1. admin@banglahdtv.com : Bangla HD TV :
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৪২ অপরাহ্ন

রক্ত শোষকদের বিরুদ্ধে কোনো আপস নেই- আলহাজ্ব মো: জামির হোসেন।

ডেস্ক রিপোর্ট
  • Update Time : মঙ্গলবার, ৪ জানুয়ারী, ২০২২
  • ২০১ Time View
আলহাজ্ব মো: জামির হোসেন, সহ-সভাপতি , কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দল ও টিম প্রধান খুলনা বিভাগ।

জেগে স্বপ্ন দেখলে তা ঘুমাতে দেয় না। সে স্বপ্ন সফল করার জন্য মানুষ পাগলপারা হয়ে যায়। মানুষের সম্মান মর্যাদা আর শান্তি স্বস্তি কোথায় লুকিয়ে আছে; তাকে বের করার পথ যত কণ্টকাকীর্ণ হোক, সে পথে এগিয়ে যেতে পদযুগল যত ক্ষতবিক্ষতই হোক তার সন্ধান সে করবেই। সেই অনুসন্ধানীর দলে যারা সাথী হবেন তাদের সেই পথ কষ্টের কথা ভাবলে চলবে না। আত্মসুখের সব কিছু তাকে ভুলতে হবে। যে দিন সেই লুক্কায়িত সুখের সন্ধান মিলবে সে দিন সবাই আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠবে। ঠোঁটের কোণে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠবে। সেই ঝাণ্ডাবরদারে লুক্কায়িত সুখের পথ অনুসন্ধান করার সড়কে তার কারাভান যখন এগিয়ে যাবে, তখন তাকে ভুল পথে নেয়ার হাজারো লোভ লালসা আসবে অগণিত বহুরূপী বন্ধু তার ‘কারাভান’-এর শরিক হতে চাইবে, ছুটে আসবে শত চাটুকার। সে এক মহা পরীক্ষা। ‘সোনারু’ যেমন স্বর্ণ থেকে খাদ বের করে ফেলে, রৌপ্যমুদ্রা বাজিয়ে দেখতে হয়; তা খাঁটি না, ভেজালে ভরা; সব ঝিনুকে মুক্তা থাকে না, এটা স্মরণে রাখতে হবে। নেতৃত্বের মোহ এবং তার আকাক্সক্ষা বহুজনেরই আছে, যারা কর্তৃত্ব করার ক্ষমতা অভিলাষী এবং তা পেতে চায়, তারা ‘ঋষি’ নয় যে, সব লোভকে জয় করতে পারবে। তারা আসলে কর্তৃত্ব করার জন্য লালায়িত হয় আত্ম সুখ আর প্রাপ্তির আশায়। মানুষের দুঃখ বেদনায় কাতর হয়ে তাদের সেবায় নিবেদিত হতে চায়। কোনোকালেই কারো মনই এতটা সফেদ হয় না। এমন মানুষ বিশ্বে ক্ষণজন্মা। কথিত আছে মহাবীর আলেকজান্ডার মৃত্যুর শয়ানে সহযোগীদের বলেছিলেন, আমার মৃত্যুর পর শবযাত্রায় আমার হাত দুটো কফিনের বাইরে রেখে দিবে যাতে জগত দেখতে পায়, বিশ্ববিজয়ী আলেকজান্ডার শূন্য হাতে পৃথিবী ত্যাগ করছে। সেটা ছিল তার সততার শক্তি, এমন দৃশ্য মানুষকে বিস্মিত করে। আর আমাদের ক্ষেত্রে এমনটা কল্পনার অতীত। আমাদের সমাজের বাস্তবতা হচ্ছে, এমন এন্তার অভিযোগ আছে- রাষ্ট্রব্যবস্থায় আত্মগোপন করে আছে হাজারো সর্বভুক। যখনই সুযোগ পায় দেশের-দশের সম্পদে খাবলা মারে। প্রজাতন্ত্রের এমন এক শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারীও আছে যারা সেই সর্বভুকদের কাছ থেকে পায় সেলামির বিনিময়ে। সেই সব ব্যক্তির ব্যাপারে তারা আকাশের মতো প্রশস্ত ও উদার। এমন হৃদয় নিয়ে সেই সর্বভুকদের সহযোগিতায় যেন একপায়ে দণ্ডায়মান। তাই, শুনি দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে। সুইস ব্যাংকে অসংখ্য বাংলাদেশীর বিপুল অর্থ জমা আছে এবং জমা হচ্ছেও। সে জন্যই শুনতে পাই, দেশের অগণিত মানুষ হতদরিদ্র হচ্ছে; দেশের মধ্যবিত্ত সমাজ বিলীন হওয়ার পথে। এমন রক্ত শোষকদের বিরুদ্ধে কোনো আপস নেই।

গণতান্ত্রিক দেশে সুস্থ রাজনীতি, আইনানুগভাবে গঠিত রাজনৈতিক দল, নির্বাচনের সাথে সংশ্লিষ্ট সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, সামাজিক শক্তি, মানবাধিকারকর্মী- সবাই তাদের আচরণ ও কার্যক্রম শুদ্ধতার আলোকে উত্তীর্ণ হওয়া, সময়ের দাবি। স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী অতিক্রম করার পর উল্লিখিত প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি, গোষ্ঠী সবার স্কন্ধে এখন দায়িত্ব কর্তব্য অর্পিত হয়েছে যে, এখন ইতিবাচক, সময়োপযোগী এবং পরিপক্ব ভূমিকা পালন করতে হবে। গণতান্ত্রিক সমাজে বহু মত পথের মানুষ নানা আদর্শ দৃষ্টিভঙ্গি বহন করে চলে। এমন বিচিত্র বৈশিষ্ট্যেপূর্ণ সমাজ, এমন অবস্থা বিরাজ করাই স্বাভাবিক। তাকে নেতিবাচক ব্যাপার হিসেবে ভাবার কোনো কারণ নেই। বরং গণতান্ত্রিক সমাজের সৌন্দর্য যেমন এক বাগানে রঙ-বেরঙের ফলের সমারোহ। তাকে পরিচর্যা করবে যাতে রঙ ও জাতি; ফলগাছ বেঁচে থাকতে পারে। সমাজের বৈচিত্র্য ও বিকশিত হওয়া, পূর্ণতা দানের জন্য সবাই ধৈর্যসহ্যের অধিকারী হওয়া বা সবাইকে ‘অ্যাকোমোডেটিভ’ হতে হবে। সবাইকে নিয়ে চলার চেতনাকে লালন করা নিয়ে কারোই পেছনে পড়ে থাকাটা চলবে না। পৃথিবীতে যেসব দেশে গণতন্ত্রের শুদ্ধ চর্চা হয়, সেখানকার নাগরিকরা এই দীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সমাজে শান্তিশৃঙ্খলার মধ্যে বসবাস করে। আমাদের সমাজ এখনো সেই বোধে উজ্জীবিত নয়। তাই এখানে বিভেদ কূট তর্কের ‘ভাইরাস’-এর অস্তিত্ব জীবন্ত রয়েছে। এসব ভাইরাসকে জীবিত রাখা যাবে না। সবাইকে এর প্রতিষেধক হিসাবে মনমস্তিষ্কে ঐক্যের চেতনাকে গুঁজে দিতে হবে এবং রাজনীতিতেও এই শৈলী প্রোথিত করে দিতে হবে।

আমরা কাজকে জীবন একান্ত সহযোগী করতে পারিনি। যতটুকু করি তাও অপরের ঘরে দীপ জ্বালানোর চিন্তায় থাকি। অন্যের উদ্যোগ উদ্দীপনায় নিজেকে শরিক করার স্বপ্নই দেখি। অন্যের চরকা ঘুরিয়ে ধন্য হতে চাই। এ ক্ষেত্রে দক্ষতা একাগ্রতা আর নিবেদিত হওয়ার ব্যাপারেও আমরা মনোযোগী নই। সে জন্য দেশের বেশির ভাগ মানুষ ‘করিৎকর্মা’ বলে বিবেচিত হতে পারেনি। তা ছাড়া অলসতা আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে আছে। ব্যক্তির নিজে উদ্যোক্তা হবার স্বপ্ন নেই, সেই সাথে মেধা অধ্যবসায়, উদ্ভাবনী শক্তি আমাদের কম। যেখানে পড়ে আছি সেটিই নিয়তি বলে স্থবির হয়ে থাকাই আমাদের স্বভাব। যারা নিজেদের ভাগ্য বদলে ব্রতী নয়, স্রষ্টাও তাকে সাহায্য করেন না। তা ছাড়া পশ্চিমের মতো উচ্চমূল্যে শ্রম বিনিয়োগের সুযোগ তো এ দেশে নেই। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় এমন ধারণা নেই যে, স্বীয় উদ্যোগে স্বয়ম্ভর হতে হবে। যাই হোক আমাদের দেশের যে পরিবেশ পরিস্থিতি তাতে স্বীয় উদ্যোগে কিছু করা সহজ নয়। বিশেষ করে অর্থের বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, নিজের কাছ থেকে অর্থ জোগান দেয়া কঠিন। আর অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠানের নানা ঘোরপ্যাঁচও অর্থ পাওয়ার জন্য কঠিন। তার পরও ইংরেজিতে একটা কথা আছে, ‘ইফ দেয়ার ইজ অ্যা উইল, দেয়ার ইজ অ্যা ওয়ে’। প্রবল ইচ্ছা আর চেষ্টা মানুষকে ঈপ্সিত লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে সাহায্য করে।

অতীতে আমাদের যত ব্যর্থতা সেটা অক্ষমতাজনিত কারণেই। গত ৫০ বছরে দেশ যে প্রগতির সড়কে উঠে যাওয়ার কথা ছিল, সে লক্ষ্যে উপনীত হতে না পারা, উপরোক্ত ত্রুটিবিচ্যুতিগুলোই তার কারণ। নির্জীব হয়ে থাকা ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র শত দুর্ভোগের মধ্যে পড়ে এখন হাবুডুবু খাচ্ছে। অতীতে আমাদের সব ভ্রষ্টতার গ্লানি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। পিছনের কথা ভেবে কালক্ষেপণ নয়, ঘুরে দাঁড়াতে হবে। নতুন দিনের প্রত্যাশা আর প্রত্যয় নিয়ে ঝাণ্ডা হাতে সারিবদ্ধ হয়ে অগ্রসর হতে হবে। মত পথের ভিন্নতা থাকলেও যতদূর পর্যন্ত একসাথে চলা যায় সে চেষ্টা থেকে বিরত থাকা যাবে না। ঐক্যটাই শক্তি, বিভেদ দুর্বল করে তোলে। যে সারিবদ্ধ কাতারের কথা বলছি, তার সম্মুখে থাকতে হবে রাজনৈতিক সামাজিক সংস্কৃতি ও অর্থনৈতিক সংগঠনগুলোকে। তাদের সবার দৃষ্টি প্রসারিত হবে দিগন্তরেখা বরাবর, সম্মিলিত উদ্যোগে নির্মাণ করতে হবে সাফল্যের মিনার। রাজনীতি ও অন্য ক্ষেত্রে শত ভিন্নতা থাকলেও ভিন্ন ভিন্ন পথে সবাই তো পৌঁছাতে চায় একই লক্ষ্যে আর সেটা রাষ্ট্রে ভালাই। এজন্য কাউকে অবজ্ঞা অবহেলা অমিত্র ভেবে দূরে সরিয়ে দেয়া হবে ভয়ানক ভুল। প্রতিটি ব্যক্তির সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তাই সবাই যদি দেশ স্বার্থকে সবার উপরে স্থান করে দেয় সব মত পথে সমন্বয় ঘটাতে পারা যায়; তবে সম্মুখের বদ্ধ লৌহ কপাট পর্যন্ত উন্মুক্ত হবে। প্রতিটি মানুষকেই সে জন্য সম্মান মর্যাদা দিতে হবে। তাহলে সবার জন্য স্বস্তি কল্যাণের দিগন্তরেখা স্পর্শ করা সম্ভব হবে। সবাইকে ঘুমিয়ে নয়, জেগে থেকে নতুন দিনের স্বপ্ন দেখতে হবে। ঘুমিয়ে যে স্বপ্ন দেখা হয়, তা প্রত্যুষে মরীচিকার মতো মিলিয়ে যায়। আর সেটা আলো নয়, আলেয়া।

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সুষ্ঠু রাজনীতির কথা বলে বক্ষ্যমান এই নিবন্ধের সূচনা করা হয়েছে। এমন রাষ্ট্রব্যবস্থার অপরিহার্যতা নিয়ে কোনো বিতর্ক দ্বিমত থাকার কথা থাকতে পারে না। তবে জানতে চাওয়া যেতে পারে সুষ্ঠু রাজনীতির স্বরূপ ও এর সুফলটা কী? সহজ জবাব এই যে, সে রাজনীতি মুখ্য বিষয় দেশের সব মানুষের চাওয়া আর প্রয়োজনের নিরিখে অবিরাম অবিরত রাষ্ট্রযন্ত্র সে পথে নেয়ার চেষ্টা করা; উপরে যে সর্বভুকের কথা বলা হয়েছে তাদের পেটে খাদ্য রাখার থলিটা অস্ত্রোপচার করে ছোট করে দেয়ার ব্যবস্থা করা। তাদের দীর্ঘ হাত দুটো খাটো করে দেয়া রাষ্ট্রে সহায় সম্পদ যে পথ দিয়ে বের হয়ে যায়। সে পথের যত ছিদ্র আর ফুটো রয়েছে সেগুলো এমনভাবে সিল করতে হবে, যাতে সেই ছিদ্রপথ দিয়ে কিছু চুঁইয়ে যেতেও না পারে। দেশের সব মানুষসহ বিশেষভাবে যারা রাষ্ট্রযন্ত্র পরিচালনা করে সব রকম যোগ্যতা আমানতদারিতার গুরুত্ব দেয়া এবং ভালো তদারকি চাই।

আজ বিশ্বে যে যুদ্ধ তা শুধু অস্ত্রের ভাণ্ডারের মজুদ বাড়ানোর পাশাপাশি বিজ্ঞান প্রযুক্তির মেধা বুদ্ধি কূটনীতিকে শাণিত আর তীক্ষ্ম করা। সেখানে গুরুত্ব দিতে হবে যাতে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়তে না হয়।

প্রত্যেক ব্যক্তির সীমাবদ্ধতার কথা বলেছি, এই বোধ যারা সঠিক বলে মত পোষণ করে, জীবনে তাই চর্চা করে। এমন ব্যক্তির দম্ভ অহংবোধজনিত সব কর্মকাণ্ডে ত্রুটিবিচ্যুতি থেকেই যাবে। রাষ্ট্রীয় জীবনে এমন সব অহংকারীকে রুখতে, তাদের হাতে ক্ষমতা কর্তৃত্ব যাওয়া অর্থ, সমূহ বিপদকে আমন্ত্রণ জানানো। তাই এসব ব্যক্তিকে ছেঁটে ফেলার পথ হচ্ছে যাচাই-বাছাইয়ে পথ অবারিত করা। মনে রাখতে হবে এই যাচাই বাছাই কাজটি ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর নয়। তা সেসব মানুষের হাতে সোপর্দ করতে হবে। প্রকৃত পক্ষে তো তারাই দেশের মালিক। আর বাছাইয়ের কাজটি স্ফটিকের প্রশ্নহীন নির্বাচনকেই বোঝাচ্ছি। যা আজ কণ্টকাকীর্ণ করে তোলা হচ্ছে। প্রশ্নহীন ও স্বচ্ছ হবে, বাছাই করা বলতে এসব জঞ্জাল পরিষ্কার করার সময় উত্তীর্ণ হয়ে যাচ্ছে। ব্যক্তি গোষ্ঠীর কব্জা থেকে দেশকে শুদ্ধতার পথে নিয়ে যেতে হবে।

গত ৫০ বছরে এমন ব্যক্তিদের হাতেই অধিকাংশ সময় দেশের কর্তৃত্ব করার ভার ছিল এবং রয়েছে। ফলে সমাজ বৈষম্য, অব্যবস্থা আর অসহিষ্ণুতায় ভরে গেছে। কোনো ফোরাম নেই যেখানে আলোচনা, সমালোচনা, তর্ক, বিতর্কের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় জমাট বাধা যত আবর্জনা দূর করা যায়।

চলমান বিশ্বব্যবস্থা সম্পর্কে অগ্রসর মানুষ সম্যক অবহিত। বিশ্বের এগিয়ে থাকা দেশগুলো যে পথ ও পন্থা অবলম্বন করে তাদের নাগরিকদের সন্তুষ্ট করতে পেরেছে তথা যে জীবন মানের অধিকারী করেছে, তাদের ক্ষোভ বেদনা তেমন নেই বললেই চলে। তা ছাড়া বিদ্যা জ্ঞান সব সুযোগ অবারিত; বৈষম্যের কোনো অবকাশ নেই। উপরে ওঠার অর্থাৎ নিজেকে যোগ্যতর করার যে মইটা দরকার সেটি তাদের পদযুগলের খুবই সন্নিকটে থাকে। এ জন্য তাদের কোনো অনুশোচনা নেই যে, সে রাষ্ট্রের থেকে সুযোগ সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে বঞ্চিনার শিকার হয়েছে।

আমাদের দেশের মানুষও তেমন জীবন রচনার স্বপ্ন দেখে। সে স্বপ্ন পূরণের জন্য রাষ্ট্রে সক্ষমতা বাড়াতে হবে। তা বৃদ্ধি করা কঠিন নয়, উদ্যমী মানুষের অভিধানে অসম্ভব শব্দটি নেই। আমরা উপরে বলে এসেছি দেশে বিপুল অর্থ এধার ওধার দিয়ে লোপাট হয়ে যাচ্ছে, তাকে আটকানোর কথা বলেছি। অদক্ষতা, গাফিলতির জন্য দেশের মোটা অঙ্কের অর্থ অপচয় হচ্ছে। হাজার হাজার কোটি টাকার এমন বহু প্রকল্প যথাযথ তদারকির অভাবে, প্রকল্প নির্মাণের সামগ্রী ক্রয়ের ক্ষেত্রে অনিয়ম কারচুপির মাধ্যমে হিসাবের বাইরে দুর্নীতিবাজরা নিজেদের পকেটস্থ করছে বা দেশের বাইরে পাচার করছে। এটা অস্বীকার করা যাবে না, দেশের বহু বড় বড় এবং জনহিতকর প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে এবং অনেক প্রকল্পের কাজ চলছে। এসব প্রকল্পের সবগুলো থেকে কতজন উপকৃত হচ্ছে তা নিয়ে যে বিতর্ক তাতে না জড়িয়ে এ প্রশ্ন তুলতে চাই, বড় প্রকল্পের জন্য বহু অর্থের জোগান দিতে হয়। এমন সব প্রকল্পে অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে দুর্নীতিবাজরা আখের গোছায়। সেটি দেখা হচ্ছে কি? সব খবর পত্রিকায় ও বিভিন্ন মিডিয়ায় পড়ি ও শুনি। তাতে সবার এই ধারণাই জন্মেছে, দেশের অর্থ খুব বেশি নষ্ট হচ্ছে যার বিবরণ উপরে কিঞ্চিৎ দেয়া হয়েছে। দেশের দুর্নীতি রোধের জন্য যেসব সংস্থা আছে, সেখানে অনিয়ম থাকতে পারে এবং তাদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে বাধা, চাপ রয়েছে। এমনকি রাজনৈতিক চাপের কথা রয়েছে। এসব অনিয়ম অব্যাহতভাবে চলতে থাকলে যে উন্নয়নের স্বপ্ন আমরা দেখছি, তা সফল করা কিভাবে সম্ভব হবে? আমাদের যারা দিশারী তারাসহ সবার জীবনতো একটা, তাও খুব সংক্ষিপ্ত। একটি সর্বাঙ্গীণ সুন্দর জীবনের জন্য অনুশোচনা নিয়েই পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হবে। স্বয়ং আমাদের স্রষ্টা, যার ভালোবাসায় সবাই সিক্ত, তিনি বলেছেন, তোমরা ইহজগতে পর জগতের কল্যাণের অšে¦ষণ করো। তার দেয়া উপহার তথা সুন্দর সব নেয়ামত যদি পথে পথে লোপাট হয়ে যায়, তবে যাদের দেখভালের দায়িত্ব তারা রক্ষক থেকে ভক্ষক হয়ে পড়ে। তবে তার বিহিত তো করতে হবে।

তাদের জবাবদিহি করার শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন। তা গঠন করার প্রক্রিয়া উপরে সামান্য বলেছি। দেশে এমন প্রতিষ্ঠান তথা সংসদ নেই তা বলছি না। অনিয়ম চলতে থাকলে সেই জবাবদিহি নেয়ার প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব থাকার অর্থটা কী? তার সরল উত্তর- সেই প্রতিষ্ঠান নিষ্ক্রিয়, অকার্যকর। একটি গণতান্ত্রিক দেশের অপরিহার্য প্রতিষ্ঠান সংসদ। সেটি আছে বটে তবে অকার্যকর। কেননা এর গঠন প্রক্রিয়ায় বিস্তর ত্রুটি রয়েছে যা কিনা জনগণের সঠিক প্রতিনিধিত্ব করে না বলে যত গোল। সেজন্য দেশের গণতন্ত্র এখন শত প্রশ্নের সম্মুখীন। জনগণ যে হিরণ্ময়তায় স্বপ্ন দেখে, এমন সংসদ তাকে মেঘে ঢেকে দেবে।

রাজনীতির ক্ষেত্রে দু’টি মৌলিক বিষয় আমরা বরাবর উপেক্ষা করছি; মাঠে ময়দানে রাজপথে সভা সমাবেশ মিছিল স্লোগান এসব রাজনৈতিক সাংবিধানিক অধিকার; তবে তার ফলাফল খুব একটা কার্যকর নয়। সাচ্চা গণতান্ত্রিক দেশে রাজনৈতিক দাবি দাওয়া নিয়ে কদাচিৎ মিছিল বিক্ষোভ সমাবেশ আয়োজন করা হয়, কিন্তু সেখানে রাজনৈতিক দলের নেতাদের উপস্থিতি একেবারেই দেখা যায় না। কারণ রাজনৈতিক তর্কবিতর্ক আলোচনা-সমালোচনা সংশ্লিষ্ট সব গণতান্ত্রিক ক্রিয়াকর্ম সংসদের ভেতরই হয়। আমাদের রাজনীতিকেও সংসদে নিতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে অপরিহার্য শর্ত, সেসব দেশের মতো নির্বাচন হতে হবে যাতে সত্যিকার জনপ্রতিনিধি সেই মহান সংসদে যেতে পারেন, তার শুদ্ধ সঠিক ব্যবস্থা করা। যে সাংবিধানিক সংস্থা এবং রাষ্ট্রীয় সংস্থা যারা নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্বে নিযুক্ত তাদের অবশ্যই নির্বাচনের ব্যাপারে যে সাংবিধানিক চেতনা, দীক্ষা রয়েছে তা উচ্চকিত রাখতে হবে। সেই সাথে ক্ষমতাসীন সরকার এবং সব রাজনৈতিক সংগঠনকে নির্বাচনের ‘নর্মস’-এর কোনো ব্যত্যয় ব্যতিরেকে ইতিবাচক ভূমিকায় থাকতে হবে। বিশেষ করে ক্ষমতায় থাকাটা নিজেদের জন্য স্থায়ী করে নেয়ার ভাবনা থাকলে তা পরিহার করতে হবে, নিজেদের একমাত্র বিকল্প ভাবার যে অহমিকা তা ভুলে যেতে হবে। তবেই রাজনীতি রাজপথ থেকে সংসদ অভিমুখী হবে।

আর যে বিষয়টি জাতি আকাঙ্ক্ষা করে, তা হচ্ছে দেশের সব ক্ষেত্রে দক্ষ যোগ্য কর্মঠ ন্যায়নিষ্ঠ নেতৃত্ব। রাজনীতির ক্ষেত্রে তো বটেই সব পর্যায়ে উল্লিখিত মানের নেতৃত্বের প্রয়োজন। সেসব গুণাবলির অধিকারী যুবক দেশের উচ্চমানসম্পন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে তৈরি হতে পারে। আজকে যে নেতৃত্ব রাজনীতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে জাতিকে পথনির্দেশ করছে, তাদের অধিকাংশই এতটাই গতানুগতিক, বিবেচনায় আর মানে বিশ্বমানের তো দূরের কথা যোগ্যতা পারঙ্গমতা আর উদ্ভাবনী শক্তির বিবেচনায় তারা শেষ সারিরেই অবস্থান করছে। এভাবে চলতে থাকার অর্থ হচ্ছে আমরা যে তিমিরে আছি, সেটিই স্থায়ী করে নেয়া। আমাদের ফেলে আসা পথ নিয়ে গর্ব করার কিছুই নেই। এমন দেউলিয়াত্ব নিয়ে আর কতকাল চলা যাবে। যে সমাজের নেতৃত্ব জাতিকে স্বপ্ন দেখাতে, জাগিয়ে তুলতে অক্ষম, সেই সমাজের সুন্দর আলকোজ্জ্বল প্রভাতের প্রত্যাশা করা বাতুলতা মাত্র। আমাদের সম্মুখে এগিয়ে যাওয়ার দিকনির্দেশনা তো দেশের পূর্বসূরি নেতা রাষ্ট্রের প্রাণপুরুষ দিয়ে গেছেন। তবে কেন আমরা সে পথ ছেড়ে অন্ধকারে হাতড়িয়ে মরছি? দেশ বলতে গেলে সব ক্ষেত্রেই বিরাট চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।

তাকে মোকাবেলা করার মতো প্রজ্ঞা ব্যুৎপত্তি ধীশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তি একেবারে নেই তা হয়তো নয়। অথচ দেশকে এগিয়ে নেয়ার যে ভিশন তুলে ধরা হয়েছে সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর যোগ্য ব্যক্তির সংখ্যা হাতেগোনা। অথচ সম্মুখে যে কার্যক্রম অপেক্ষা করছে তার সম্পূর্ণ দায়িত্ব স্কন্ধে নিতে মানুষ ভাড়া করতে হবে। আগে উল্লেখ করেছি দেশের প্রয়োজন মেটানোর জন্য দরকার উচ্চমানসম্পন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের। উচ্চমান অনেক দূরের কথা, দেশে এখন উচ্চ শিক্ষালয়গুলোর অবস্থা এমন পর্যায়ে, সেখানে নিরীহ মেধাবী সহপাঠীকে খুনের দায়ে তার সহপাঠীদের এখন ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যু কার্যকর করার সিদ্ধান্ত উচ্চ আদালত দিয়েছেন। এই ন্যায়বিচার অবশ্য কাম্য; কিন্তু সেই সাথে এমন ঘটনা জাতির জন্য পরম লজ্জা আর গ্লানির; তাতে কোনো সন্দেহ নেই। উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিদ্যাভ্যাসের পরিবর্তে খুনখারাবিতে ছাত্ররা ব্যস্ত। দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রদের কল্যাণে উচ্চতর দীক্ষা পাওয়ার স্বার্থকে নিয়ে কোনো আন্দোলন হয় না। পরিবর্তে ছাত্র আন্দোলন হয় রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে। কেননা বেশির ভাগ ছাত্র কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি করছে। দরের এজেন্ডা বাস্তবায়নের মিছিল মিটিংয়েই তারা শরিক থাকে। দেখা যায় ক্লাস রুমগুলো ফাঁকা পড়ে আছে। এটা অবশ্য ‘কোভিড’ পূর্বকালের কথা।

বিশ্বের সব উচ্চ শিক্ষালয়ে নানা বিষয়ে বিদ্যা দান করা হয় বটে। সেই সাথে প্রযুক্তিবিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা কার্যক্রমের ওপরও সবিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়। উন্নত দেশগুলোতে গবেষণা কার্যক্রম রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন পরিকল্পনার অংশ। গবেষণা, সমাজ, অর্থনীতি, কৃষি, চিকিৎসাবিজ্ঞান, পরিবেশ ও ইকোলজিক্যাল বিষয় নিয়ে তাদের অনুসন্ধান আবিষ্কারের ফলাফল দ্রুত জাতীয় জীবনে জনগণের কল্যাণের জন্য কাজে লাগানো হয়। এ ক্ষেত্রে আমাদেরও সে পথে চলতে হবে যাতে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কল্যাণ নিহিত রয়েছে। রাজনীতিকরা দল ও দলের রাজনীতির প্রতি কমিটেড থাকেন। কিন্তু প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাদের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে রাষ্ট্রের প্রতি। তাদের লক্ষ্য রাষ্ট্রের কল্যাণে তাদের সবটুকু মেধা প্রচেষ্টা নিয়োজিত করা। আমাদের সংবিধানে রয়েছে অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য সব বৈষম্য দূর করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নির্বাহীদের প্রতি নির্দেশনা। প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়া নিয়ে অভিযোগ রয়েছে। বহু ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা বৈষম্য দূর করার পরিবর্তে তা আরো বৃদ্ধি পায়। এমন অগণতান্ত্রিক চেতনাকে পাল্টাতে প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাদের ভূমিকা রাখতে হবে। কর্মকর্তাদের এ কথা ভুলে গেলে চলবে না, দেশের সুশাসনের সূচক ক্রমাগত নিম্নগামী। বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধের সূত্রে জানা গেছে, গণতান্ত্রিক বিবেচনায় নাগরিক অধিকারের ক্ষেত্রে ২০২১ সালে বাংলাদেশের স্কোর ১০০ মধ্যে ৩৯এ নেমেছে। সেখানে ২০১৭ সালে ছিল ৪৭। অথচ রাষ্ট্রের মূল নীতি হচ্ছে, সুশাসন কায়েম, মানুষের সব দুঃখ বেদনা কষ্ট লাঘব করা।

কল্যাণ রাষ্ট্রের আরেকটি অপরিহার্য বিষয় হচ্ছে আইনের শাসন অর্থাৎ সব ক্ষেত্রে আইনের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা। আইনের শাসনে শাসক ও শাসিতে সমতার বিধান, শাসক হলেই শাসিতের ওপর প্রাধান্য পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু দেশের বাস্তব অবস্থা এমন যে, শাসক মনে করেন তিনি আইনের ঊর্ধ্বে, অর্থাৎ ধরাছোঁয়ার বাইরে তার অবস্থান। শাসকরা এমনটা ভাবেন বলে তারা তাদের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে এ কথা মনে রাখেন না, কতটা তিনি করতে পারেন আর কতটা পারেন না। আইনের বিধান থেকে বিচ্যুতি ঘটায় দেশে নানা অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি তাদের দ্বারা সংঘটিত হচ্ছে। নিজস্ব বিচারে ভালো মন্দ বলে যা বোঝে বা মনে করেন সেটি করেন বলে বহু ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় নীতি-আদর্শের সীমারেখাও তারা অতিক্রম করে যান যার পরিণতিতে অন্যায় অব্যবস্থা দেশে বিস্তার লাভ করেছে। এমন চেতনাই স্বৈরাচারের যা পুরোপুরি গণতান্ত্রিক চেতনার পরিপন্থী।

দেশে যে বাজারব্যবস্থা বিরাজ করছে তা যুগপৎ সুশাসন ও আইনের শাসনের অকার্যকরতার শামিল বলে অভিযোগ রয়েছে। সরকারি কর্মকর্তা র‌্যাব ও পুলিশের বাড়াবাড়ির প্রতিকার পাচ্ছে না। মানবাধিকার কমিশন অনেকটাই অক্ষম। এমন একটি সংস্থাকে যদি যথাযথ ভূমিকা পালনের ক্ষেত্রে বাধার সম্মুখীন হতে হয় তবে সেই সংস্থার পক্ষে কাজ করা কষ্টকর বটে। সে ক্ষেত্রে দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা নিয়তই ঘটছে। কিন্তু তার প্রতিবিধানের আরেকটা সমস্যা হচ্ছে দেশের বেশির ভাগ মানুষ জানেই না কী তার অধিকার। কোথায় তার বঞ্চনা বেদনার প্রতিকার চাইতে হবে? এ সম্পর্কে মানুষকে অবহিতকরণের বিষয়টি জরুরি বলে বিবেচনা করা উচিত। মানবাধিকার সুরক্ষার আইন ও সরকারি সংস্থা রয়েছে তার পরও কেন তা বলবৎ হচ্ছে না? মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেছেন, এক. এ-সংক্রান্ত আইনের দুর্বলতা, তা সংশোধন করা কি কঠিন ব্যাপার? সরকার চাইলে তা ত্বরিত করতে পারে। তবে কেন তা হচ্ছে না? কমিশনে খোদ চেয়ারম্যান আইনের দুর্বলতার এই কথা এক সমাবেশে অভিযোগ করেছেন। এমন খুৎ রেখে আইন রচনা করা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত যেসব প্রতিষ্ঠানের কাঁধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার ভার তাদের নিয়ে নানা অভিযোগ অনুযোগ রয়েছে। এতে সেসব বাহিনীর ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। সম্প্রতি তাদের কার্যক্রম নিয়ে আন্তর্জাতিক নেতিবাচক সব আলোচনা হচ্ছে। এর মূল কারণ, সেসব বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে নীতি নৈতিকতার চেতনার দীক্ষা দেয়া হয় বলে মনে হয় না। অথচ তাদের ওপর জনগণের সুরক্ষার দায়িত্ব রয়েছে। কারো ওপর জুলুম নির্যাতন হলে তার পাশে দাঁড়ানোর মহান দায়িত্ব তাদের স্কন্ধে রয়েছে। সে জন্য আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং মানবাধিকার বলবৎ করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখা রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব। এটাই মানবাধিকার নিয়ে দ্বিতীয় সমস্যা।

মানবাধিকার যদি সুরক্ষিত হয় তার অর্থ, দেশের সুশাসন কার্যকর। আমাদের গণতন্ত্র এখন তো প্রহসনে পরিণত হয়েছে, সে নিয়ে দেশে বিদেশে নানা অভিযোগ আপত্তি ও জনমনে অসন্তোষ অনুরূপ মানবাধিকার এখন নিছক একটি শব্দ হয়ে আছে, তাই চতুর্দিকে বঞ্চনা, বৈষম্য বিরাজ করছে। সংবিধানে মানবাধিকারের যে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, তা অর্থহীন হয়ে আছে। মানবাধিকার কমিশন একটা অকার্যকর প্রতিষ্ঠান হয়ে আছে; এতে বদ্ধমূল হয়ে উঠেছে, এমন একটা প্রতিষ্ঠান থাকা লোক দেখানোর জন্য প্রয়োজন; তাই তার প্রতিষ্ঠা।

দেশকে সময়ের সাথে এগিয়ে যাওয়া তথা তাল মিলিয়ে চলার জন্য অবশ্যই শাসন ব্যবস্থায় গুণগত পরিবর্তন আনা এখন সময়ের দাবি। আমাদের ভালো থাকতে হলে এমন অঙ্গীকার করতে হবে, যে শাসনব্যবস্থা এখন চলছে তার রূপান্তর এনে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাদের অবশ্যই রাজনৈতিক নির্বাহীদের দিকনির্দেশনা অনুসারে কাজ করতে হবে। তবে তাদের ভুলত্রুটি ও অপরিণামদর্শী কর্মকাণ্ডকে রুখে দেয়ার ‘কারেজ’ কর্মকর্তাদের থাকতে হবে। তাদের (আমলা) ভূমিকা রাখতে হবে এবং পরামর্শ দিতে হবে সে পথেই চলার, যা দেশ ও দশের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়ার পথ। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত অনেক ব্যক্তিগোষ্ঠীর মঙ্গলের দিকে তাকিয়ে নিতে চান।

রাজনৈতিক নির্বাহীদের সমস্যা তাদের এখন বাছাই করার পদ্ধতিতে তথা নির্বাচনে এখন যে গলদ বিদ্যমান, তাতে সৎ যোগ্য ও ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তিদের বাছাইয়ের কাজটি জনগণের পক্ষে করা আজ সম্ভব হচ্ছে না। যোগ্য সৎ তথা গুণীজন কখন আজকের নির্বাচনের যে পরিবেশ তাতে নির্বাচনে অংশ নিয়ে মান ইজ্জত খোয়ানোর মানসিকতা পোষণ করেন না। তাতে ফল এটাই হচ্ছে, দেশ যোগ্য নেতৃত্বের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, যাদের হাতে সমৃদ্ধি আসতে পারত।

লেখক: আলহাজ্ব মো: জামির হোসেন, সহ-সভাপতি , কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দল ও টিম প্রধান খুলনা বিভাগ।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2020 banglahdtv
Design & Develop BY Coder Boss