আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় কুন্দুজে সরকারি বাহিনী ও তালেবানের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ চলছে। সংঘর্ষ থেকে বাঁচতে অন্তত পাঁচ হাজার পরিবার ইতোমধ্যেই তাদের আবাস ছেড়ে পালিয়েছে বলে শনিবার এক সরকারি কর্মকর্তা বরাত দিয়ে জানায় ফ্রান্সভিত্তিক আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এএফপি।
কুন্দুজের শরণার্থী ও প্রত্যাবাসন বিভাগের পরিচালক গোলাম সাখি রাসুলি এএফপিকে জানান, অন্তত পাঁচ হাজার পরিবার যুদ্ধের কারণে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এর মধ্যে দুই হাজারের বেশি পরিবার কাবুল ও অন্য প্রদেশে পালিয়েছে।
এদিকে কুন্দুজভিত্তিক সাংবাদিক রহমতুল্লাহ হামনাওয়া কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার সাথে বলেন, সংঘাতের কারণে তার পরিবার শহরের এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় কয়েক দফা স্থানান্তরিত হয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘সারারাত আমরা গুলি ও সংঘর্ষের শব্দ শুনেছি।’
এদিকে কুন্দুজের গণস্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক এহসানুল্লাহ ফাজলি জানিয়েছেন, এক সপ্তাহ ধরে চলা সংঘর্ষে কুন্দুজে ২৯ বেসামরিক ব্যক্তি নিহত ও আরো দুই শ’ ২৫ জন আহত হয়েছেন।
এদিকে দক্ষিণাঞ্চলীয় বাগলান ও কান্দাহারে প্রচণ্ড সংঘর্ষ চলছে জানিয়েছে আফগান সংবাদমাধ্যম। আফগান বাহিনী তালেবানের কাছ থেকে বিশাল অংশ ছিনিয়ে নেয়ার দাবি করলেও কেন্দ্রীয় বাগলানের পুলে খুমরি এখনো তালেবানের দখলে রয়েছে বলে খবরে জানানো হয়।
গত মে মাসে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোটের সৈন্যদের প্রত্যাহার শুরু হওয়ার পর থেকে তালেবান দেশটির বিভিন্ন স্থানের দখল নেয়া শুরু করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত এপ্রিলে আফগানিস্তান থেকে ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সব মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা করেন।
তবে গত বছর ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবানের মধ্যে কাতারে সম্পাদিত চুক্তি অনুসারে এই বছরের ১ মের মধ্যে সব বিদেশী সৈন্য আফগানিস্তান থেকে প্রত্যাহারের কথা ছিল। এর বিনিময়ে তালেবান সহিংসতা ছেড়ে দেশটিতে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়ায় অংশ গ্রহণে সম্মতি দেয়।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নাইন ইলেভেনের সন্ত্রাসী হামলার জেরে ওই বছর ৭ অক্টোবর আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন আগ্রাসন চালায়। ২০ ডিসেম্বর জাতিসঙ্ঘ আফগানিস্তানে আন্তর্জাতিক নিরপত্তা সহায়ক বাহিনীর অবস্থানের অনুমোদন করলে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোটের অংশীদার ৪৩টি দেশের সৈন্য দেশটিতে অবস্থান নেয়।
আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসনের পর থেকে ২০ বছরে দেশটিতে যুদ্ধের প্রত্যক্ষ কারণে অন্তত দুই লাখ ৪১ হাজার মানুষ প্রাণ হারায় বলে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জরিপে জানানো হয়।
সূত্র : আলজাজিরা
Leave a Reply