প্রণোদনার ১০ প্যাকেজের মাধ্যমে ঋণ দেয়া হচ্ছে এক লাখ ৫৭ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সর্বোচ্চ পাচ্ছেন সেবা ও বৃহৎ শিল্প খাতের উদ্যোক্তা। তাদেরকে ঋণ দেয়া হচ্ছে প্রায় পৌনে এক লাখ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে গত বছর ৩২ হাজার ৭০৩ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এর পরেই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোক্তারা ঋণ পাচ্ছেন ৪০ হাজার কোটি টাকা। গত বছর বিতরণ করা হয়েছে ১৬ হাজার ২১৩ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্ট প্রণোদনা প্যাকেজের বাস্তবায়ন ও অগ্রগতির চিত্র নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবেলার পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টির চ্যানেল চলমান রাখতে এ পর্যন্ত মোট এক লাখ ৮৭ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। পরবর্তীতে রফতানি উন্নয়ন তহবিলের আরো চার হাজার ২৫৯ কোটি টাকা যুক্ত হয়ে তা এক লাখ ৯২ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়। এর মাধ্যমে প্রণোদনা প্যাকেজের আকার বেড়ে হয় ২৮টিতে। এর মধ্যে ১০টি প্যাকেজের সাথে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরাসরি জড়িত। আর ১০ প্যাকেজের মাধ্যমে গ্রাহকদের মধ্যে ঋণ বিতরণ করা হচ্ছে এক লাখ ৫৭ হাজার কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ১০টির মধ্যে সর্বোচ্চ ঋণ বিতরণ করা হচ্ছে সেবা ও বৃহৎ শিল্প খাতের উদ্যোক্তাদের মধ্যে ৭৩ হাজার কোটি টাকা। গত বছর এ খাতে বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪০ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে বছর শেষে বিতরণ করা হয় ৩২ হাজার ৭০৩ কোটি টাকা যা মোট লক্ষ্যমাত্রার ৮১ দশমিক ৭৫ শতাংশ। দ্বিতীয় মেয়াদে গত ১ জুলাই থেকে এক বছরের জন্য আরো ৩৩ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে গত আড়াই মাসে বিতরণ করা হয়েছে ৫১৯ কোটি টাকা, যা মোট লক্ষ্যমাত্রার ১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, ভালো উদ্যোক্তাদের অভাব রয়েছে। এ কারণে কাক্সিক্ষত হারে ঋণ বিতরণ করা যাচ্ছে না। এছাড়া গত বছরে ঋণ বিতরণ নিয়ে কিছু অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ব্যাংকগুলো অত্যন্ত সতর্কতার সাথে যাচাই-বাছাই করে ঋণ উদ্যোক্তা নির্ধারণ করছে। এ ঋণে গ্রাহককে সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে সাড়ে ৪ শতাংশ হারে।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোক্তাদের মধ্যে চলতি মূলধন হিসেবে গত বছরে ২০ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এর মধ্যে গত ৩০ জুন পর্যন্ত ঋণ বিতরণ করা হয়েছে মোট লক্ষ্যমাত্রার ৮১ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। যা টাকার অঙ্কে ১৬ হাজার ২১৩ কোটি টাকা। দ্বিতীয় মেয়াদে গত পয়লা জুলাই থেকে চলতি বছরের জন্য আরো ২০ হাজার কোটি টাকার ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত আড়াই মাসে বিতরণ করা হয়েছে ৪৭৭ কোটি টাকা, যা মোট লক্ষ্যমাত্রার ২ দশমিক ৩৮ শতাংশ। এ ঋণে গ্রাহককে সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে ৪ শতাংশ হারে।
এ ছাড়া প্রি-শিপমেন্ট রিফাইন্যান্সিংয়ের আওতায় গ্রাহক পর্যায়ে ৫ শতাংশ সুদে গত ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। ৬৫টি শিল্প প্রতিষ্ঠানকে বিতরণ করা হয়েছে ৩৭৫ কোটি টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৭ দশমিক ৫১ শতাংশ। গ্রাহক পর্যায়ে ৯ শতাংশ সুদে নি¤œ আয়ের পেশাজীবী কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য তিন হাজার কোটি টাকার পুনঃতহবিল স্কিম চালু করা হয়েছিল, বিতরণ করা হয়েছে দুই হাজার ২১৬ কোটি টাকা। শতভাগ ঋণ বিতরণ করা হয়েছে রফতানি উন্নয়ন তহবিল থেকে ২১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত এ খাতে সুদের হার ছিল পৌনে দুই শতাংশ। এর বাইরে এসএমই খাতের ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমের দুই হাজার কোটি টাকা, পর্যটন খাতে এক হাজার কোটি টাকা, রফতানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের বেতনভাতার জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকা, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সুদ ভর্তুকি দুই হাজার কোটি টাকা এবং কৃষি খাতে পুনঃঅর্থায়ন স্কিমে পাঁচ হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
Leave a Reply