1. admin@banglahdtv.com : Bangla HD TV :
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৭:০৬ অপরাহ্ন

মুসলিম নারীদের তালাক : কেরালা হাইকোর্টের রায়ে বিতর্ক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২১
  • ৪৫৮ Time View

মুসলিম নারীরা যাতে আদালতের বাইরেও তাদের বিবাহ বিচ্ছেদের দাবি পেশ করতে পারেন, ভারতের কেরালা হাইকোর্ট এক রায়ে তাদের সেই অধিকার দিয়েছে।

এর মাধ্যমে খারিজ হয়ে গেল প্রায় পাঁচ দশকের পুরনো একটি রায়, যাতে বলা হয়েছিল মুসলিম নারীরা শুধু আদালতের মাধ্যমেই তাদের স্বামীকে তালাক দিতে পারবেন।

মুসলিম নারীদের অধিকার আন্দোলনের সাথে যারা যুক্ত, তারা এই রায়কে স্বাগত জানাচ্ছেন এবং এর মাধ্যমে বিবাহিত মুসলিম নারীরা একটি গুরুত্বপূর্ণ পারিবারিক ও সামাজিক অধিকার অর্জন করলেন বলেও তারা মনে করছেন।

তবে কেরালায় ইন্ডিয়ান মুসলীম লীগ নেতৃত্ব বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, তারা এই রায়কে মুসলিম দেওয়ানি আইনে আদালতের অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ বলেই মনে করেন।

কেরালা হাইকোর্টে ১৯৭২ সালে ‘কে সি মঈন বনাম নাফিসা ও অন্যান্যরা’ মামলায় একটি একক বেঞ্চ রায় দিয়েছিল কোনো পরিস্থিতিতেই একটি মুসলিম বিবাহ শুধু স্ত্রী চাইলেই ভেঙে দেয়া যাবে না।

একমাত্র ব্যতিক্রম হবে মুসলিম ম্যারেজ অ্যাক্টের কয়েকটি ধারা – যার অর্থ দাঁড়ায় কোনো মুসলিম নারী ডিভোর্স চাইলে তাকে আদালতে যেতেই হবে। এই পটভূমিতে গত ৫০ বছরে দক্ষিণ ভারতের এই রাজ্যটিতে পারিবারিক আদালতে অজস্র মামলা হয়েছে।

এখন তার অনেকগুলোকে একত্র করে হাইকোর্টে বিচারপতি এ মোহামেদ মুস্তাক ও সি এস ডায়াসের ডিভিশন বেঞ্চ রায় দিয়েছে – পবিত্র কুরআন শরিফ স্বামী ও স্ত্রী উভয়কেই বিচ্ছেদ চাওয়ার সমান অধিকার দেয়, অতএব একজন স্ত্রী তালাক দিতে চাইলে তাকে আদালতেই যেতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।

এ প্রসঙ্গে ভারতীয় মুসলিম মহিলা আন্দোলনের কর্ণধার জাকিয়া সোমান বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, ‘বিচ্ছেদ চাওয়ার অধিকার স্বামী-স্ত্রীর সমান হলেও বাস্তবে তাৎক্ষণিক তিন তালাকই কিন্তু মুসলিম সমাজে সবচেয়ে প্রচলিত পদ্ধতি হয়ে উঠেছিল – এবং স্বামীরা তার ঢালাও অপব্যবহার করছিলেন।’

‘এর বাইরেও বিচ্ছেদের নানা পদ্ধতি আছে, যেমন খুলা – যেখানে স্ত্রী কোন কারণে বিয়ে ভেঙে দিতে চান, সেটাই একমাত্র ভিত্তি।’

‘কিংবা তালাক-ই-মুবারা, যেখানে একটি দম্পতি পারস্পরিক সম্মতিতে বিচ্ছিন্ন হতে পারেন – যেমনটা আধুনিক আইনেও বলে।’

‘অথবা তালাক-ই-তফভিজ, যেখানে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই মনে করছেন বিয়েটা টেনে নিয়ে যাওয়া অর্থহীন – আর এগুলো সবই কিন্তু বিবাহ বিচ্ছেদের বৈধ, ইসলামসম্মত পদ্ধতি,’ বলছিলেন তিনি।

জাকিয়া সোমান নিজে গুজরাটি মুসলিম – তার অভিজ্ঞতা বলে গুজরাটে প্যাটেল বা লোহানা জাতের হিন্দু নারীরা কিন্তু বিচ্ছেদ চাইলে তাদের সমাজের অভিভাবকদের যে সংস্থা, সহজেই তার দ্বারস্থ হতে পারেন।

কেরালা হাইকোর্টের সাম্প্রতিক রায় মুসলিম নারীদেরও একই ধরনের অধিকার দেবে বলে তার বিশ্বাস, ডিভোর্স চাইলেই তাদের মামলা-মোকদ্দমার ঝক্কিতে পড়তে হবে না।

কেরালা থেকে নির্বাচিত এমপি ও ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন অব মুসলীম লীগের সিনিয়র নেতা ই. টি. মোহামেদ বশির কিন্তু মনে করছেন, হাইকোর্টের এই রায় সম্পূর্ণ অনভিপ্রেত।

মোহামেদ বশির বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, ‘ভারতের মুসলিমদের জন্য কিন্তু একটি আলাদা মুসলিম পার্সোনাল ল আছে, আর বিয়ে, তালাক, সম্পত্তির উত্তরাধিকারের মতো বিষয়গুলো সেই শরিয়াসম্মত আইনের আওতাতেই পড়ে।’

‘এই শরিয়া আমাদের কঠোরভাবে মানতে হবে, আর মনে রাখতে হবে দেশের সংবিধানও এই পার্সোনাল ল-কে স্বীকৃতি দেয়, সুরক্ষা দেয়।’

‘কাজেই শরিয়া যেভাবে বলেছে আইনটাকেও সেভাবেই রাখতে হবে, দেশের সরকার বা আদালতের হস্তক্ষেপ তাতে পুরোপুরি বেআইনি,’ বলেছিলেন এই পার্লামেন্টারিয়ান।

জাকিয়া সোমান কিন্তু আবার মনে করেন, কাগজে-কলমে মুসলিম নারীদের ডিভোর্স চাওয়ার অধিকার থাকলেও বাস্তবে সেই অধিকার প্রয়োগের এতদিন কোনো অবকাশ ছিল না।

তার কথায়, ‘তার প্রধান কারণ কমিউনিটির যে সাপোর্ট স্ট্রাকচার বা সহায়তার কাঠামো, সেটাও পুরোপুরি পিতৃতান্ত্রিক বা পুরুষকেন্দ্রিক।’

‘কেরালা হাইকোর্টের রায়কে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি, কারণ মুসলিম নারী তাদের এই অধিকারগুলো নিয়েই ভালো করে জানেন না।’

ফলে এই ধরনের রায় তাদের মধ্যে সেই সচেতনতা এনে বিচ্ছেদ চাওয়ার ও পাওয়ার অধিকার সহজ করে দেবে বলেই এই সমাজকর্মীদের বিশ্বাস।

সূত্র : বিবিসি

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2020 banglahdtv
Design & Develop BY Coder Boss