মোঃ এনামুল হক, গাইবান্ধা জেলা।
গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে ব্লেড দিয়ে হাত কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন ফউজিয়া আকতার রিয়া (২০) নামে এক গৃহবধূ। যৌতুকের দাবিতে আটক রেখে স্বামী ও শশুর বাড়ির লোকজনের নির্যাতন সইতে না পেরে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ তার। পরে জাতীয় জরুরী সেবার হটলাইন ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলে পুলিশ গিয়ে অসুস্থ অবস্থায় গৃহবধুকে উদ্ধার করে। বর্তমানে ফউজিয়া আকতার সাদুল্লাপুর উপজেলা স্বাস্থ্ কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। হাসপাতালে ভর্তির পর ফউজিয়ার কেটে যাওয়া হাত সেলাই করাসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দেয়ার কথা জানিয়েছেন জরুরী বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক মিনা আকতার। বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থা ভালো আছে বলেও জানান তিনি ।
শুক্রবার (১২ ফেব্রুয়ারী) দুপুরে সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাঙ্গা ইউনিয়নের নলডাঙ্গা গ্রামের শশুর সিরাজুল ইসলামের বাড়ি থেকে গৃহবধুকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরআগে সকালে সুন্দরগঞ্জের শাহবাজ গ্রামের বাবার বাড়ি থেকে শশুর বাড়িতে আসে ফউজিয়া আকতার। কিন্তু বাড়িতে ঢুকতে না দিয়ে একটি ঘরে আটক রেখে ফউজিয়া আকতারকে মারধর ও নির্যাতন শুরু করে শশুর পরিবারের লোকজন।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ফউজিয়া আকতার জানায়, বিয়ের পর থেকে যৌতুকের জন্য স্বামী আরিফুল ইসলাম ও তার বাবা-মাসহ পরিবারের লোকজন মারধরসহ নির্যাতন করতেন। শুক্রবার সকালে বাবার বাড়ি থেকে ফুপু, বড় আম্মা ও চাচিকে সঙ্গে নিয়ে শশুর বাড়িতে গেলে তাদের ঘরে ঢুকতে দেয়া হয়নি। স্বামী আরিফুল বাড়ি না থাকায় শাশুড়ি ফজিলা বেগম তাকে একটি ঘরে আটকে রেখে শশুরকে খবর দেয়। পরে শ্বশুর সিরাজুল ইসলাম, শাশুড়িসহ পরিবারের লোকজন তাকে বেদম মারধর করে নির্যাতন চালায়। এসময় তার সাথে থাকা ফুপু ও বড় আম্মাকে গালিগালাজ করে তাড়িয়ে দেয়া হয়। নির্যাতন সইতে না পেরে ব্লেড দিয়ে হাত কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা করি।
ফউজিয়া আকতারের মামা আব্দুর রাজ্জাকের অভিযোগ, গত বছরের ৬ মার্চ পারিবারিকভাবে আরিফুল ইসলামের সাথে ফউজিয়া আকতারের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে যৌতুক দাবি করাসহ বিভিন্ন কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দ্বন্ধ চলে আসছিলো। এ নিয়ে ফউজিয়াকে প্রায়ই মারধরসহ নির্যাতন করতো স্বামী আরিফুল ও তার বাবা-মাসহ পরিবারের লোকজন। দাদি অসুস্থ হওয়ায় ৯ ফেব্রুয়ারী স্বামীর বাড়ি থেকে বাবার বাড়িতে আসে ফউজিয়া। শুক্রবার সকালে ফউজিয়া তার ফুপু ও চাচিকে সঙ্গে নিয়ে শশুর বাড়িতে গেলে তাকে ডিভোর্স দেয়ার কথা জানায় শশুর ও শাশুড়ি। এরপর দরজা-জানাল বন্ধ করে একটি ঘরে আটকে রেথে ফউজিয়ার ওপর নির্যাতন চালায় শশুর ও শাশুড়িসহ পরিবারের লোকজন। নির্যাতন সইতে না পারলে ব্লেড দিয়ে হাত কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা করে ফউজিয়া। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক জাতীয় জরুরী সেবার হটলাইন ৯৯৯ নম্বরে ফোন করি। এরপর পুলিশ গিয়ে অসুস্থ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।
ভাই রিফাত চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন, ‘বিয়ের পর থেকেই স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়ির শারীরিক ও মানষিক নির্যাতনে আমার বোন অতিষ্ট। তারপরেও সে স্বামীর সংসার করতে চায়। নির্যাতনের কারণে শারীরিক অসুস্থ ফউজিয়া ব্লেড দিয়ে হাত কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। বর্তমানে শরীরে ফুলা জখমসহ তার হাতে একুশটা সেলাই পড়েছে। এমন নির্যাতনের ঘটনা কোন বাবা-মা ও ভাইয়ের কাম্য নয়। এ ঘটনায় অভিযুক্ত স্বামী আরিফুল তার বাবা সিরাজুল ও মা ফজিলা বেগমের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগের প্রক্রিয়া চলছে। আমরা চাই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত পুলিশ গ্রেফতার করবে’।
তবে অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে স্বামী আরিফুলসহ তার বাবা সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে সাদুল্লাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাসুদ রানা জানান, ৯৯৯ নম্বরে কল পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। পরে দরজা ও জানাল বন্ধ অবস্থায় একটি ঘর থেকে অসুস্থ অবস্থায় গৃহবধুকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গৃহবধুকে নির্যাতনের ঘটনায় তার পরিবার লিখিত অভিযোগ করার কথা। তবে রাত ১১টা পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগে পেলে নির্যাতনের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলাসহ তাদের গ্রেফতার করা হবে’।
Leave a Reply