কারাবাখ ও লিবিয়ার যুদ্ধক্ষেত্রে তুরস্কের তৈরি ড্রোনগুলো শুধু বিপুল সাফল্যই লাভ করেনি তারা বিশ্বব্যাপী প্রশংসাও পেয়েছে। এবার সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রচার মাধ্যম এসআরএফও তুরস্কের তৈরি এ বিস্ময়কর অস্ত্রগুলোর গুণকীর্তন করছে।
সাম্প্রতিক বিষয়গুলো নিয়ে আয়োজিত সুইস টিভি প্রোগ্রাম ‘টেন ওভার টেনের’ একটি পর্বে তুরস্কের ড্রোনের সাফল্য নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সোমবার এ অনুষ্ঠানটি সম্প্রচারিত হয়। এ টিভি অনুষ্ঠানে তুরস্কের ড্রোন নির্মাতা কোম্পানি বায়কারের জেনারেল ম্যানাজার (সাধারণ ব্যবস্থাপক) সেলজুক বায়রাকতারের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়।
ওই টিভি অনুষ্ঠানের সামরিক বিশেষজ্ঞরা এ ড্রোনগুলোকে কার্যকর বলে বর্ণনা করেছেন। এ সময় সামরিক বিশেষজ্ঞরা সিরিয়া, লিবিয়া ও কারাবাখের বিভিন্ন যুদ্ধক্ষেত্রে তুরস্কের তৈরি ড্রোনগুলোর সাফল্যের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেন।
এ টিভি অনুষ্ঠানে আলোচকরা বলেন, ‘যুদ্ধক্ষেত্রে এ ড্রোনগুলোর ব্যাপক সাফল্যই তাদের ব্যাপক প্রচার ও প্রসারের কারণ।’ এ টিভি প্রোগ্রামে এ বিষয়টাও প্রচার করা হয় যে তুরস্ক ইউক্রেনে ড্রোনগুলো রফতানি করার জন্য চুক্তি করেছে। অতি সম্প্রতি দেশটি ন্যাটো সদস্য দেশ পোল্যান্ডেও তাদের ড্রোন রফতানির চুক্তি করেছে।
পোল্যান্ড তুরস্কের বায়কার কোম্পানির ২৪টি বায়রাকতার টিবি২ ড্রোন ক্রয় করবে। এ প্রথমবারের মতো কোনো ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশ তুরস্ক থেকে সামরিক ড্রোন সংগ্রহ করল।
পোল্যান্ডের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মারিউজ ব্লাজস্কাক গত সপ্তাহের মঙ্গলবার বলেছেন, ‘তুরস্কের ড্রোনগুলো যুদ্ধক্ষেত্রে প্রমাণিত ও কার্যকর। এ ড্রোনগুলো পোল্যান্ডের সেনাবাহিনীকে আরো শক্তিশালী করবে।’
বায়রাকতার টিবি২ ড্রোন ক্রয় করা চুক্তির বিষয়ে আলোকপাত করে পোল্যান্ডের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, পোল্যান্ড এ সামরিক চুক্তিটি যাতে করে দেশটি তাদের সেনাবাহিনীর জন্য সবচেয়ে ভালো অস্ত্রটি ক্রয় করতে পারে। তুরস্কের ড্রোনগুলো বিষয়ে তিনি আরো বলেন, ‘এ ড্রোনগুলো বিভিন্ন যুদ্ধক্ষেত্রে নিজেদের সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে, এগুলো কার্যকর অস্ত্র। তুরস্কের ড্রোনগুলো পোলিশ বাহিনীর সামরিক সক্ষমতা ও যুদ্ধ জয়ের সম্ভাবনাকে আরো নিশ্চিত করবে।’
ড্রোন নিয়ে তুরস্কের সমর কৌশল বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হয়েছে। বহু দেশ তাদের প্রতিরক্ষা কৌশলকে তুরস্কের বর্তমান সাফল্যের আলোকে পুনর্বিন্যস্ত করছে, যাতে করে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন যুদ্ধক্ষেত্রে যুদ্ধ কৌশলের যে পরিবর্তন হচ্ছে তার সাথে মানিয়ে নেয়া যায়।
বায়রাকতার টিবি২ সশস্ত্র ড্রোনগুলোর উৎপাদন ও উন্নয়ন করেছে তুর্কি প্রতিরক্ষা কোম্পানি বায়কার টেকনোলজিস।
তুর্কি ড্রোনের ৩ লাখ ঘণ্টা ওড়ার রেকর্ড
যে তুর্কি ড্রোন আর্মেনিয়া-আজারবাইজান যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দিলো
২০১৫ সাল থেকে তুরস্কের সেনাবাহিনী ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনী এ ড্রোনগুলো ব্যবহার করছে। সাম্প্রতিক সময়ে কারাবাখ যুদ্ধে আজারবাইজানের সেনাবাহিনীর সামরিক সাফল্যের জন্য এ ড্রোনগুলোকে কৃতিত্ব দেয়া হয়।
মার্চ মাসে তুরস্কের বাস্তববাদী সামরিক কৌশলের অংশ হিসেবে লিবিয়া ও নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চলে এ সশস্ত্র ড্রোনগুলো মোতায়েন করা হয়। এর পরে তুরস্কের এ ড্রোনভিত্তিক সামরিক কৌশলকে মডেল হিসেবে ধরে ব্রিটেনও তার অনুকরণ করে। ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে ন্যাটো সদস্য হিসেবে তুরস্কের ভূমিকার প্রশংসা করেছে। এছাড়া লিবিয়া ও নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চলের সঙ্ঘাতে তুরস্কের ড্রোন ব্যবহারের কৌশলকে নতুন প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির উদাহরণ হিসেবে টানা হয়।
সূত্র : ইয়েনি সাফাক
Leave a Reply