1. admin@banglahdtv.com : Bangla HD TV :
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১:১৪ অপরাহ্ন

চীনের সামরিক ও অর্থনৈতিক উত্থান

কামরুজ্জামান সিদ্দিকী, নির্বাহী সম্পাদক
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১৭ জুন, ২০২১
  • ১৭৯ Time View
চীনের সামরিক ও অর্থনৈতিক উত্থান - ছবি : সংগৃহীত

চীন সার্বিক উন্নয়নের জন্য লড়াই করে এলেও অতি অল্প সময়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সর্বাধিক আলোচিত দেশ। নতুন সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে বিশ্বে স্থান করে নিয়েছে দেশটি। এখন চীন নিরাপত্তার জন্য অর্থনৈতিক প্রবৃত্তিকে সামরিক শক্তিতে রূপান্তর করছে। পূর্ব এশিয়ায় চীন অপ্রতিরোধ্য শক্তিতে পরিণত হয়েছে। প্রতিরক্ষা ও সামরিক খাতে চীনের ব্যয় পূর্ব এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি।

চীনের উত্থানের দিকে দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায়, এর সাথে অর্থনীতি ও সামরিক দু’টি বিষয়ই জড়িত। চীন প্রথমে অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করেছে এরপর সমরনীতি বিষয়ে পুঁজি ও আধুনিক কৌশল প্রয়োগ করে দেশের ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা, পারস্পরিক সহযোগিতা, বাণিজ্যের প্রতি জোর দিয়েছে, একই সাথে বিদেশেও পুঁজি বিনিয়োগ করেছে, যাতে কূটনৈতিক কর্মকাণ্ড সহজতর হয়। চীন অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের সমকক্ষ সুপার পাওয়ার নয়, তথাপি নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে চীন বাধা দেয়ার মতো সক্ষমতা অর্জন করেছে বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সরাসরি কোনো আক্রমণ হলে। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বহু সমস্যার সাথে জড়িত। অন্য দিকে চীনের কর্মকাণ্ড অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, অগ্রসর প্রযুক্তি ও আধুনিক যুদ্ধ উপকরণের মাঝে বেশি জড়িত। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, ২০৩০ সালের ভেতর চীন অর্থনৈতিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে অতিক্রম করবে। ট্রাম্পের আমলে আর্থিক অবরোধ ও অতি চাপাচাপির কারণে ইরান, তুরস্ক, রাশিয়া, চীন ও কিছু সহযোগী দেশ ডলারের পরিবর্তে অন্য মুদ্রায় আন্তর্জাতিক লেনদেন শুরু করে, যা এখনো বিদ্যমান রয়েছে। চীন ‘সানজু’ পলিসি অনুসরণ করে, যার অর্থ হলো- ‘সরাসরি যুদ্ধ ব্যতিরেকে জয়লাভ করা’। এ জন্য চীন পড়শিদের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলছে। তবে ভারতের চীনবিরোধী বিবিধ কর্মকাণ্ডের ফলে সানজু তালিকায় ভারত নেই।

বলা হয়, চীনের সামরিক ও অর্থনৈতিক পরিবৃদ্ধি এশিয়া প্যাসিফিকে যুক্তরাষ্ট্রের ইচ্ছার বিরোধিতা করছে। চীন এই অঞ্চলকে দ্বিপক্ষীয় ও গোষ্ঠীভিত্তিক সহযোগিতামূলকভাবে নতুন করে সাজাতে চায়। বিশ্লেষকরা বলছেন, চীনের সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়া পেন্টাগনের পক্ষে দিন দিন কঠিনতর হচ্ছে। ১৯৯০ সালের দিকে পশ্চিম প্যাসিফিকে চীনের জাহাজ বা বিমান যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ইউনিটে আসার আগেই ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখত এখন ওই সব ইউনিট চীনের মিসাইল, টর্পেডো ও ড্রোন আক্রমণের আওতার ভেতর।

শতাব্দী ধরে চীনের সাথে কিছু পড়শির বিরোধ চলছে, যেমন- ভারত, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান ও ভিয়েতনাম। এখানেও চীন সানজু বা যুদ্ধ ছাড়া বিজয় কৌশল প্রয়োগের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এমন পড়শিও রয়েছে যারা যুদ্ধ করে বিরোধ মেটাতে চায়। তাদের জন্য রয়েছে চীনের ‘নেকড়েযুদ্ধ কূটনীতি ও রণনীতি’, ওলফ ওয়ার ট্যাক্টিকস।

চীনা নৌবাহিনীর দু’টি আধুনিক বিমানবাহী কেরিয়ার রয়েছে, একটি লিওনিং অপরটি শানদং। নিজ কোস্টলাইনের বাইরে বীরদর্পে চীন এসব চালায়, নেভি অফিসার ও পাইলট সমন্বয়ে জটিল যুদ্ধমহড়া অনুশীলন করে। সমরবিদরা এসব কোনো সহজ কাজ মনে করেন না। তবে শি জিং পিংয়ের আরো বড় পরিকল্পনা কাজ করছে। এসব চীন আগাম আভাস দেয় না। এই দু’টি ছাড়াও আরো দু’টি আধুনিক এয়ারক্রাফট কেরিয়ার ইতোমধ্যে তৈরি করা হয়েছে। এগুলো বেশ বড় ও বেশি বিমান ধারণ করতে পারে। এ ছাড়াও পরমাণুবাহী কেরিয়ারও ডিজাইন করা হয়েছে সেগুলো খুব তাড়াতাড়ি যেন তৈরি করে ভাসানো যায় তার ব্যবস্থা করছে সরকার। চীন প্রচুর পরিমাণ উভচর যান বানিয়েছে, যা কোন দ্বীপাঞ্চলে কৌশলী যুদ্ধে কাজে লাগবে। এসব কাজে পশ্চিমাদের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে, চীনের সামরিক সক্ষমতা ও শক্তির নতুন উন্মেষ পশ্চিমাদের ভাবনায় ফেলেছে, ওয়াশিংটন চীনকে থামানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। চীনের বিষয়ে জো বাইডেন ট্রাম্পের চেয়েও বেশি বিচক্ষণতার পরিচয় দেবেন মর্মে মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ জাপানের একটি পত্রিকায় গত নভেম্বরে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন। ড. মাহাথির যুক্তরাষ্ট্রের একজন বড় সমালোচক। বিশেষত ইসরাইলকে সহায়তা করার জন্য তার এ সমালোচনা। তবে তিনি বাইডেনের প্রশংসা করে বলেন যে তার সময় অনেক দেশের সম্পর্কের উন্নতি হবে, যা ট্রাম্পের আমলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

অল্প দিনের মাঝে চীন মেরিন কোরের সদস্য সংখ্যা ২০ হাজার থেকে এক লাখে বর্ধিত করেছে। বিভিন্ন মিশনে তাদের রাত-দিন প্রশিক্ষণ চলছে। প্রসঙ্গত, বিশ্বের বৃহৎ মেরিন সেনাদলের তালিকায় শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র। তাদের সদস্য এক লাখ ৮০ হাজার, চীনের এক লাখ, দক্ষিণ কোরিয়ার ২৯ হাজার, ভিয়েতনামের ২৭ হাজার, থাইল্যান্ড ২৩ হাজার, ইন্দোনেশিয়া ২০ হাজার। চীনের নতুন বিশাল আকৃতির উভচর অ্যাসল্ট জাহাজ কোনো যুদ্ধকবলিত দ্বীপে মেরিনারদের রক্ষা করার জন্য প্রস্তুত। এমন সব যুদ্ধে চীনা সামরিক দফতর ‘মোবাইল কমান্ড সেন্টার’ চালু করেছে, যা প্রচলিত যুদ্ধকৌশল অনুমোদন করে না। দক্ষিণ চীনসাগরে সাজানো হয়েছে ড্রেজড আইল্যান্ডকে। এটি যেন গভীর সমুদ্রে ভাসমান সেনা দফতর।

চীন অন্যান্য দেশ ও মহাদেশে তার অর্থনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধির চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। চীনাদের স্বার্থ ও নিরাপত্তা রক্ষার জন্য মেরিন সেনাবাহিনী ও জাহাজ সাহায্যকারী শক্তি হিসেবে ব্যবহৃত হবে। দূর-দূরান্তে চীনা সম্পদ ও পুঁজির রক্ষণাবেক্ষণের ও নিরাপত্তার জন্য শক্তিশালী বাহিনীর সাপোর্ট বর্তমান বিশ্বে কৌশলগত উপাদান হিসেবে ধরা হয়। ‘মোবাইল কমান্ড সেন্টার’-এর হাতে উদ্দেশ্য-পরিকল্পনা-লক্ষ্যসহ মিশন বুঝিয়ে দিয়ে দায়-দায়িত্ব অপর্ণ করা হয়।

নৌবাহিনীর সমুদ্রের গভীরে চলমান ড্রোন সাবমেরিন ক্যারিয়ারের সাথে থাকে এবং ক্যারিয়ারে স্টিলথ এয়ারক্রাফটও যুক্ত করা হয়েছে। নৌবহরের যুদ্ধবিমান আকাশে রিফুয়েলিং করার ব্যবস্থাসহ কম্পিউটারাইজড মিসাইল সিস্টেম রয়েছে, যার সাহায্যে শত্রুর কেরিয়ার ডুবিয়ে দেয়া যায়। এসব কারণে পিএলএ নেভি বা চীনের নৌবাহিনী শক্তিশালী বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। তবে এই শক্তির উত্থানে পশ্চিমাদের মতো পড়শিরাও অনেকে চিন্তিত।

গেল বছরের শেষের দিকে প্রতিরক্ষা খাতের ব্যয় নিয়ে চীন সরকার শ্বেতপত্র প্রচার করে। সেখানে একটি কথা উচ্চারিত হয়েছে ‘শক্তিমত্তা অর্জিত হলে আক্রমণের প্রয়োজন পড় না’। চীন সামুদ্রিক বিষয়গুলো নিরসনের জন্য নৌবাহিনীর পরিবর্তে মিলিশিয়া ও কোস্টগার্ড দিয়ে সামাল দিতে চায়। এই পলিসি বাস্তবায়নের জন্য চীনা নৌবাহিনী পানিসীমায় ও সমুদ্রে চীনের স্বার্থরক্ষার জন্য মিলিশিয়া ও কোস্টগার্ডকে প্রশিক্ষণ এবং আধুনিক অস্ত্রসম্ভার দিয়ে সজ্জিত করে নিয়মিত সেনাদের মতো দক্ষ করে তুলছে। উল্লেখ্য, চীনের কোস্টগার্ড বিশ্বে সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী। তাদের জাহাজগুলোকে আধুনিকীকরণ ছাড়াও আধুনিক জাহাজ হস্তান্তর করা হয়েছে। নৌ মিলিশিয়াদের নিত্যকার কাজে রয়েছে নিজেদের ‘ফিশিং বোট’ ও তেলের ট্যাঙ্কারকে অনুসরণ করা এবং নিজস্ব জলসীমায় অন্যদের অনুপ্রবেশে ভীতি প্রদর্শনসহ ব্যবস্থা নেয়া। তাই দক্ষিণ চীনসাগরেও নৌ মিলিশিয়াদের কাজ করতে হয়। এভাবে একসময় চীনা নেভি যে কাজ করত তাই নৌ মিলিশিয়া ও কোস্টগার্ড এখন সম্পন্ন করেছে। এমনকি লোহিত সাগর ও হরমুজ প্রণালীতেও বাধাহীনভাবে নৌ মিলিশিয়াদের প্রটেকশন বহর অবাধে কাজ করছে। ফলে চীনা নৌবাহিনী এখন ‘গ্লোবাল মিলিটারি পাওয়ারে’ পরিণত হয়েছে। গত বছরের শেষের দিকে ও সাম্প্রতিক সময়ে চীনা নৌবাহিনী দক্ষিণ আফ্রিকা ও রাশিয়ার সাথে ক্যাপ অব গুড হোপ এবং পাকিস্তানের সাথে আরব সাগরে যৌথ মহড়া পরিচালনা করে সরব উপস্থিতি জানিয়েছে।

চীনকে নিয়ে পড়শিদের অনেক হিসাব-নিকাশ। স্বার্থের নীতিতে অন্য প্রতিবেশীরা সমর্থন করছে না। জাপান ইতোমধ্যে দশক পুরনো শান্তিবাদ নীতি পরিহার করে নিজের দেশকে অস্ত্রসজ্জিত করতে চলেছে। অস্ত্র রফতানি ও অত্যাধুনিক অস্ত্র বানানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে, একই সাথে আধুনিক যুদ্ধসরঞ্জাম সংগ্রহ করছে এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের এফ-৩৫ বিমান ও মিসাইল ডিফেন্স ব্যাটারিও রয়েছে। ভারতীয় মহাসাগরে চীনের প্রভাব সম্পর্কে ভারত ওয়াকিবহাল। ভারত তার নৌশক্তি আরো বড় ও উন্নত করার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে। ভারতও নিজেদের প্রযুক্তিতে কেরিয়ার বানানো শুরু করেছে। অন্যান্য ক্ষেত্রেও ভারত সামরিক দিক উন্নত করার প্রয়াস চালাচ্ছে; ফ্রান্স ও চিলি থেকে যুদ্ধ সরঞ্জাম সংগ্রহ করছে।

ভয়াবহ আর্থিক সঙ্কটেও ভারত সরকার অত্যাধুনিক একঝাঁক সাবমেরিন নির্মাণ খাতে ৫০ হাজার কোটি রুপি বরাদ্দ করেছে। ভারতীয় নৌবাহিনী ২৪টি সাবমেরিন নিজেদের অস্ত্রভাণ্ডারে যুক্ত করতে চলেছে। তার মধ্যে ছয়টি সম্পূর্ণ নতুন প্রযুক্তির নিউক্লিয়ার অ্যাটাক সাবমেরিন। নতুন সাবমেরিন সিরিজের মধ্যে থাকবে ১২টি ল্যান্ড অ্যাটাক ক্রুজ মিসাইল এবং অ্যান্টি শিপ ক্রুজ মিসাইল। ডুবোজাহাজগুলো সমুদ্রের মধ্যেই টর্পেডো বহন এবং নিক্ষেপ করতে পারবে। ভারতের সামরিক ইতিহাসে এই সাবমেরিন প্রজেক্ট হতে চলেছে সবচেয়ে আধুনিক একটি প্রতিরক্ষা প্রকল্প। ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন, দক্ষিণ কোরিয়া ও রাশিয়ার পাঁচটি সংস্থার সাথে যৌথ উদ্যোগে চুক্তি সম্পাদন করে পি-৭৫ আই ক্লাস ডুবোজাহাজগুলো নির্মিত হবে। প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেছিলেন, সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হবে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পে। এটি তার এক উদাহরণ।

ভারত এখন আঞ্চলিক ভূরাজনীতিতে চীনের প্রতিপক্ষ। চীন ইতোমধ্যে নেপাল, ভুটান, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কাকে পয়েন্ট ধরে ভারতের চার দিকে বলয় তৈরি করেছে, ভারত মহাসাগরেও প্রভাব বিস্তার করছে। একইভাবে ভারতও পাকিস্তান বাদে অন্যান্য দেশের সাথে সম্পর্ক রেখে চীনকে কাউন্টার দেয়ার কাজ করছে। চীনের বিরোধিতা করার উপযুক্ত প্রতিপক্ষ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রকে বেছে নিয়েছে। কোনো এশিয়ান সুপার পাওয়ারের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হলে যুক্তরাষ্ট্রকে একমাত্র ভরসা বলে মনে করা হয়। কমিউনিস্ট দেশ ভিয়েতনাম তার পুরনো শত্রু যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সখ্যতার দুয়ার খুলে দিয়েছে, উত্তর ভিয়েতনামের কেম রেন নৌবন্দরে যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজ ভেড়ার অনুমতি দিয়েছে, একই সাথে নিজের নৌশক্তিকে শক্তিশালী করার জন্য রাশিয়া, ভারত ও অন্যান্য আঞ্চলিক শক্তির সাথে চুক্তি করছে। অনুরূপভাবে অস্ট্রেলিয়া যুক্তরাষ্ট্রের নেভি জাহাজকে নোঙর করানোর জন্য পোতাশ্রয়ের আয়তন বৃদ্ধি করেছে।

গত দশকে ভারত মহাসাগর লক্ষ রেখে চীন পাকিস্তানের বন্দর গোয়াধরকে সামরিক ও বাণিজ্যে কৌশলগত উত্তরণে সমৃদ্ধ করেছে। নির্মাণ করেছে বিভিন্ন প্রকল্প, যা এখনো চলমান। যার বেশির ভাগ বাইরের বিশ্ব জানে না। গোয়াধর হরমুজ প্রণালীর কাছেই বলতে হয়। প্রয়োজনে গোয়াধর থেকে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দর আসা-যাওয়া সহজ। চট্টগ্রাম বন্দরকে আরো আধুনিক উন্নত বন্দর করার জন্য ভারত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র উদগ্রীব। এর মধ্যে চীন শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা বন্দরকে আধুনিকীকায়ন করেছে। বড় জাহাজ অবস্থানের বার্থ বানানো হয়েছে। চীনের বাণিজ্য ও সামরিক কাজকর্ম সহজে সম্পন্ন করা যাবে এই বন্দরের মাধ্যমে। পাকিস্তানও উপকৃত হবে। এখান থেকে শ্রীলঙ্কা গোয়াধর বন্দর ব্যবহার করতে পারবে। শ্রীলঙ্কায় ইমরান খানের সফরে এ চুক্তিও হয়েছে। নয়া দিগন্তে প্রকাশিত আমার লেখা ‘শ্রীলঙ্কা-পাকিস্তান : কূটনীতি থেকে বন্ধুত্ব’ নিবন্ধে বিষয়টি বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। দেখা যাচ্ছে গোয়াধর-হাম্বানটোটা-চাবাহার-হরমুজ প্রণালীতে চীনের একচ্ছত্র অবাধ চলাচল। পারস্য উপসাগর, ওমান সাগর ও ভারত মহাসাগরের একাংশ সম্পূর্ণ চীনের কব্জায়। দক্ষিণ চীন সাগরেও একই অবস্থা। এশিয়া প্যাসিফিক ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রির প্রসিদ্ধ ভাষ্যকার জন গ্রাভেট বলেছেন, ‘দক্ষিণ চীনসাগরে চীন সামরিক শক্তিতে এমন এক উচ্চতায় পৌঁছেছে যে, অন্য শক্তির উত্তরণকে সমস্যায় ফেলেছে।’ শক্তির উন্মেষকে চীনারা বলেন প্যাক্স সিনিকা-শান্তি, মহাশান্তি।

বিবিসি ও অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব সিডনির এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, চীনের সামরিক শক্তিকে সুপার পাওয়ার না বলে অনেক ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করছে এমন বলাই সঙ্গত। বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা কৌশল ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নজিরবিহীন সঙ্কটে রয়েছে। শতাব্দী ধরে ওভারসিজ মিশনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বে যে দাপট দেখিয়েছে এখন সেখানে চীন পদচারণা শুরু করেছে। চীন এশিয়া ও নিজেদের আশপাশে শক্তি বৃদ্ধি করতে চায় এবং এশিয়াতে চীন ইতোমধ্যে একটা সুপার পাওয়ার হয়ে উঠেছে বিধায় তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠছে। বিবিসি জানিয়েছে, চীন যুক্তরাষ্ট্রের সক্ষমতা এবং যুদ্ধের লড়াই নিয়ে গবেষণা করেছে এবং তারা একটা কার্যকর কৌশল তৈরি করেছে। এশিয়া প্যাসিফিকে কোনো যুদ্ধ শুরু হলে চীন ‘ফার্স্ট আইল্যান্ড চেইন’ ও ‘সেকেন্ড আইল্যান্ড চেইন’ কৌশলী ব্যূহ রচনা করবে, যাতে যুক্তরাষ্ট্র সমুদ্রে ব্যাটল চার্জ করতে না পারে। ‘ফার্স্ট আইল্যান্ড চেইন’ হলো দক্ষিণ চীনসাগর বরাবর একগুচ্ছ দ্বীপ। এই দ্বীপের সারি শুরু হয়েছে জাপানের তলা থেকে যা তাইওয়ান পার হয়ে ফিলিপাইনের পশ্চিম দিক অতিক্রম করেছে! ‘সেকেন্ড আইল্যান্ড চেইন’ সাগরের আরো দূরবর্তী অংশের দ্বীপপুঞ্জের একটি সারি যার মধ্যে গুয়াম দ্বীপও রয়েছে। এই গুয়াম দ্বীপে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি। চীন তাদের অস্ত্র ব্যবহার করে এই গুয়ামকেও ঠেকাতে চায়। গুয়ামে পরমাণু হামলা করে সব পানিতে মিশিয়ে দিতে উত্তর কোরিয়ার কিম উন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে হুমকি দিয়েছিলেন। এমনকি হামলার সময়সীমাও নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন। চীনের এসব কৌশল সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রও ওয়াকিবহাল।

বেইজিং রাশিয়াকে নিয়ে বিশ্বব্যবস্থাকে আন্তর্জাতিক আইনানুসারে রক্ষা করার জন্য দৃঢ় মনোভাব ব্যক্ত করেছে। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্জেই ল্যাভরবের সাথে আলাপ করে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই মিডিয়ায় এ কথা বলেন। ‘আন্তর্জাতিক বিষয়ে আমরা অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করতে চাই।’ ওয়াং ই আরো বলেন, ‘জাতিসঙ্ঘের প্রদর্শিত নীতিমালা অনুসারে আন্তর্জাতিক সিস্টেম সঠিক রাখতে আমরা কাজ করব যেখানে সর্বজনীন মূল্যবোধ মেনে শান্তি, উন্নয়ন, সুবিচার, গণতন্ত্র, সমতা ও স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করা হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2020 banglahdtv
Design & Develop BY Coder Boss