অসুস্থতার কারনে ১৫ দিন প্রতিষ্ঠান বন্দ রাখতে বাধ্য হয়েছিলাম। ফলে ভাড়ার টাকাটা দিতে ১০ তারিখ হতে ২২তারিখ হয়ে গিয়ে ছিল, যেটা আগের কোন মাসে হয়নি। এতে, তোমরা ভাড়া ঠিকমত দিতে পারবা না, এই অজুহাতে আমাদের কে ঘর ছাড়া করেছে। এর ফলে আজ আমরা অর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি এবং পুজি হারা হয়ে বাড়িতে হতাশায় দিন কাটাচ্ছি”। আপনার শহর বলেন আর আমার শহর বলেন, শহরের মানুষ গুলো একেমন। গত ২বছর অনলাইনে ব্যাবসায় আমার গ্রামের মানুষ গুলো আমাকে উৎসাহিত করেছে। অথচ শহরের মানুষ গুলো কি এরা”।
অশ্রু ভেজা কন্ঠে সাথী নামের মেয়েটা আমাক এই কথা গুলো বল্লো।
উনার সহপাঠী মিতু আমাকে বলে, ভাইয়া আমাদের স্বপ্ন ছিল এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অনেক অসহায় মেয়েদের কে আমরা কর্ম সংস্থারনের ব্যাবস্তা করব। সেই ভাবেই এগিয় যাচ্ছিলাম। এমনকি, এটা সম্ভবও ছিল। অনেক মেয়ে ও মহিলারা উদ্যোগক্তা হবার জন্য আমাদের কাছে পরামর্শ নিতে আসত। আমাদের খুব ভাল লাগত, তাদের কে উৎসাহিত করতে পেরে। কিন্তু, আপাতত সব শেষ।
তবে, আর্থিক সংকটে পড়েছি ঠিকই, তবে আমরা মনোবল হারাইনি। একদিন আমরা আমাদের লক্ষ্যে অবশ্যই পৌছাবো। ইনশাআল্লাহ।
★ আমাদের জেলার স্বল্প শিক্ষিত ও কম জানা-বোঝা গ্রাম্য মানুষ গুলো পরচর্চা ও প্রতিহিংসা পরায়ন, এটা আমরা মেনেই নিয়েছি।
কিন্তু, সমাজের প্রভাবশালী শিক্ষিত মানুষ গুলো যদি নারী জাগরণে বাধ্য হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে কোন দিকে যাচ্ছে আমাদের সামাজিক পরিবর্তন…?
ছবি ঃ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সড়ক
ঝিনাইদহ সদর।
Leave a Reply