1. admin@banglahdtv.com : Bangla HD TV :
মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:১২ পূর্বাহ্ন

বাজেটে ভাওতাবাজি পরিষ্কার : মির্জা ফখরুল

বিশেষ প্রতিনিধি
  • Update Time : শুক্রবার, ৪ জুন, ২০২১
  • ৩১২ Time View
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

‘জীবন-জীবিকায় প্রাধান্য দিয়ে সুদৃঢ় আগামীর পথে বাংলাদেশ’ শিরোনামে প্রস্তাবিত বাজেটের প্রতিপাদ্য শব্দমালার মাঝেই এবারের বাজেটের ভাওতাবাজি পরিষ্কার বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি।

শুক্রবার সকালে গুলশানে বিএনপি চেয়ার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল এসব দাবি করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, মহামারীকালে মানুষের জীবন-জীবিকার স্বাভাবিক গতি ফিরে পেতে ও বেঁচে থাকার নিশ্চয়তায় চলমান স্বাস্থ্য পরিকল্পনা গ্রহণের ক্ষেত্রে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট সম্পূর্ণ ব্যর্থ। ইহা একটি অবাস্তবায়নযোগ্য কাল্পনিক ও কাগুজে বাজেট ছাড়া আর কিছুই নয়।

‘জীবন-জীবিকায় প্রাধান্য দিয়ে সুদৃঢ় আগামীর পথে বাংলাদেশ’ শিরোনামে প্রস্তাবিত বাজেটের প্রতিপাদ্য শব্দমালার মাঝেই এবারের বাজেটের ভাওতাবাজি পরিস্কার। কারণ করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের স্বাভাবিক জীবন গত ১৮ মাস যাবৎ অচল। এর মধ্যে অপরিকল্পিত লকডাউনের নামে শাটডাঊনে নিম্ন ও নিম-মধ্যবিত্ত মানুষদের জীবন চূড়ান্ত রকমে থমকে গেছে। তাই সুস্পষ্টভাবে মানুষের জীবন-জীবিকার কথা মাথায় না রেখে কেবলমাত্র অর্থনীতির নানা তত্ত্ব ও বিশাল সংখ্যার আর্থিক উপস্থাপনার মাধ্যমে কার্যত জনগণের সাথে এক ধরনের ভাওতাবাজি করা হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা এই বাজেটেও স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষাখাতকে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হয়নি। অথচ এই মুহূর্তে মানুষের স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে জনগণকে কোভিডের মহাসঙ্কট থেকে রক্ষার দিক নির্দেশনা নেই। এটি দুর্নীতির ধারাবাহিকতা রক্ষার বাজেট। জনগণের সমর্থনবিহীন সরকারের রাষ্ট্রের প্রতি কোনো দায়বদ্ধতা নেই। তাই এ বাজেটে জনস্বার্থের কোনো প্রতিফলন ঘটেনি। এটি দুর্নীতির ধারাবাহিকতা রক্ষার বাজেট।
বিদেশি ঋণ জনগণের ওপর করের বোঝা চাপিয়ে পরিশোধ করা হবে। সার্বিকভাবে বাজেট বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও দুর্নীতি প্রতিরোধ নিশ্চিতে সুনির্দিষ্ট পথরেখা না থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করছি। তিনি বলেন, ঘোষিত বাজেটে অপচয়, অব্যবস্থাপনা বন্ধ করে সুশাসন ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণ হয়নি। বরং এই সরকারের সময় দেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা ও আইনের শাসন এবং জবাবদিহির যে ঘাটতি রয়েছে, তারই প্রতিফলন ঘটেছে বাজেটে।

এবারের বাজেট কেবল বার্ষিক হিসাব-কিতাবের বাজেট হওয়ার কথা নয়। বাজেট হওয়া উচিত ছিল ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক নীতিমালার পথনির্দেশনা এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের বাজেট। ভবিষ্যতে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের মডেল কী হতে পারে, স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি বাজেটের ফোকাস কী হবে, তার পথনির্দেশনার বাজেট। কিন্তু সরকার সেদিকে যায়নি।

মুক্তবাজার অর্থনীতির কথা বলে দেশে আয়বৈষম্য বেড়েছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতির কথা বলে দেশে আয়বৈষম্য বেড়েছে। ‘স্বজন তোষণের’ ভিত্তিতে এ সরকারের অর্থনৈতিক কর্মকা- চলছে। যার ফলে মাত্র ১ শতাংশ লোকের কাছে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ সম্পদ পুঞ্জীভূত হচ্ছে। এমনকি এই করোনাকালেও অপ্রদর্শিত আয়ের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন হাজার হাজার লোক।
ফলে মুক্তবাজার অর্থনীতিতে সম প্রতিযোগিতার স্বাভাবিক যে বিকাশ, সে সুযোগ তারা বন্ধ করে দিয়েছে।
এবারের এই বাজেট হচ্ছে জিডিপির মাত্র ১৭.৪৬ শতাংশ। ২০২১ অর্থবছরের জন্য মূল বাজেট ছিল পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা, যা ছিল জিডিপির ১৭.৯০ শতাংশ। এ হিসাবে বাজেটের প্রকৃত আকার বৃদ্ধির পরিবর্তে সংকোচিত হয়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, কোভিডের অভিঘাত এখনো অনুভূত হচ্ছে। কত দিন তা থাকবে, নতুন নতুন ভেরিয়েন্ট আসবে, আমরা তা জানিনা। তাই পরিকল্পনা শুধু এক বছরের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। তাই বাজেটে মধ্যমেয়াদি প্রক্ষেপণ থাকা উচিত ছিল।

অর্থমন্ত্রী এবারের বাজেটের শিরোনাম করেছেন ‘জীবন-জীবিকায় প্রাধান্য দিয়ে সুদৃঢ় আগামীর পথে বাংলাদেশ’। বাজেট নাকি দেয়া হয়েছে ‘মানুষের’ জন্য।

তিনি বলেন, শুনতে ভালো শোনায়। কিন্তু বাজেটে দিন আনে দিন খায় এমন গোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা রক্ষায় নগদ অর্থ এর কোন সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব নেই। এ খাতে পুরাতন ত্রুটিপূর্ণ ব্যাংকনির্ভর ঋণের কথাই বলা হয়েছে। ব্যাংক থেকে ঋণ বিতরণের যে সমস্যা মাঠ পর্যায়ে পরিলক্ষিত হয়েছে সেটা নিরসনে অদ্যাবধি রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ঋণ নয় বরঞ্চ আর্থিক প্রণোদনা প্রদানের প্রস্তাব করেছিলাম। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ উন্নত দেশগুলোতে যা করা হয়েছে। সরকার এই বাজেটে সম্প্রতি বিএনপি প্রদত্ত পরামর্শ আমলেই নেয়নি।

কারোনাকালীন এই বাজেটে স্বাস্থ্য এবং হতদরিদ্র ও শ্রমিকদের প্রত্যাশিত প্রণোদনা উপেক্ষিত হয়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট দেখে মনে হবে, সরকার মনে করে না, আগামী দিনেও জনগণের ভোটের প্রয়োজনীয়তা আছে তাদের। বাজেটে প্রণোদনার বরাদ্দ ৫ থেকে ৭ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছিল বিএনপি। অনেক দেশে বাজেটে প্রণোদনার বরাদ্দ ১০ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত হয়েছে। কিন্তু সরকারের বরাদ্দ ২ শতাংশের নিচে। এটা লোক দেখানোর প্রণোদনা। এটা সচ্ছলতা এবং ক্রয়ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে না।

সামাজিক নিরাপত্তা খাতে সম্প্রসারণের নামে যে সামান্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে তা নিতান্তই অপ্রতুল। মধ্যবিত্তদের সামাজিক নিরাপত্তা খাতে অন্তর্ভুক্ত করার কোনো ঘোষণা দেয়া হয়নি যা মধ্যবিত্তকে হতাশ করেছে। তিনি বলেন, তিনি বলেন, এক গবেষণায় উঠে এসেছে দেশে ২ কোটি ৪৫ লক্ষ নতুন গরীব সৃষ্টি হয়েছে। নতুন দরিদ্র, পুরাতন দরিদ্র আর ক্ষণস্থায়ী দরিদ্র নিয়ে সংখ্যা প্রায় ৬ কোটি। তাছাড়া রয়েছে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে ৮৬% শ্রমিক। এদের প্রত্যেককে নগদ আর্থিক সহায়তা দিতে হবে। এ খাতে জিডিপি ৬ থেকে ৭ শতাংশ বরাদ্দ দিতে হবে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাজেট প্রণয়নে করোনা ভাইরাসের প্রকোপের অনিশ্চয়তাকে আমলে নেওয়া হয়নি। স্বল্পমেয়াদি নীতিমালাই গ্রহণ করা হয়েছে। অনুমান করা হয়নি বিদ্যমান কাঠামোগত দুর্বলতার কারণে অর্থনীতিতে আরও বেশি সংকোচন ঘটতে পারে। বিদ্যমান মৌলিক কাঠামোগত সীমাবদ্ধতা মোকাবিলায় প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের কর্মসূচি নেওয়া হলে দ্বিতীয় বা তৃতীয় ঢেউয়ের তীব্রতা থেকে রেহাই পাওয়া যেত।

বিশ্ব যখন সম্প্রসারণশীল নীতির দিকে ঝুঁকছে, বাংলাদেশে তখন রাজস্ব ব্যয় আরও সংকুচিত হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার ঘাটতির কারণে ঘোষিত ঋণভিত্তিক প্রণোদনা ক্ষতিগ্রস্ত কুটির, ক্ষদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী পৌঁছাতে পারেনি। অধিকাংশ মানুষের কর্ম নিয়োজনকারী খাতগুলো বঞ্চিত থেকে গেছে। সচ্ছল অংশই মূলত লাভবান হয়েছে। সম্পদ কেন্দ্রীভূত হয়ে বৈষম্য বাড়িয়ে চলছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, সংকোচন রোধ ও পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে ত্রাণ ও পুনর্বাসন এবং পুনরুদ্ধার ও পুনর্গঠনের কর্মসূচি জরুরি। এ কর্মসূচির কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে হবে দুটো ইউনিট-খানা বা গৃহস্থালি এবং কারবার বা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান। অভিঘাত মোকাবিলার জন্য প্রতিটি খানায় সরাসরি নগদ অর্থ পৌঁছাতে হবে। সর্বোপরি সর্বজনীন স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে যেকোনো অভিঘাতে মানুষের ঝুঁকি প্রশমনের সক্ষমতা বাড়ে। দ্বিতীয়ত, নীতি-কৌশল ও বরাদ্দে সবচেয়ে বেশি মানুষ নিয়োজিত খাতগুলোতে অধিক প্রাধান্য দিতে হবে। কুটির, ক্ষুদ্র, অতিক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতে সহায়তা বাড়াতে হবে। রপ্তানিমুখী শিল্পের উৎপাদনে ও বাণিজ্যে বৈচিত্র্য নিশ্চিত করতে হবে। শ্রমিকের দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। নতুন বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে কর্মসংস্থান ধরে রাখতে হবে।

তিনি বলেন, বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকার গত এক দশকের অধিককাল ধরে দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতি ও ক্রনিক্যাপিটালিজম এর মাধ্যমে মুক্তবাজার অর্থনীতির নামে সীমাহীন দুর্নীতি করে এক নজিরবিহীন অর্থনৈতিক নৈরাজ্যের সৃষ্টি করেছে, যাদের জনগণের কাছে জবাবদিহিতা নাই। আমরা তাই সুশাসন ও জবাবদিহী নিশ্চিতকরণ অর্থনীতির অঙ্গীকার চাই যা এ বাজেটে অনুপস্থিত। দুর্বার গণআন্দোলন সৃষ্টির মাধ্যমে একটি নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা করে একটি বৈষম্যহীন, জনবান্ধব, কল্যাণমুখী ও জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করছি।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2020 banglahdtv
Design & Develop BY Coder Boss